আমার একটা ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপের ছবি। |
এখন
উপরের শিরনাম দেখ অনেকেরই মাথায় আসতে পারে আমি এখানে“ময়লাপ্যাকিং” বলে কি বুঝাত চেয়েছি।আপনি অবশ্যই জানেন
ব্যাকপ্যাকিং কনসেপ্টটি বাংলাদেশে প্রায় নতুন। আরে আমি নিজেই এখন প্রতিদিন দুনিয়ার
ক্যাম্পিং ছবি আর হাবি যাবি ছবি আপলোড করি আমার ফেসবুকে , হয়তো শার্টের কলার তুলে বন্ধু মহলে বলি “শোন আমি গত ৪দিন বান্দরবানের ওই চিপাই
ছিলাম। বহু প্লেসে ক্যাম্প করলেও , ব্যাগে ভরে দুনিয়ার জিনিস নিয়ে ৪-৫ দিন
বান্দরবান ঘুরে আসলেও।অল্প কিছু বছর আগে কলেজ লাইফেও আমি চিন্তা করিনাই আমি কোনদিন
এভাবে ঘুরবো। সো যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো আমাদের মত ছোট্ট এ দেশে ব্যাকপ্যকিং
আসছে বেশি দিন নই। আমার মত নতুনদের কাছে তাই আনেক কিছুই অজানা। যেটা আমি ধীরে ধীরে
শিখছি,আমরা ধীরে ধীরে শিখছি।তাই ব্যাকপ্যাকিং এর ময়লাপ্যাকিং/ট্রাসপ্যাকিং
সম্পর্কেও সবার জানা দরকার। এটাও নতুন আমাদের , কিন্তু দুটাই একটা অপরটার সাথে
জড়িত।
ময়লাপ্যাকিং
:- রাঙ্গামাটির একটা
ট্যুরে আমি এক বড় ভাইয়ের সাথে শুভলং যাওয়ার প্লান করলাম। অনেক আগের ... ভ্রমণে আমি
তখন একেবারে মোড়ক দিয়ে প্যাকেট করা মাল। রিজার্ভ বাজার এর একটু পরের খেলার মাঠের
ঘাট থেকে নৌকা ছেড়ে দিচ্ছে , এমন সময় ওই বড় ভাইয়ের ভৈ দোড় পাশের একটা দোকানে।এদিকে
নৌকা ছেড়ে দিল , আমি ভাবলাম ইমার্জেন্সি কিছু হইছে হয়তো থাক পরের নৌকায় যাবো।
কিন্তু মাথার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল যখন দেখলাম উনি বড় একটা পলিথিন কিনতে এরকম করলো।
আরো খারাপ লাগলো যখন উনি পলিথিনটা আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল “এটা রাখ বেটা কাজে দেবে” আমি বললাম “আমি ভাই বাসে বোমি করিনা আর এটাতো বিশাল
একটা বোট।” উনি মুচকি হাসলেন। বিরক্তি নিয়ে আমরা
পরের বোটে শুভলং গেলাম। ঝর্ণায় গেলাম। গোসোল করলাম আর ১০টাকার পেকেট কেক খেয়ে খালি
প্যাকেট আমি নিচে ফেলে দিলাম।দেখি ভাই আমার সেটা টুপ করে নিয়ে পকেটে ডুকিয়ে ফেল্ল।আমি
তারাতারি অন্য কেকের প্যাকেটটা দেখলাম।নাহ প্যাকেটের গায়ে কোন ফ্রি অফার নেই।একটু
অবাক হলাম।এরপর যখন আগের বোটের টুরিস্টরা ঝর্ণা ছেড়ে চলে গেল তখন ভাই দেখি ঝর্ণার
আসপাশ থেকে বিভিন্ন প্যাকেট আর জিনিস পত্র কুড়াতে লাগলো। আমি ত “থ”
বেটা করে কি!! টোকাইদের মত ময়লা কুড়াচ্ছে। আমাকে আবার ধমক দিয়ে কুড়াতে বলল। বড় ভাই
... তাই ভয়ে কুড়াতে লাগলাম। আশপাশের যারা ছিল সবাই অদ্ভুত চোখে তাকাতে লাগলো
আমাদের দিকে। যখন কুড়ানো শেষ তখন ভাই কুড়িয়ে নেওয়া সব জন্জাল আমার কাছে দেওয়া
পলিথনে ভরে ফেল্ল। আমি আর না থাকতে পেরে প্রশ্ন করলাম “ইব্রাহিম”
ভাই ঘটনা কি? এসব পাগলামি কেন করতেছেন ? উনি তখন বললেন “সজল ঝর্নাটা তোর কাছে এখন সুন্দর
লাগতেছে না আগে সুন্দর লাগছিল। আমি দুর ভাই ঝর্ণা তো ঝর্নার মতই .... বলতে বলতে
ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে আমি ওই দিনে দ্বিতিয় বারের মত “থ” । কি যেন একটা পরবির্তণ হয়ে গেছে।
ঝর্ণাটাকে আগের থেকে বেশি সুন্দর আর প্রাণবন্ত লাগছে।
প্রশ্ন
নিয়ে যখন ইব্রাহিম ভাইর দিকে তাকালাম তখন উনি বলছিলেন এটা হলো ট্রাশপ্যাকিং।সত্য
বলতে ট্রাশপ্যাকিং ব্যাপারটা তখনো আমি বুঝিনি , যদিও ভাই আমাকে ওই পুরা ট্যুরে
ব্যাকপ্যাকিং আর ট্যাশপ্যাকিং সম্পর্কে বুঝালো। তবে আমি ব্যাপারটা খুব শিগ্রই
বুঝছি।অসাধারণ কিছু মানুষের সাথে ঘুরে ঘুরে। বিভিন্ন ট্যুরে ফয়সাল ভাই , চন্দন ভাই
, রুপাদির মত লোকজনের কান ঝালাপালা করা বক্তব্য শুনতে শুনতে আমি এডাপ্ট করলাম।জিনিসটার
প্রয়োজন উপলব্দি করলাম।এখন আমি আমার গ্রুপের সবাইকে বকি ময়লা কালেক্ট করতে বলি। নিজে
করি। এটায় হলো ট্রাশপ্যাকিং।
পলিথিন
, এলুমিনিয়াম , চিপর্সের প্যাকেট মাটিতে পঁচতে বহু সময় লাগে আর আশপাশের পরিবেশকে
এত রুক্ষ আর নোংরা করে যে গাছ-পালা , মাছ সব মরে যায়। আর সুন্দর সুন্দর পরিবেশ
গুলোকে কিৎসিত করে ফেলে। তাই যে সব ব্যাকপ্যাকার বা টুরিস্ট বা পরিবাজক বা
ভ্রমণকরী ময়লা না ফেলে সাথে করে নিয়ে আসে আর সেটা সঠিক ডাস্টবিনে ফেলে দেয় এবং
অন্যদের উৎসাহিত করে একই কাজ করতে তাদের বলে ট্রাশব্যাকপ্যাকার আমার মতে। তারা
এটুকু অন্তত জানেন যে এত টাকা খরচ করে , এত লম্বা হাইক করে তিনি নিশ্চয় একটা ময়লা
, দু:গন্ধ পুর্ণ স্থান দেখতে চাননা। তাই তারা এটা করে। এবং নতুনদের গালিগালাজ ,
ওইসব স্থানে যেতে মানা না করা বা রেষারেশি না করে তাদের বুঝায়। যেমনটা ইব্রাহিম
ভাই আমার সাথে করেছিল। এখন নিজে আমি নতুনদের সেটাই কিভাবে করে , ক্যাম্পিং /
ট্রাশব্যাকপ্যাকিং কিভাবে করে সেটা জানাতে চেষ্টা করি।
গতকাল
রাতে রাব্বী ভাই একটা ছবি শেয়ার দিয়েছে। আর পিংকি আপু কিছু ছবি নিয়ে একটা এলবাম
বানিয়েছে। সেসব ছবিতে ছিল প্রকৃতিতে বস্ত ডিসপোস বা মাটিতে মিলিয়ে যেতে কতদিন লাগে
তার টাইম টেবল আর বিস্তারিত। আমি নিচে সেটার কিছুটা বাংলা করে দিয়েছি। কিন্তু তার
আগে আমরা যখন ঘুরতে যাই তখন ময়লা বা লেফটওভোর নিয়ে কি করবো তা আলোচনা করলাম।
শহরে
ভ্রমণের ক্ষেত্রে করণীয় :-
শহরে ভ্রমণ বলতে আমি এখানে সিটি ট্যুর এবং যারা দেশ বিদেশে ব্যাকপ্যাকিং করতে যান
স্বল্প অথবা দির্ঘ সময়ের জন্য তাদের বুঝিয়েছি। হা শহরে বা বিভিন্ন মেনিওমেন্ট ঘুরতেও
আপনাকে সচেতন হতে হবে ময়লার ব্যাপারে। আমি দিল্লীতে ভ্রমণের সময় একটা বন্ধু
পেতেছিলাম এক জার্মান মেয়ের সাথে।তো ঘুরাঘুরি আর পরিচয়ে ফাকে সে আমাকে এক প্যাকেট
চকলেট খেতে দিল। আমি মহা আনন্দে সেটা খেয়ে আর দশজন আশপাশের টুরিস্টের মত সেটা ছুড়ে
ফেলে দিলাম। কিছুক্ষন পর ক্যাটরিন আমার কাছে প্যাকেটা খুজলো। আমি তো আমি L । সাথে সাথে প্যাকেটা খুজে এনে নিদৃষ্ট
ট্রাশ ক্যানে ফেল্লাম। ভারতের প্রায় সব টুরিস্ট স্পটে ট্রাশ ক্যান পাওয়া যায় ময়লা
ফেলার জন্য। বাংলাদেশেও এটা আস্তে আস্তে এডাপ্ট করছে। তো নিচে কিছু লিস্ট দিলাম
যেটা আপনার/আমার সাইট ঘুরার ক্ষেত্রে করা প্রয়োজন :-
১. চিপর্স , বিস্কিট যাই খান সেটার প্যাকেট নিদৃশ্ট ট্রাশ
ক্যানে ফেলুন।
২. ট্রাশ ক্যান না পেলে প্যাকেটটি পকেটে রেখে দিন , ভেজা বা
লেফর্ট ওভার সহ প্যাকেট ছোট একটা পলিথিনে নিয়ে তারপর ব্যাগে রাখুন। (তাই যেকোন
ভ্রমণের পুর্বে সাথে দু-চারটা পলিথিন ব্যাগ সাথে নিতে পারেন।) পরে হোটেলে ফেরত
অসার সময় বা হোটেল ট্রাশক্যানে ফেলে দিন।
৩. আমরা বাঙ্গালী। যে কোন স্থানে আমাদের পশ্রাব করার অভ্যাস
আছে , সেটা ভাল কিন্তু পাবলিক প্লেসে পশ্রাব করার মত বাজে জিনিস আর নেই। সুতরাং
যেখানেই থাকুন , যেখানেই ঘুরুন এটা পৃথিবী। প্রায় প্রতিটা শহরে পাবলিক টয়লেট আছে।
হোটেলে টয়লেট আছে। খোঁজ নিন আর শান্তি মত প্রাইভেসি ওয়ালা স্থানে পস্রাব করুণ।
৪. এমন একটা হোটেলে উঠছেন যেটার ময়লা ফেলার ব্যাবস্থা খুব
খারাপ। যদি দেখেন আপনি রুমের ট্রাশ বিনে ময়লা ফেললে সেটা রুম বয় জানালা দিয়ে
রাস্তয় ফেলে দেয় তাহলে সেই আপনার সাথে আনা পলিথিনে ফেলুন। এবং চেক আউটের আগে রুম
বয়কে বুঝান ব্যাপারটা আর পলিথিনটা কাছের ডাস্টবিনেই ফেলুন।
৫. স্ট্রিট ফুড নিছেন ? সে হয়তো আপনাকে কাঠের বা প্লাস্টিকের
চামচ সহ খাবার দিয়েছে। খাওয়া শেষে তাকে ট্রাশ বিনের কথা জিগ্যাসা করুণ। সে নেই
বললে তাকে আগামী থেকে একটা রাখতে বলুন। আপনি বলা শুরু করলে বাকিরাও বলবে। এভাবে
শহরের পর্যটন স্থান গুলো পরিস্কার রাখুন আর রাখতে বাকিদেন উৎসাহ দিন।
বন্য
বা পাহাড়ের ক্ষেত্রে করণীয়:-
বন্য পরিবেশে ঘুরা আর দু-একদিন থাকা এখন বাংলাদেশের একটা ফেবারিট আউটডোর স্পোর্ট ।
হা এটা স্পোর্টই। কসরত করতে হয়ে কিছু ক্ষেত্রে “গোল” ও অর্জন হয়। এটাও একটা ব্যাকপ্যাকিং।
স্বনির্ভর ভাবে সবকিছু সমেত বেশ কিছুদিন জংলী পরিবেশে থাকা। আপনি হয়তো বলবেন যে
ভাই এত্ত কষ্ট করে ওই জায়গায় গেছি ৪ দিন খালি হাটছি আর হাটছি। আবার এখানেও ময়লা
কালেক্ট করণ লাগবো ? কিছু না ফেলে সেটা ব্যাগে করে নিয়ে ঘুরা লাগবো। ? আমি বলবো হা
লাগবে। সেই একি কারণ। আপনি ফ্রেশ একটা ঝর্ণার পাশে ছবি তুলে-টুলে বিরাণী খেয়ে যদি পেকেটটা
ফেলে আসেন তবে আপনার পরে যে আসবে সে ওই প্যাকেট সমেত ছবি তুলতে হেবে। আর ঝিরির মাছ
আর গাছ তো মরবেই
ধীরে ধীরে। বিশ্বাস
করুন আমি এক মহিলা কে চিনি। রুপা নাম তার । সম্পর্কে আমার বোনের মত। সে আর লিপু
নামে এক ভাই একবার সীতাকুন্ডে ফ্লাসফ্লাড / হড়কাবানের কবলে পড়ে মরতে বসেছিল।
কিন্তু দুজনের একজনও ময়ালার বস্তা আর খালি প্লাস্টিকের বোতল হাত থেকে ছাড়েনি। যেন
ওগুলো মহা মুল্যবান কিছু। যেখানে আমরা পারলে আমাদের ব্যাকপ্যাক ছেড়ে পিতার দান
শরীরটা নিয়ে শহরে আসতে পারলেই বাঁচি। আবশ্যই তাদের কষ্ট হয়েছে। জান বের হয়ে গেছে ,
তেল শেষ হয়ে গেছে। তবে যখন শহরে ফেরত এসে ডাস্টবিনে ময়লা গুলো ফেলে দিল তারা তখন
তাদের মুখে যে হাসি ছিল সেটায় কোন চিনি মেশানো ছিলনা। উজ্বল ছিল। আগেই বলে ছিলাম
প্রতিটা ব্যাকপ্যকিং ট্রিপে কিছু “গোল”
থাকে,তাদের সেই ট্রিপের গোল ছিল তারা একটা সুন্দর প্রকৃতি দেখে এসেছে , ছবি তুলে
এনেছে সাথে যতটা সম্ভব মানুষের ফেলানো ময়লা তুলে জায়গাটা পরিস্কার করে এসেছে। এটাই
তাদের গোল ছিল। তাই প্রকৃতিক জায়গায় ঘুরতে গেলে , ক্যাম্প করে থেকে আসতে চাইলে
ময়লার / অপচনশীল জিনিসের ক্ষেত্রে কি করা প্রয়োজন নিচে দিলাম :-
.
১.
প্রথমেই ট্রুরে যাওয়ার আগে বড় দেখে দু-তিনটে পলিথিন নিয়ে নিন সাথে। এর একটিতে
আপনার কাপড় , মোবাইল , ক্যামেরা শুকনো রাখার কাজে ব্যাবহার করতে পারবেন। আন্যটিতে
যত প্লাস্টিকের ময়লা বা প্রকৃতির জন্য ক্ষতিকর এমন জিনেস নিয়ে নিন। ততক্ষন পর্যন্ত
সেটা বহন করুণ যতক্ষন পর্যন্ত আপনি সেটা শহরের কোন সঠিক ময়লা ফেলার স্থানে বা ডিসপোস করতে পারেন সেরকম স্থান
না পান। আমি এক লোককে দেখছি যিনি ভাল স্থান না পাওয়ায় সেটা আমার সাথে চট্রগ্রাম
পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন।
.
২.
আমার ব্যাগে আলরেডি মাল পত্রে ভরপুর। এসব ঢুকানোর জায়গা কোথায় ? এমন
না ভেবে। এক কাজ করুণ শহর থেকে বড় পলিথিন ( কালো শক্ত গুলো ) নিয়ে যান। মুখের
দিকটা ভাল করে মুডে দিয়ে হ্যাঙ্গিং ক্যারাবিনারের সাথে যুক্ত করে ব্যাগের সাথে
আটকে দিন। ব্যাগের বাহিরে। ভেতরের স্থান দখল হলোনা। চাইলে মার্কার দিয়ে লিখে দিতে
পারেন যে “ এখানে আবর্জনা ফেলুন” তা হলে গ্রুপের অন্যরাও সেখানে প্যাকেট
, বোতল ফেলতে পারবে।আপনি পরে শহরে ফেলবেন। শহরে বলতে ডাস্টবিনে।
.
৩.
সম্ভব হলে কাজের একি পলিথিন বারবার ব্যাবহার করুণ। যেমন মোবাইল/ক্যামেরা শুকনো
রাখার জন্য যে পলিথিন ব্যাবহার করেছিলেন সেটা বাসায় গিয়ে শুকিয়ে ভাজ করে রেখে দিন।
পরের ট্রিপে আবার ব্যাবহার করতে পারবেন। আথবা জিপ লক ব্যাগ ব্যাবহার করুণ।
.
৪.
মনে করেণ খুব লম্বা একটা ট্রিপ। ১০ দিনের হাইকিং এবং ক্যাম্পিং। এতদিন ময়লা সাথে
নিয়ে ঘুরা কষ্টকর। কি করবেন ? চেষ্টা করুন এ সব ট্রিপে ময়লা হয় এমন জাতীয় জিনিস কম
নিতে। ৪টা বিস্কুটের প্যাকেট ? আরে প্যাকেট খুলে বড় কোন এক প্যাকেটে নিয়ে নিন সব।
৩টা প্লাস্টিক কমলো। ৩টা বোতল নিয়ে যাচ্ছেন বান্দরবান ? কিন্তু পথে প্রচুর ঝিরি
পাবেন ? আর পাড়া ? তাহলে বোতল একটাই নিন বড় দেখে বাকি গুলো বাসায় ফেলে আসুন। অথবা
২-৩ লিটারের হাইড্রেশন প্যাক ব্যাবহার করুণ। নডুলর্স সব ট্রিপে থাকবেই নাকি ? ৮
প্যাকেট নডুলর্সের প্যাকেট খুলে একটা বড় পলিথিনে প্যাক করুণ। ৮টা পলি প্যাক কমে
গেল। আর যেটাই বর্তমানে নিয়েছেন সেটাতো পরের ট্রিপেও ব্যাবহার করতে পারবেন।
এসবে
না হলেও লাস্ট একটা উপায় আছে পাড়ার দাদারা উঠোনে আগুন জ্বালায় , বা ক্যাম্প ফায়ারে
পুড়ে ফেলুন সব। ব্যাস। তবে এটাকে লাস্ট আপশন রাখুন। খবরদার ময়লা / প্লাস্টিক পুতে
চলে আসবেননা।
.
৫. ঝিরির
পাশে ক্যাম্প করছেন ভাল কথা বা ঝিরির পাশেই হাটছেন এমন সময় পস্রাব পা পায়খানা ধরলো
বা আপনি করলেন কি ঝিরিতে পস্রাব করে দিলেন বা বড় কাজটাও সের ফেললেন। আনেক সুবিধা
না ? ঝিরির স্রোত সব পরিস্কার করে দিল ? স্রোতও আপনার উল্টো দিকে , এ ময়লা আপনাকে
আর ছোবেনা। আমি
বলবো তাহলে আপনার আর বন্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য কি থাকলো ? যানেন এটাইকতরকম রোগ
আর জীবানু ছড়াতে পারে ? যেমন বান্দরবানের সব ঝিরি থেকে পাড়ার লোক আর আমরা শহুরে লোক
পানি খায়। সো আপনি উপরে পটি করে হয়তো আরো উপরে চলে গেছেন... কিন্তু সেটা নিচের শয়ে
শয়ে মানুষ খাবে/পান করবে। সো প্লিজ। এমন কাজ করবেন না। এমনকি ঝিরির পাশেও টয়লেট
করবেন না। কমকরে হলেও ৮০ ফুট দুরে করুন কাজটি যেন কোনভাবেই বর্জটি পানি পর্যন্ত না
যায় বা জীবানু না ছড়ায়।
.
৬.
জঙ্গলে টয়লেট করার নিয়ম আছে জানেন ? প্রথমে পানির সোর্স থেকে এবং ক্যাম্প সাইট
থেকে ১০০ হাত দুরে থাকা প্রয়োজন। এরপর কিছু দিয়ে মাটি বা বালু খুড়ুন ছোট্ট গর্ত
করুণ এবং কাজ শেষে সেই মাটি বা বালু দিয়ে ঢেকে দিন।
.
৭.
পরিস্কারের ক্ষেত্রে অবশ্যই কাগজের এবং সহজে পচে এমন টিশু কাগজ ব্যাবহার করুণ। হাত
ধুতে যে সাবান ব্যাবহার করুণই না কেন সরাসরি ঝিরিতে হাত ধুবেননা।বাইরে পানি এবং
সাবান টুক ফেলুন।
.
৮.
ঝর্ণায় সাবান বা শ্যাম্পু ব্যাবহার না করাই মনে হয় ভালো। একজন – দুজন হলে কথা ছিল। একটা ঝর্ণায় অনেক
মানুষ যাবে। আর সবাই সাবান দিয়ে , শ্যাম্পু দিয়ে গোসোল করলে পানিটা আর পানি
থাকবেনা। আর সেই সাবান / শ্যাম্পুর প্যাকেট তো আছেই।
.
৯. ক্যাম্পিং
এ রান্না করার মজাই আলাদা। রান্না করে আবর্জনা যেগুলো জৈব পদার্থ সহজে মাটিতে মিশে
যায় তা পুতে ফেলুন আর প্যাকেট , বোতল আপনার ব্যাগের ট্রাশপ্যাকে নিয়ে ফেলুন। আর
খাওয়া দাওয়া শেষে ঝর্ণার বহমান / স্রোতওয়ালা পানিতেই ধোয়া পালা করুন। যাতে তেল এবং
অবশিষ্ট খাবার চলে যায় ভেসে।
.
১০.
শুধু উপরের কাজ গুলো করলেই হবেনা। বাকিদের বলুন , টিমের অন্য মেম্বারদের সতর্ক
করুণ। যেখানে যাবেন সেখানের অন্য টুরিস্টদের সাথে কাথা বলুন আর তাদেরও সতর্ক করুণ।
এখন বলি কোন বস্তু প্রাকৃতিক ভাবে ডিসপোস বা মাটির সাথে মিশে যেতে কতদিন নেয়। এটা আনলাইন থেকে নেওয়া :-
- কাগজ :- একটা কাগজ আপনি ফেলে দিলে সেটা নিজে থেকে প্রাকৃতিক ভাবে পঁচে মাটিতে মিশতে ১৪ থেকে ৩০ দিন লাগে কাগজের উপর ভির্তি করে।
- সিগারেটের ফিলটার অংশ:- সিগারেট ফুকে তো ওটার বাকি অংশ স্টাইল করে দুই আঙ্গুল দিয়ে মেলা মেরে ফেলে দেন। যানেন সেটা ২ থেকে ৫ বছর পর্যন্ত নষ্ট হতে সময় নেয় ? জানেন ?
- হার্ড প্লাস্টিক কন্টেনার :- বোতল প্রাকৃতিতে মিশতে ২০-৩০ বছর সময় নেয়। সুতরাং আপনি একটি পানির বতল কোন ঝর্ণা বা কোথাও পেলে আসলে সেটা আপনার নাতিরাও দেখতে পাবে ইন্সোআল্লাহ।
- উলের ক্যাপ বা স্কার্ফ :- মিনিমাম দেড় বছর লাগে সম্পুর্ন নষ্ট হতে।
- কলার ছিলকা:- ২০ থেকে ৪০ দিন লাগে সম্পুর্ণ নষ্ট হতে।
- কাচের বস্তু :- আসলে এ বস্তু নষ্টই হয়না। হাজার থেকে লক্ষ বছর টিকে থাকে।
- বিয়ার বা কোকের ক্যান :- এলুমিনিয়ামের ক্যান প্রায় ২০০-৪০০ বছর টেকে নষ্ট না হয়ে।
সুতরাং
এই তথ্য জানার পর কোন কিছু নিদৃশ্ট স্থানের বাইরে ফেলানোর আগে চিন্তা করুণ।আর অনেক
কথা বলে ফেল্লাম। এখানের বেশির ভাগ কথায় আমরা আগে থেকে জানি। আমরা শিক্ষিত ভ্রমণ
করি (যেহেতু আপনারা ইন্টারনেটেই আমার ব্লগ পড়ছেন।) আমি জানি বেশির ভাগ আমরা পরিবেশ
নিয়ে চিন্তিত । আমরা আবর্জনা ফেলে আসিনা। ঝর্ণা বা টুরিস্ট স্পটগুলার ৭৫% নোংরাই
স্থানিয় ভ্রমণ কারি আর হটাৎ ঘুরা ঘুরি করে এমণ লোকরা করে। ১৫% হয়তো আমরা
শিক্ষিতরাই। ( এটা সম্পুর্ন আমার জরিপ ১০০% ভুল হতেই পারে। ) সো আমার ব্লগ বা
ইন্টারনেটের ব্লগ পড়ে যা শিখেছেন তা ওই ৭৫%দেরও শিখান। ঝর্ণায় কোন স্কুলের পিকনিক
পার্টি দেখলে তাদেরও বলুন। প্রকৃতি এবং শহর দুটাই আমাদের । এগুলো রক্ষা করার
দায়ত্ত আমাদেরই। ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন । নিয়ম মনে তুমুল ভ্রমণ করুণ।
আমার
কোন পোস্ট কখনো শেয়ার করতে বলিনি। এ সাইটে অনেক ব্লগ পোন্ট আছে। কিন্তু এই ব্লগটি শেয়ার করার অনুরোধ জানালাম।
সবাইকে সতর্ক করার জন্য। আর উপরের সবকিছুই আমার মতামত আর অভিজ্ঞতা থেকে লিখলাম।
ভুল – ত্রুটি থাকতেই পারে। কমেন্ট বা সরাসরি
আমাকে নক করে ভুল ধরিয়ে দিন। আমি শুদ্ধ করে নেব নিজেকে এবং এ পোস্টে। ধন্যবাদ।
কি চমৎকার লেখা...
উত্তরমুছুনধন্যবাদ।
মুছুনvalo lagse :)
উত্তরমুছুন:D
মুছুনএরকম ভাবে যদি সবাই চিন্তা করত।বাংলাদেশের যে কোন ট্রেইলে গেলেই মনে হয় আশেপাশে কোন টেস্টি স্যালাইন ফ্যাক্টরি আছে
উত্তরমুছুনhmm. :(
মুছুনএইভাবে চিন্তা কয়জন করে।পাহারে জংগলে গেলেই মনে হয় আশেপাশে কোন টেস্টি স্যালাইন ফ্যাক্টরি আছে
উত্তরমুছুনGood one . valo lagse
উত্তরমুছুনThanks.
মুছুনঅনেক দরকারি একটা লেখা। লেখককে ধন্যবাদ।। এবং এরকম লেখা আরো চাই।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। Tutorial BD
উত্তরমুছুন