৮ জুল, ২০০৯

A Little Story for all of you

আজ আমার জীবনের একটা বিশেষ দিন,আজ তার সাথে দেখা করতে যাব।
কার সাথে?
এখন বলা যাবে না।যাবেনা ঠিক না যাচ্ছে না,মরবার ঘুমের জন্য যাচ্ছে না।যে দিন কোন কাজ থাকেনা,সেদিন ভোর পাচঁটায় ঘুম ভেঙ্গে যায়,আর ঘুম আসেনা।বালিশ মাথার নীচে,পায়ের নিচে,এমনকি খাটের নীচে দিয়ে শুই তবু ঘুম আসেনা।আর যেদিন কাজ থাকে,সেদিন চোখ খোলা যায় না,মনে হয় কেউ মাস্টার গাম দিয়ে চোখের পাতা জোড়া দিয়ে দিয়েছে।দাঁত মাজতে গিয়ে মাজন পাউডার এর বদলে গুড়া সাবান দিয়ে দাঁত মেজে ফেলি।নাস্তার সময় মনে হয় সেদ্ধ ডিম না সাবান কচ কচ করে খাচ্ছি,চা মনে হয় সাবান গোলা পানি।জগত সংসার কেবল সাবান আর সাবান,যেন সাবান রাজ্য।


আজও আমার চোখ থেকে ঘুম যাচ্ছে না,ঘুমে মাথা হাঁটুতে গিয়ে ঠেকেছে।চোখ বুজে পনের মিনিট ধরে ভাজি দিয়ে রুটি খাচ্ছি,স্বাদ পাচ্ছি না।এতক্ষনে মাত্র অর্ধেক রুটি খেয়েছি,বাকি অর্ধেক আমার হাতে।মনে হচ্ছে যেন জন্মের পর রুটি থেকে খেয়ে যাচ্ছি।কে যেন আমার পাশে এসে বসে।
‘পত্রিকার প্রথম পাতাটা কোথায়?’ গলা শুনে বুঝতে পারি বাবা পাশে বসে পত্রিকার প্রথম পাতা খুজছেন।আর তখনি এক ভয়ের শিহরন আমার মেরুদন্ড দিয়ে বেয়ে নেমে যায়।আমি দেখি আমি এতক্ষন রুটি খাচ্ছিলাম না!আমার হাতে অর্ধেক খাওয়া পত্রিকা ।হাতের অর্ধেক দ্রুত টেবিলের নিচে ফেলে দিয়ে এক গ্লাস পানি দ্রুত খেয়ে উঠে যাই।সঙ্গে সঙ্গে আমার বুক চিরে ঢেকুর আসে বাবা কেম্ন করে যেন তাকান।আমি বুঝে যাই বাবা যদি বুঝতে পারেন আমি পত্রিকা খেয়ে ফেলেছি তাহলে রুটি না খেয়ে আমাকেই খাবেন।ভাজি ছাড়াই খাবেন। ঘর থেকে বের হতেই আবার ঢেকুর আসে,ঢেকুরের আওয়াজটা এরকম ব-য়,ল-য়,দ-য়।মনে হয় খেয়ে ফেলা পত্রিকার অক্ষর গুলো বের হয়ে আসছে।তার পর ও তার সাথে দেখা করতে বের হই।কার সাথে?আমার পত্রমিতার সাথে।ছয় মাস ধরে একটা মেয়ের সাথে মিতালি করছি ।পত্রমিতালি। মেয়েটার নাম গোধুলি। আমি আদর করে বলি-ধূলি। সে আমাকে আদর করে ডাকে -সখা।
চিঠির শেষে কবিতা লেখে- ‘ধরনির যেথা যাও তুমি সখা
তব চরন যাবে ধুলি চুমিয়া’
বাহ বাহ কবিতা পড়ে আমি অভি+ভূত।তখনি আমি তাকে ভালবেসে ফেলি।আজ তার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি।এটা আমাদের প্রথম সাক্ষাত তাই কিছুটা রোমাঞ্চিত।এই জন্য এতক্ষন বুঝি নি যে জ্যামে আটকা পড়ে আছি।আমার কাছে বারবার একটা রহস্য-জখন রিক্সায় চড়ি মনে হয় গাড়ি গুলাই জ্যাম বাঝিয়েছে,এছে করে গাড়ি গুলো নিয়ে বুড়িগঙ্গার ময়লা কালো পানিতে চুবাই, আবার যখন গাড়ীতে থাকি মনে হয় রিক্সা গুলোই জ্যাম বাঝিয়েছে,মুর্খ রিক্সাচাল্ক গুলো নিয়ম জানে না জ্যাম লাগিয়ে দেয়,রিক্সাগুলোর নাটবল্টু খুলে যদি বিক্রি করতে পারতাম।
কত সময় রিক্সাই বসে আছি জানিনা,অগত্য রিকসা থেকে নামে হাটা দিই।পথে দেখা হই শিমুল এর সাথে।সে বলে কই যাস?? আমি বলি :- কোথাওনা,এমনে ঘুরি।মুখ ফসকে ধুলরি কথা বের হয়ে যাচ্ছিল,ভাগ্যিস বলিনি। “এমনেই” শিমুল আবাক হই।তারপর “আয় চল” বলে টেন আমায় এক রিকসায় তুলে বলে “ ওই টান ” ধুলির সাথে আজ আর বুঝি দেখা হলোনা, শিমুইলা ছার পোকা থেকে আজ কখন ছাড়া পাই কে জাণে? একটা দীঘশ্বাস ফেলি । ঠিক তখনই শিমুল রাস্তার পাশের এক বাড়ীর ছাদে বসা বুড়িকে বলে :- “আসসালামুআলইকুম নানি,আইজকা শরীর ভালো?” আমি আবাক হই ! এই আলিশান বাড়ী শিমুলদের নানা বাড়ী? আমি প্রশ্ন কার “ওনি তোর নানি?”
“আরে না“ শিমুল আমার কথা প্রয় উড়িয়ে দেয়! বলে “ এই বুড়ী বেড়ী রে চিনিই না! আজাইরা বসে আছে,একটা কাম দিলাম।এহন বাড়ীর সবাইরে ডাইকা ডাইকা জিগাইবো –অই আমারে সালাম দিল ওইটা কেডা? সেজর পোলা না মেজোর পোলা? বাড়ীর বেবাকের কানের পোকা ফেলাই দিব জিগাইতে জিগাইতে।
এই কথা শুনে আমি বুঝলাম ওর সাথে বেশি সময় থাকলে আমার কপালে খারাপি আছে আজ। তাই সাহস করে বলি:- “আমি তোর সাথে যাব না”
“কেন?” শিমুল বলে।আমি বলি “ তো সাথে গেলে পাবলিকের মার খেতে হবে।ড্রাইভার রিকসা থামাও” ড্রাইভার থামাই।শিমুল বলে “ আমার কাছে পয়সা নাই,তুই সাথে আসছ বইল্লাই রিকসা নিলাম।“ আমি বললাম “কোথাই যাবি বল ভাড়া দিয়ে দিই?” সে বলল “তার কোন কিছু ঠিক আসে?” এই বলে সে রিকসাই ঠ্যাং তুলে আরো আরাম করে বসে আমি ৫০টা টাকা সাধলাম তাকে।সে বলল “আমারে দিতাসস কেন? আমার মান ইজ্জত নাই? রিকসা আলাকে দে” আমি তাই করে দ্রত অন্যদিকে হাটা ধরলাম। পেছনে শুনি শিমুল বলছে রিকসা আলাকে “অই রকিসা চয়ের দোকানের সামনে রাখ,আর দুই কাপ চা দিতে ক!” আমি তখন তারাতারি ওই এলাকা থেকে পালাইতে পারলে বাচি।এ যাত্রাই ৫০ টাকা দিয়ে বাচলাম।
এদিক ওদিক তাকাই রকিসার জন্য, কোন রকিসা নাই। এক রকিসা ওয়ালা দেখি ছায়ায় রকিসার ছিটে পা তুলে ঘুমাচ্ছে।ধুলির কাছে যাওয়ার ও শিমুল থেকে বাচার উত্তজেনায় একটু জোরেই বলি “ এই রিকসা যাবা?”
ড্রাইভার চমকে সটি থকে পড়ে যায়।“উহ,আহ” করে হাত পা ডলতে ডলতে উঠে চোথ মুথ থচে বল “এইটা কি করলনে? আরেকটু অইলে হাটফেইল করতাম! এটা কি করইলনে?”তার ভাব টাব দেখে আমার মাঝে একটা ডাকতারী ভাব চলে আঅসলো।সদ্য পাস করা ডাকতাররে মত করে বললাম “এত খিচোনা কষা হবে”“আইলে আমার হইবো আপনার কি?আর একটু হইলে গছিলাম,অর হে কই কষা হইবো।“ এমনে কোন রকিসা ছিলনা। আর এখন মজা দেখার জন্য পাচ ছয়টা রকিসা জমে গলে।তারই একটাতে বসে বললাম “পার্কে চল”।সবসেসে পার্কে পোছলাম । যাক আজ তাহলে আমার ধুলীর সাথে দখা হবে। ধুলীর সাথ আমার আগেই কথা হয়েছিল আমি হলুদ জামা ও সবুজ জামা পরে আসবে । তাই সামনে যে সিগারেট আলা পেলাম তারসাথে খাতির করে ফেললাম। এক ফাকে প্রশ্ন করলাম ও সবুজ জামার কাওকে দখলো কিনা। স বললো “না” সে হঠাং তার সিগারেট এর ডালা আমার গলাই ঝুলিয়ে দিয়ে বলল “ভাই একটু ধরেন তো,ওই যে ওই বেডার কাছে টাকা পাই।নিয়া আসি।“আমাকে কিছু বলার সুজোগ না দিয়া সে চলে গলে। আমি হতভম্ব হয়ে তার ডালার দিকে তাকায়,সিগারেট,চকলেট,পানে ভরা। হঠাং মনে হয়!মনে মনে বলি” আল্লাহ ধুলী এখন যনে না আসে।আমাকে এই আবস্থাই দেখলে কিযে হবে!!!“এই দুইটা বেনসন দে” হুকুমের সুরে কে যনে বলে।দেখি ইয়া মোছ আলা একটা লোক সাথে কালো একটা লোক।মোছ আলা আমার সামনে ডালা থেকে ২টা সিগারেটে নিয়ে,ডালার উপরেই টাকা রেখে দেয়। এর পর দুজনে সিগারেট টানতে টানতে বলে:-মোচ ওয়ালা বলে “আইবো?”কালা বলে “আইবো আইবো”
মোচ বলে চিনবি কেমনে?কালা বলে “হলুদ সার্ট পরি আসার কথা”
এরা এসব কি বলে? কান খাড়া করলাম। আচ্ছা ধুলি কোন করনে আসতে না পেরে এদের পাঠায়নি তো?‘ভাও করলি কেমনে?’মোচওয়ালা আবার জানতে চায়।‘আরে ছয়-সাত মাস ধইরা মাইয়ার নাম দিয়া চিঠি লেখতাসি,বোকা...(গালি,ছাপার অযোগ্য গালি) আমারে ডাকে ধূলি হা হা হা।কালা গোবদা হাঁসতে হাঁসতে আরো বলে,‘শোন বোকা...(গালি)আইলে পরে আমার বোনের লগে প্রেম করস?’কইয়া দুই চটকানা দিমু,তার পর টাকা পইসা সব রাইখা,পেণ্ট-সার্ট খুইলা, “নুরা” পাগলা বানাইয়া বাড়ি পাঠাইয়া দিমু,কি কছ?‘হ ।’মোচুয়া হাসতে হাসতে সমর্থন করে আমাকে দেখিয়ে ফিস ফিস করে কি যেন বলে।কালা গোব্দা ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকায়।
স-স-স সর্বনাশ! এই বে-বে-বে-বেডারা কয় কি?আমার পাঁ কাপে কেন? ঠিক তখন হকার দৌড়াতে দৌড়াতে ফিরে আসে,বুঝছেন,ধরবার পারলাম না,পলাইছে,তারপর ডালার টাকা দেখে বলে, “ওমা আপনি দেখি বেচা বিক্রিও করছেন!দেন আমার ডালা আমারে দেন।
অমনি কালা গোব্দা আমাকে বলে,‘ওই তোর নাম কিরে?’ আমি ডালা ফেলে দৌড়।

1 টি মন্তব্য: