২৬ এপ্রি, ২০১৫

“হামতা পাস” ট্রেকিং – The Valley of Gods

১৫/০৯/২০১৪
সাধারণত হামতা পাসের ট্রেক শুরু করার জন্য সবাই খুব ভোরে হোটেল ছাড়ে।এমন সুন্দর ঠান্ডা একটা সকালে কম্বল এর উষ্ন তাপমাত্রা থেকে বের হতে কার ভালো লাগে ? নেক সাহস আর মনবল খরচ করে অমরা অবশেষে ৮টার দিকে কম্বল এর মায়া ছাড়লাম।প্রতিজন আধঘন্টা করে টয়লেটে কাটিয়ে হোটেলের ছাদে গেলাম।সেই পাহাড়টাকে দেখতে যেটা গত দুদিন দুর থেকে উকি দিয়ে আমাদের মত সুদর্শণ যুবকদের দেখছিল , সাদা বরফের টুপি মাথায় দিয়ে। এ হোটেলটার প্রতি গত দুদিনেই কেমন যেন মায়া বসে গেছে , এর বারান্দা আর ছাদে আরাম কেদারায় বসে প্রাকৃতিক একটা স্বর্গ সারাদিন দেখা যায়। মনে হয় আমি এ হোটেলে আমার জীবনের বাকি সময়টা শুয়ে বসে কাটিয়ে দিতে পারতাম , শুধু যদি মালিক বেটা দিন প্রতি আমার ছেড়া-ফাটা মানিব্যাগ থেকে ৪০০ রুপি না গুনতো।
ছবি:- হোটেলের ছাদ থেকে।


আমাদের হোটেলটাই বিদেশী টুরিস্ট ছাড়া ইন্ডিয়ান কোন গেস্ট ছিলনা। ইভেন ছাদে শবাস্কি নামে একজনের সাথে পরিচয় হলো যিনি রুম ভাড়া না করে ছাদটার একটা কোণা ভাড়া নিয়েছেন। গত ৫ দিন তিনি ছাদেই ঘুমুচ্ছেন , খাচ্ছেন .. হা টয়লেট কোথায় করছেন সেটা আর প্রশ্ন করা হয়নি। আমাদের ট্রেকের প্লান , তার প্লান এসব নিয়ে গল্প করতে করতে ঘড়িতে তখন ১০ টা বেজে গেল।মজার বিষয় হচ্ছে আমার এ লিখা যারা পড়ছেন তাদের বেশরভাগের ঘড়িতে তখন ১০:৩০ ছিল। শবাস্কিকে বিদায় দিয়ে আমরা নাস্তা করতে গেলাম সেই সুন্দর মহিলার ধাবায়। গত দুদিন আমরা উনার ধাবায় খাওয়া দাওয়া করছি।রান্নার স্বাদের জন্য নাকি উনি বেশি কিউট ছিল সেজন্য জানিনা।

সকাল সাকাল মনালির মল রোড়ে এসে ভাবছিলাম কাউকে পাবোনা। কিন্তু মানুষ ভরতি পুরো রাস্তায়। মানালির মল এরিয়াতে এসে এ প্রথমবার কোন রমণীর দিকে না তাকিয়ে তড়িঘড়ি ট্রেকের জন্য বাজার সদায় করলাম। ওই সেই নডুলর্স , কেক , সুপ , বিস্কিট আর ক্যান্ডি বার যা আমরা বান্দরবানেও নিয়ে যায়। ৮৫০ রুপির জিনিস কেনা হলো আগামী ৫ দিনের রেশন হিসাবে দুই জনের জন্য। কিন্তু মজার বিষয় হলো এত নড়ুলর্স আর সুপ কেনার পর আমরা পুরা মানালি ঘুরে ১ ছটাক কেরোসিন কিনতে পারলামনা। মোবাইলের দোকান থেকে মুদি দোকান , সেখান থেকে রাস্তার যিনি চা রান্না করেন তার দোকান থেকে ক্যাম্পিং গিয়ার স্টোর। কোথাও পাওয়া গেলনা সামান্য কেরোসিন। পরে জানতে পারলাম মানালিতে কেরসিন খুব মুল্যবান একটা জিনিস , আমার চট্রগ্রামের মত যে কোন দোকানে গিয়ে মামা ১০ টাকার কেরোসিন দাও তো ট্রিকে হয়না। এখানে পুরো মাসে একটা পরিবার মাত্র ৩-৪ লিটার কেরসিন রেশন পায়। তাও কার্ড দেখিয়ে নিতে হয়। তো ট্রেকে নডুলর্স কাচা চিবিয়ে আর সুপ ঠান্ডা পানিতে গুলিয়ে খাবো বলে বাদ দিলাম মিশন কেরোসিন। ঘড়িতে তখন ১১:৩০। আর ৩০ মিনিট পরে হোটেল ছাড়লে একদিনের একস্ট্রা টাকা দিতে হবে।দৈড়াতে দৈড়াতে হোটেলে এসে আধুনিক টয়লেটে শেষবারের মত প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে জ্যাকেট পরে , জুতার ফিতায় ভালো করে গিট্টু দিয়ে বের হয়ে গেলাম। প্রথমেই গিয়ার স্টোরে গিয়ে স্লিপিং প্যাড কিনলাম ৩০০ রুপি দিয়ে।কাধের বিশাল ব্যাকপ্যাকে অদ্ভুত ভাবে স্লিপিং ব্যাগ আর প্যাড বাধা , হাটার গবদা গবদা ট্রেকিং জুতা পায়ে। লেয়ারিং করে একটার উপর একটা জামা পড়া। দেশের রাস্তায় যদি আমি এরকম বেশভুসায় রাস্তায় বের হতাম মানুষ জমে যেত আমকে আদ্ভুত জন্তু মনে করে দেখার জন্য। আর এখানে কেউ ফিরে ও তাকালোনা। না মল রোড যখন ক্রস করছিলাম একটা সুন্দর মেয়ে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসেছিল ? যদিও সাফায়েতের সাথে আমার এ নিয়ে পরে তর্ক হয় , ওর দাবি মেয়েটা ওকে দেখে হেসেছে।

পোটলা পুটলি নিয়ে আমরা যখন বাসে উঠি তখন ১টা প্রায় বাজলো বলে।বাসে সিট ছিলনা। ড্রাইভারের পাশে কোনমতে আমরা বসলাম। মাত্র ২ কি:মি রাস্তা। বিয়াস নদী পারকরে বাস চলতে না চলতেই আমরা পিরনী গ্রামে চলে আসলাম।
ব্যাগের বোতল আর হাইড্রেশন প্যাক পানিতে ভর্তি করে নিয়ে কিছুক্ষন গ্রামটা দেখলাম। অসম্ভব সুন্দর একটা গ্রাম।
ছবি:- আমি ট্রেকে যাওয়ার জন্য সম্পুর্ন রেডি।
গ্রাম হলেও অনেক আধুনিক। আমরা যখন গ্রামে নামি তখন স্কুল গুলোতে টিফিন ব্রেক চলছে। বাচ্চা-কাচ্চায় ভর্তি  লাল - নীল জাময় বাচ্চা গুলোকে দেব শিশু মনে হচ্ছিল। আমরা পিরনী থেকে হামতা গ্রামের দিকে উঠা শুরু করলাম। নতুন রাস্তা করা হচ্ছে। সোজা জিক-জ্যাক ভাবে উপরে উঠে গেছে। সাফায়েত তো নিচে থেকে রাস্তাটা দেখে ভয় পেয়ে বলল আমাদের ওখানে উঠতে হবে ? ওরে বাপরে বাপ!! । আমিও একটু ভয় পেলাম। একত সাথে কোন গাইড নেই,জিপিএস এর উপর নির্ভর করে হাটছি। রাস্তাটা একেবারে ৯৫০০ ফিট পর্যন্ত উচ্চতায় করা আছে। এখানে মানালির একমাত্র Hydro Electrical Power Project এর কাজ চলছে। তাই রাস্তাটা করা হয়েছে। জোবরা পর্যন্ত। জোবরা ৯৫০০ ফিটের মত উচুতে আর ওখান থেকেই মূল ট্রেক শুরু হয়।আমরা বাজেট টুরিস্ট , তাই গাড়ী নেইনি। হাটাই শুরু করলাম। যদিও আমরা প্রায় ৫ ঘন্টা লেট। এতক্ষনে সাধারণত ট্রেকাররা হামতা পাসের ট্রেকে ঢুকে যায়। রাস্তা দিয়ে উঠছি আর মোড়/বাঁক গুলো গুনছি। ৪০ টা সার্প বা রিস্কি বাক আছে রাস্তটায়। এবং উঠতে খবর হয়ে যাচ্ছিল। উচ্চতা এখনি প্রায় ৮০০০ ফিটের মত। একটা Y জাংশনে এসে আটকে গেলাম। ডানে যাবো না বামে ?  ... হটাত লাল প্যান্ট আর নীল ড্রেস আর সাদা প্যান্ট আর নীল ড্রেস সুন্দর দুজন তরুনীকে উপরে উঠতে দেখলাম। ঠিক আমাদের পেছনেই। তারা পিরনী কলেজের ছাত্রী। মেয়ে গুলো এতই সুন্দর যে আমার সব ক্লান্তি মুহুত্বে চলে গেল ওদের দেখে। ওদের থেকে সঠিক পথের দিকনির্দেশনা নিয়ে আমরা রওনা দিলাম। মেয়েগুলো সুন্দর হাসি দিয়ে কথা বলল।
ছবি:- ওই উপরের ৪০ মোড়ের রাস্তা। আর রাস্তায় ছাত্রী দুজন। 
 আমরা যখন নিজেদের টেনে টুনে মাত্র ৫-৬ টা মোড় পার হয়ে প্রজেক্টের সিকিউরিটি চেকিং গেটে আসলাম , তখন আমাদের বলা হলো ট্রেকারদের জন্য রাস্তাটা আফ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সিকিউরিটি হেডের সাথে কথা বললাম। আমরা মাত্র দুজন দেখে অবাক হলো। বলল ক্যাম্পিং এর জিনিসপত্র আর খাবার দাবার সাথে আছে কিনা।তবে একটু বুঝাতেই সুন্দর ভাবে অন্য একটা রাস্তা দেখিয়ে দিল। যেটা গ্রামের ভেতর দিয়ে ওপরে গিয়ে রাস্তায় লেগেছে আবার। তাদের চাকরি চলে যাবে তাই এদকি দিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলনা। কিন্তু রাস্তাটা দেখিয়ে দিল যেটা সিকিউরিটি বিল্ডিংকে ফাকি দিয়ে আমাদের আবার রাস্তায় নিয়ে যাবে। জিপিএসে আমার কাছে এটার ম্যাপ নেই তাই অফ রোডে আল্লাহ ভরসা করে জিপিএসটা বন্ধ করে নেমে গেলাম। খুব সুন্দর রাস্তা।পথে আপেল গাছে ভর্তি। যত ইচ্ছে তত খাও। হামতা গ্রামের ভেতরে স্কুলের বাচ্চাদের সাথেও কিছুটা মজা করলাম আমরা।
ছবি:- স্কুলের দেবশিশুরা।
রাস্তাটা গ্রামের ভেতরদিয়ে গিয়ে সোজা পাইন বনের মধ্যে দিয়ে আমাদের নিয়ে গলে একটা বিশাল খাদের সামনে যেখানে রাস্তাটা পাহাড়ের পাশ ঘেষে চলে গেছে। এবং সেই হাইড্রো প্রজেক্টের রাস্তায় লেগেছে।
ছবি:- আপেল গাছ পাবেন সারা রাস্তায়।
ছবি:- হাতে কাপড় বুননের যন্ত্র।
ছবি:- গ্রামের একটা বাড়ী।
গ্রামের পরের পাহাড়ের পাশ ঘেষে রাস্তাটা অসাধারণ লাগলো।ঘন পাইন গাছের বন , দুরে নিচে মানালী শহর। পাহাড় আর বরফ মাথায় দুর থেকে উকি দেওয়া পর্বত। সময়টা ভালই কাটছিল। আমরা ধীরে ধীরে সামুকের গতীতে এগুচ্ছিলাম। যদিও মাথার ভেতরে বলছিল তোমরা আজ কোন ভাবেই চিক্কা ক্যাম্প সাইটে পৌছাতে পারবেনা।
ছবি:- এরকম রাস্তা দিয়ে উঠছিলাম আমরা।
ছবি:- পাইন ফরেস্ট আর পাহাড়ের কোল ঘেষে আমাদের রাস্তা।
ছবি:- একটু বিরতী আর উদাশ মনে প্রকৃতি দেখা।
যখন আমরা রাস্তায় নামলাম তখন ঠান্ডাও বাড়তে লাগলো। পহাড়ি রাস্তা দিয়ে উঠে আবার কংক্রিটের রাস্তায় পা দিতে ভাল লাগলোনা। তারপরেও আমরা উঠতে লাগলাম। মাঝে মাঝে আমরা গাড়ির আওয়াজের অপেক্ষায় থাকতাম। ইন্ডিয়াতে হিচহাইক বা লিফট নেওয়ার ব্যাপারটা কমন। তাই লিফর্ট এর জন্য এ নির্জন রাস্তায় দু একটা গাড়ি যা গেল সব গুলাতে লিফট চাইলাম বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে। এখানকার আদি এবং বর্তমান এর প্রিয় মালবাহী গলো গাধা। যা আমরা প্রতিটা গ্রামে এবং রাস্তায় দেখলাম।
একসময় আমরা উঠতে উঠতে এতটায় ক্লান্ত হযে গেলাম যে রাস্তায় হাটা বন্ধ করে দিলাম। রাস্তায় পা ছড়িয়ে বসে পড়লাম। মাত্র ১-২০টা বাক / মোড় পার করেছি। এখনো অর্ধেক বাকি ট্রেইলে ঢুকতে। যদিও টেকনিক্যালি আমরা ট্রেইলে। যখন এ রাস্তা ছিলনা তখন এটাই ট্রেইল ছিল। বসে থাকতে থাকতে যখন প্রায় ঘুমিয়ে যাচ্ছিলাম তখন পুরো পর্বত কে জাগিয়ে বিকট শব্দে একটা ট্রাক আসলো আর আমাদের লিফর্ট দিল।এটি একেবারে এ রাস্তার শেষে নিয়ে ড্রপ করলো যেখানে প্রজেক্টের কাজ চলছে। এবং নির্জন ট্রেইল শুরু। আমি এর আগেও ট্রাকে চড়েছি। বান্দরবানে পাহাড়েও। কিন্তু বলতে হবে এটা আমার এখন পর্যন্ত সেরা ট্রাক রাইড। প্রতিটা মোড়ে মনে হচ্ছিল এই বুঝি জীবনটা গেল। এই বুঝি ট্রাক খাদে পড়লো। ২০ মিনিট পরে আমরা যখন রাস্তার শেষে নামলাম তখন হাফ ছেড়ে বাচলাম। ড্রাইবারকে ধন্যবাদ দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম প্রায় ৯৫০০ ফুট থেকে। 

এখানে ছোট একটা গ্রাম আছে যেখান থেকে ট্রেইল শুরু। নাম জোবরা। পিচ্চি কিছু বাচ্চা আমাদের কাছে চকলেট চাইলো। যেহতু চকলেট এখানে বেশ মুল্যবান একটা ক্যালরির সোর্স আমরা তাদের বিস্কুট দিয়ে সন্তুষ্ট করলাম আর চিক্কার জন্য রওনা দিলাম। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। বিশাল বিশাল গাছ। বিশাল বিশাল পর্বত। যেন কোন ওয়ান্ডারল্যান্ডে ঢুকে পড়েছি।একপাশে নদী অন্যপাশে এ ওয়ান্ডারল্যান্ড আর নদীর যত্রতত্র নানান রং এর প্রেয়ার ফ্লাগ।
ছবি:- বেরিস।
ছবি:- প্রেয়ার ফ্লাগ।
ছবি:- আগামী ৪ দিনের জন্য শেষ সভ্য তের সুন্দর ব্রিজ।
প্রচুর ভেড়ার পাল আর গাধা ঘোড়া কে পাশ কাটিয়ে আমরা মূল বনে ঢুকলাম। এটা যেন এলিসের ওয়ান্ডার ল্যান্ড। একটু অন্ধকার আর বিশাল গাছের ফাক দিয়ে সারি সারি হয়ে আলো প্রবেশ করছে।
ছবি:- ভেড়ার পাল।
ছবি:- বনে ঢুকার আগ মুহুত্বে।
ছবি:- পাইন বনের ভেতরে।
ছবি:- বনের ভেতরে।
ছবি:- বিশাল বিশাল গাছ।
প্রচুর বোল্ডার । সত্য কথা বলতে একসময় বিরক্ত ধরে গিয়েছিল বোল্ডার পার করতে করতে।যখন আবার বন থেকে বের হলাম সস্তি লাগছিল।যতুদুর তাকানো যায় সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। বড় বড় পাইন গাছের সারিতে ঢাকা। পাথুরে পথ। কিছুদুর হাটার পরই দেখলাম একটা ক্যাম্প গ্রাউন্ড। তাড়া তাড়ি জিপিএস এ পরিক্ষা করলাম না , এটা ক্যাম্প চিক্কা নয়। চিক্কা আরো ৩ কি:মি দুরে। ক্যাম্প এর লোকজনের সাথে কথা বললাম। দুটা টিম আজ ক্যাম্প ফেলেছে এখানে। ক্যানাডিয়ান দুটোই।একটা টিম হামতা সামিট করতে যাচ্ছে অন্যটা সামিট করে এক পথে ফেরত এসে উপরের একটা লেকে যাচ্ছে। তারা আমাদের এখানেই ক্যাম্প করতে বলল। ঘড়ি দেখে বুঝলাম এখানেই ক্যাম্প করা ভাল হবে। মানুষ ও পাওয়া যাবে এদের সহায়তাও। সাফায়েতের সাথে কথা বলে দ্রুত ক্যাম্প সেট করে ফেল্লাম একটু দুরে উপরে একটা পাথরের খাজে।
ছবি :- আমাদের ক্যাম্পসাইট আর নিচে বাকিদের।
ছবি:- ক্যাম্প থেকে সুর্যাস্তের অদ্ভুত আলো।
আমরা ক্যাম্প গুছিয়ে সব ঠিক ঠাক করে একটু হাটতে বেরে হলাম। উচ্চতার সাথে খাপ খাওয়াতে। এটাই নিয়ম। এক্লেমাইজেশন বলে। আবার যখন ক্যাম্পে ফেরত আসলাম তখন প্রায় আলো নেই বললেই চলে। দুরে আকাশে অদ্ভুত আলো রেখা আর আমাদের ক্যাম্প সাইটের নিচের ক্যাম্পে ক্যাম্পফায়ারের আগুন। মাথার উপরের আকাশে ততক্ষনে লক্ষ লক্ষ তারদের খেলাধুলা শুরু হয়ে গেছে।
ছবি:- আলো আধারের খেলা।
 সামনে বিশাল ক্যাম্পফায়ারে আগুন জ্বলছে। গোটা গোটা গাছের গুড়ি মটমট করে ফুটছে। আর ফুলকির মত খুদ্র খুদ্র অগুনের ছটা বাতাসে উড়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে।পুরা বিশাল উপত্যাকাতে দুটাই আলোর সোর্স এখন একটা এ আগুন অন্যটা খোলা আকাশে হাজার তারার মেলার , এটাই আমার প্রথম আকাশে মিলকি ওয়ে দেখা।হাজার না লক্ষ তারা সারিসারি দেখা যাচ্ছে আর সাদা-লালভ একটা আলো তাদের ঘিরে রেখেছে।

এ ক্যাম্প গ্রাউন্ডে আমাদের টেন্ট ছাড়াও আরো ৪টা টেন্ট আছে। আর ট্র্রেকারদের ফাস্ট ক্যাম্পের গাইডটা সবার মধ্য মনি এখন।এদিকে ফিরিঙ্গী দের ক্যাম্প থেকে আমাদের দু-কাপ চা ও দেওয়া হলো। তারা ইতি মধ্যে যেনে গেছে আমাদের কাছে কোন স্টোভ নেই , আগুনও নেই।আমাদের তারা বার বার প্রশ্ন করছিল যে আগুন আর গাইড ছাড়া আমরা মাত্র দুজন এ ট্রেক শেষ করবো কিভাবে? এটা পাগলামী। তাদের দেওয়া গরম গরম চা অসাধারণ ছিল।

ফিরিঙ্গিদের গাইড বেটা এই রাতের বেলা শুরু করেছে হামতার ভুতুড়ে গল্প।আমরা সবাই গোল হয়ে বসে-দাড়িয়ে তা শুনছি। সে বলছে আগে যখন রোথাং পাস ছিলনা তখন কুল্লু মানালী যাওয়ার একমাত্র পথ এটা ছিল।তাই হামতা অনেক আদী একটা ট্রেইল।তার ভাষ্য মনে এখন এপথে স্থানীয় দের যাওয়া আসা কমলেও মৃতদের কমেনি। স্থানীয়দের মতে এখনো গ্রামে কেউ মারা গেলে তার আত্মা এ পথধরেই ভগবানের কাছে যায়।তাই এ ট্রেইলে ক্যাম্প করলে রাতে বিভিন্ন শব্দ এবং কর্মকান্ড উপলব্ধি করা যায়। তার গল্প শুনতে শুনতে হটাত খেয়াল করলাম আমার হাত খামছে কেউ দাড়িয়ে আছে। সেটা আর কেও নয় আমার একমাত্র টিম মেট সাফায়েত। প্রশ্ন করতেই সে বলল সজল টর্চলাইটা রাতে আমার কাছে থাকবে আমি মুচকি হেসে দিয়ে দিলাম তাকে টর্চ।

রাতের শুকনো খাওয়া খেয়ে ঝিরির পানিতে হাত ধুতেই হাত অবস হয়ে গেল।পানি এত ঠান্ডা যে প্রায় ১০ মিনিট আমি হাতের কোন অনুভুতিই পেলামনা। আমি আর সাফায়েত প্রায় দেড় ঘন্টা শুকনো গাছে আগুন ধরাবার চেষ্টা করে খেমা দিলাম। কেরোসিন ছাড়া এ উচ্চতায় আগুন ধরানো অসম্ভব যখন সব ভেজা ভেজা। এজন্যই নিচের ক্যাম্পের ওরা পুরো ১ লিটার করোসিন শেষ করেছিল ক্যাম্পফায়ার ধরাতে। জানলে হাতে পায়ে ধরে হলেও ওই তেল গুলো আমি নিয়ে নিতাম।

রাতে ডাউনের একপ্রস্থ জ্যাকেট একটা উইন্ডব্রেকার আর প্যান্টের ভেতরে একটা থারমাল ইনার পড়ে মোটামুটি আরামেই কাটিয়ে দিলাম। শুধু মধ্যরাতে টের পেলাম তাবুর আশপাশে কি যেন হাটছে।একটু টেনশন হলেও ভয় পেলামনা।বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প করে ভয় মোটামুটি কমে গেছে।অত টেনশন নিলামনা। সাফায়েত অবশ্য অনেক দোয়াদুরুদ পড়া শুরু করে দিয়েছিল।

১৬/০৯/২০১৪
সকালে ৬ টার দিকে আমাদের ঘুম ভাঙ্গে। এত্ত ঠান্ডা ছিল যে স্লিপিং ব্যাগ থেকে মাথাটা ক্ছপের মত বের করেই আমার শেলে ঢুকে গেলাম। এবং সাফায়েত আর আমি একমত হলাম সুর্য মামা পুরাপুরি জাগার আগে আমরা উঠছিনা।
ছবি:- শুভ সকাল বলতেই হয় তাবুর জানালা খুলে এমন দৃশ্য দেখে ।
তাবু থেকে যখন বের হলাম তখন প্রায় ৭:৩০ বাজে। বাইরে ঝলমলে একটা দিন। আকাশে এক রত্তি মেঘ নেই। মনটাই ভাল করে দেয় মুহুত্বে এরকম আবহাওয়া। আমরা কিছুক্ষন ফটো সেশন করলাম। তারপর আমি কুকিং পট আর সুপ , নুডুলর্স এর প্যাকেট নিয়ে রওনা দিলাম ক্যানেডিয়ানদের টিমের কিচেন টেন্টে। নিজের হাতে ওদের স্টোভে খাবার রান্না করলাম। পাহাড়ে সব মানুষ ভাই ভাই। কোথায় আমি তাদের থ্যান্কস দেব উল্টো ওরা বলল যে আর কোন হেল্প লাগলে বলত।
ছবি:- সকালের নাস্তা।
ছবি:- খোয়াড় থেকে বের হয়ে আমি।
ও হা সকালে আরেকটা ব্যাপার পরিস্কার হলো তাবুর পাশে মল ত্যাগের চিহ্ন আর পায়ের ছাপ দেখে।রাত্রি বেলা ভুত নই একটা মাল বহণ কারি গাধা ঘুরঘুর করছিল সারা রাত। ক্যাম্পসাইটের ফরেনার দের গাইড জানালো এটা তাদেরই গাধা , রাত্রে ছেড়ে দেওয়া হয় হাটা চলা করতে পারার জন্য। নইলে ঠান্ডায় জমে মারা যাবে তাই।
ছবি:- রাতের ভুতটি।
আমরা ক্যাম্প প্যাক করতে করতে ১০:৩০ বাজলো। এদিকে অন্য ক্যাম্পের লোকজন প্রায় গুছিয়ে ফেল্ল। বিদেশিদের কিছুই করতে হয়নি। তাদের মাত্র ৪ জনের জন্য ক্রু আছে জন। আমরা মাত্র দুজনেই সব। তো ওরা বিদায় নিয়ে একটা টিম রওনা দিল আমাদের বিপরিত দিকে একটা লেকে। অন্য একটা টিম রওনা দিল আমরা যেদিকে যাবো সেদিকে। যে টিমটা হামতা যাবে তাদের বললাম আবার দেখা হবে বালুকা ঘেরা ক্যাম্পে।
 ক্যাম্প গুছিয়ে আমরা যখন রওনা দেব ঠিক তখনি ইন্ডিয়ান নেভির একটা টিম আসলো। আমাদের সাথে কিছুক্ষন কথা বলল। গল্প করতে করতে আমরা একসাথেই এগুলাম।তাদের টিমে মহিলা মেম্বারই বেশি। আর গাইড পোর্টার অনেক।আমরা মাত্র দুজন শুনে তারাও খুবই অবাক হলো। আমরা একসাথেই ব্রিজ পার হলাম। যে নদীটা পার হলাম এটাক রানী নদী বলে স্থানিয়রা। তবে দেখলাম হামতা নালা বা হামতা ঝিরি হিসাবে এটার পরিচিতি বেশি।
ছবি:- ব্রীজ পার হওয়ার মুহুত্বে।
ছবি:- হামতা নালা বা হামতা ঝিরি।
ব্রিজটা পার হলেই পাহাড়ের খাজে একটা বিশাল ফাটল দেখা যায় যেটা একটা গুহা মুখ।
ছবি:- গুহা। এর ভেতরে একটা ঝর্ণাও আছে।
বান্দরবানে সাধারণত আমরা ট্রেকে প্রতিদিন ১ বার কেন যতবার খুশি গোসল করি। আর এ ট্রেকে গোসলের নামও মাথায় আনতে পারছিলামনা। পানি ব্যাগের হাইড্রেশন প্যাকে নিয়ে ভেতরে রেখে শরীরের তাপে গরম করে করে খাচ্ছিলাম। এত ঠান্ডা। (তবে এট্রেইলে কোথাও আমাদের পানির কষ্ট হয়ননি , শধু বালুকা ঘরা হতে সীয়া গুরু নামার আগ পর্যন্ত। ওখানে নদী জমে বরফ হয়ে গিয়েছিল।খাওয়ার যোগ্য ছিলনা।)
ছবি:- এ পর্বতটার নাম ভুলে গেছি।
আমরা একটু একটু করে এগুতে শুরু করলাম। কিছুদুর যেতেই স্টেপি পথ আসলো। একটু উঠা। উচ্চতা তখনি অনেক। তাই কষ্ট হচ্ছিল। আমরা একটা উচু টিলা দেখতে পেলাম যেটা পার হতে হবে। তাই নিচে অনেক্ষন রেস্ট নিলাম আর প্রচুর ছবি তুল্লাম।
ছবি:- পুরো আকাশে একটুকরো মেঘ।
ছবি:- রাগী একটা ঝিরি বরফ শীতল পানি নিয়ে খেলা করছে।
আমরা ধীরে ধীরে দম নিতে নিতে যখন টিলার উপর উঠলাম তখন প্রায় ১২টা বাজে সকালের। একটু পরেই চিক্কা ক্যাম্প যেখানে আমাদের গতকাল থাকার কথা। মানালী থেকে দেরিতে শুরু করায় আমরা আজ দুপুর ১২টায়ও ওখানে নামতে পারিনি। দুর ছাই। টাইমের কেতা-কম্বল পুড়ি বলে আমরা টিলার উপরে বসে পড়লাম। আর নেভী টিমের মেম্বারদের উঠতে দেখতে লাগলাম। তারা উঠার পর গল্প করতে করতে আমরা দুই টিমি কখন বসা থেকে শুয়ে পড়লাম টেরই পেলামনা। আর ওই টিলার উপর ল্যাটনো শুরু করলাম।
ছবি:-  ১০০০০ + ফিট উচ্চতায় চলছে ল্যাটানো।
অনেকক্ষন পর যখন আমাদের ঘড়ীর টাইমের কথা খেয়াল পড়লো দ্রুত নেভী টিমদের থেকে বিদায় নিয়ে রওনা দিলাম। কোথাও টাইম ওয়েস্ট না করেই আমরা মাত্র ১০ মিনিটে চিক্কা ক্যাম্পে এসে গেলাম। এখানে ওই নিভি টিমের জন্য তাদের ক্রু রা তাবু খাটাচ্ছে। যা আমরা সাইটে আসার অনেক আগে থেকেই দুর থেকে দেখছিলাম। বিভিন্ন রং এর তাবু।


ছবি:- ধুর থেকে চিক্কা ক্যাম্প। নেভী টিমের ফেলানো ক্যাম্প।
ছবি:- চিক্কা ক্যাম্প।
আমরা যেহেতু চিক্কাতে দাড়াবোনা। র্থাত আমাদের এডভ্যান্স ক্যাম্প বা বেস ক্যাস্পে চলে যাওয়ার প্লন তাই দ্রুত হাটা শুরু করলাম চিক্কা ক্যাম্পকে পাশ কাটিয়ে। কিন্তু কিছু দুর গিয়েই ট্রাফিকে আটকা পড়লাম। একেবারে ঢাকার জ্যাম। নদী পার হওয়ার মাত্র একটা ব্রিজ কিন্তু পুরোটা দখন করে ভেড়ার পাল পার হচ্ছে। শয়ে শয়ে ভেড়া। প্রায় আধ ঘন্টা লাগলো পুরা পালটা পার হওয়ার। আমাদের হাতে অপশন ছিল হয় পানিতে নেমে পার হওয়া নই অপেক্ষা কর। ঠান্ডা পানিতে নামার থেকে আমরা অপেক্ষাই করলাম। ছবি তুলে আর সাফায়েতের সাথে গল্প করে কাটিয়ে দিলাম আধঘন্টা।
ছবি:- পালের ভেড়া।
আমার ট্রাফিক থেকে ছাড়া পেয়ে জোর কদমে হাটা শুরু করলাম। যেমনে হোক আজ সন্ধার আগে বালুকা ঘেরে যেতে হবে। ১৫ মিনিট হাটি আর জিপিএস দেখি আর কতদুর। এভাবে বড় বড় বোল্ডার আর পাথর পার করতে লাগলাম। এখানে বোল্ডার বেশি। হাটতে কষ্ট হচ্ছিল। কিছুদুর দুর পাথরের স্থুপ দেখা যাচ্ছিল। আমরা ভাবলাম হয়তো ভেড়ার পালের মানুষদের কিছু , হয়তো খাদ্য মজুদ করে। কিন্তু আগ্রহ থেকে একটা পাথরের স্থুপ এর দুএকটা পাথর সরাতেই একটা কঙ্কাল এর একাংশ বের হয়ে আসলো। মোটা মুটি ভয়ই পেলাম। স্থুপ গুলো আসলে কবর। এখান মাটি কাটা কষ্ট তাই লাশ পাথরের নিচেই চাপা দেয় বোধহয় তারা। আর হামতা পবিত্র স্থান বলে অনেকে দুর থেকে লাশ এখানে এনেও হয়ত কবর দেয়।
ছবি:- একটা কবর।
আমরা আবার হাটা শুরু করলাম। পথে আমাদের প্রথম বরফের প্যাচ পড়লো নদী পার হওয়ার আগে। ছোট একটা গর্তে মনেহয় পানি ছিল। ওগুলো জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। পাশে ছোট ঝিরিটাও জমে বরফ। আমি বরফে একটা পা দিয়ে চাপ দিয়ে দেখলাম।মট মট শব্দ করে উঠায় আর পা দেইনি। কারণ জানা নেই এটা কতটা গভীর।
ছবি:- প্রথম জমাট বাধা বরফের গর্ত।
হাটতে হাটতে আমরা আবার হামতা নদীর পাড়ে এসে পড়লাম। এতক্ষন কোথায় যেন লুকোনো ছিল নদীটা। হাটাত সামনে এসে চেলেন্জ ছুড়ে দিল।ওপাশে যেতে হলে আমাদের উপর দিয়ে ই যেতে হবে।কি আর করা , প্যান্ট খুলে শুধুমাত্র আন্ডারপ্যান্ট পরে নদী পার হয়ে গেলাম আমরা।অর্ধ নগ্ন হতে লজ্জা লাগলোনা।কারণ চিক্কার পর আমরা আর কোন জীবিত প্রাণীর সাড়া-শব্দও পাইনি।তবে নদী পার হয়ে আমাদের পায়ের সাড়া চলে গিয়েছিল। কিছু লং-জাম্প আর ডলাডলির পর এর সাড়া পাওয়া গেল।
 ছবি:- নদী পার হওয়ার সময়।
জিপিএস এ বারবার দেখছিলাম আর কতক্ষন বালু কা ঘেরা ক্যাম্পসাইট।আমরা ঠান্ডা আর অক্সিজেনের আভাবে যতটা না ক্লান্ত তার থেকে খাবারের আভাবে।পেট ভরে শেষ খেয়েছি আমরা মানালিতে , এর পর শুধু আজ সকালে ভারী কিছু পড়েছে পটে। তাও মাত্র জন প্রতি এক প্যাকেট নডুলর্স আর হাফ প্যাকেট সুপ।

আমাদের গতি স্লথ হয়ে গেল। দু-কদম হাটি তো ৫-৬ মিনিট রেস্ট। মুলত চিক্কার পর টিলা আর বোল্ডার গুলো পায়ের ১২টা বাজিয়ে দিয়েছে।আমাদের জিপিএস এ যে ফাইলটা বা লগটা আছে এটা এক বিদেশী থেকে আমি বাংলাদেশে থাকতে নিয়েছিলাম। এটাই একমাত্র সঠিক ফাইল নেওয়ার উপায় ছিল। উনি এ লগটা বছর খানেক আগে নিয়েছিলেন তার জিপিএসে যখন তিনি এ ট্রেইলে গিয়েছিলেন।

জিপিএসে যখন ক্যাম্পসাইট আর মাত্র আধ কি:মি তখন ট্রেইলে ছোট্ট একটা সমস্যায় পড়লাম আমরা। একটা Y জংশন টাইপ পড়লো। যদিও এখানে কোন ট্রেইল টাইপের কিছু নেই। এতক্ষন আমরা গাধা আর ভেড়ার মল দেখে দেখে পথ চলছিলাম। জিপিএস দেখে বুঝার উপায় ছিলনা। কারণ দুটো রাস্তায় সমান্তরাল , শুধু একটা নিচে চলে গেছে অন্যটা উপর দিয়ে। যেহেতু ট্রেইলে গত ৫-৬ ঘন্টায় কোন লোক পাইনি তাই বেশিক্ষন অপেক্ষা করলামনা আমরা।জিপিএসের ট্রেইল অনুসারে যেটা সবচেয়ে সম্ভাব্য রাস্তা মনে হলো সেটা উপরেরটা। ওটা ধরেই এগুলাম। আলো কমে আসছিল। ভাগ্যের কথা জিপিএসে ক্যাম্পসাইটের দুরুত্বও কমে আসছিল। একসময় আমরা উচু থেকে নামা শুরু করলাম। এবং খোলা একটা স্থানে পড়লাম। ঠান্ডা বাড়ছিল আর আলোও কমে আসছিল। জিপিএসে দেখলাম সুর্য ডুবতে আর আধ ঘন্টা বাকি। এবং এ খোলা স্থানটা বালু কা ঘেরা থেকে মাত্র কয়েক শ মিটার দুরে। এবং নরম বালুতে ভর্তি। ক্যাম্প করে আরাম পাওয়া যাবে এবং পানির সোর্স খুব কাছে। সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছিল সেটা হলো ক্যাম্প সাইট থেকে দৃশ্য। এটা একটা খাদের মত। চারপাশে পাহাড় দুরে একটা সম্পুর্ন বরফ ঢাকা পাহাড়ে লাল সুর্যের আলো
ছবি:- ক্যাম্প থেকে তোলা সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
সেদিন আমাদের ক্যাম্প করতে খুব কষ্ট হয়েছিল। আশপাশে কোন লোকজনও ছিলনা। আমরা দুজন এ পুরা পিন পর্বত মাউন্টেইন রেন্জের এ অংশে সম্পুর্ন একলা।টেন্ট সেট করা থেকে সব গুছানো। আর রাতে লেয়ারিং বেশি করতে হয়েছে। ভেতরে এক প্রস্থ ডাউন জ্যাকেট উপরে আরেকটা জ্যাকেট তারপর স্লিপিং ব্যাগ। তবে রাতের ঘুমটা ভালই হলো। এক ঘুমে সকাল ৬টা।
ছবি:- আমাদের ক্যাম্পসাইট।
১৭/০৯/২০১৪

আজ আমাদের হামতাই উঠার দিন আর আমার জন্মদিন। সকলে সবার আগে সাফায়েত আমাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিল।তাবুর জিপার খুলে যখন বাইরে তাকলাম তখন শশব্দে বলতেই হলো এটা আমার অনেক গুলো ভালো জন্মদিনের একটা দিন।
ছবি:- আমাদের ক্যাম্পসাইট।
আজ আমরা একটু আগে আগে ক্যাম্প গুছিয়ে ফেল্লাম।আটটা ত্রিশেই সব গুছিয়ে শুকনো খাবার দিয়ে নাস্তা করে রওনা দিলাম।প্রথম রেস্ট নেব বালু কা ঘেরায়। তবে হাটার গতি আজও বেশি নয়।কারণ পথে বোল্ডার বেশি। এত্ত পাথর যে হাটতে কষ্ট হচ্ছিল।আর মাঝে মাঝে বরফের হালকা স্থুপের উপর দিয়ে হাটতে হচ্ছিল। সুর্যের তাপ বাড়ার সাথে সাথে বরফ নর হয়ে যাচ্ছিল। হাটতে গেলে দেবে যায়। আর একবারতো এত বিকট ভাবে পায়ের দিচে বরফ ফাটার আওয়াজ দিল যে ভয় পেয়ে দৈড়ে পার হয়ে গেলাম। এখানে আসার আগে ভেবেছিলাম বরফে হাটার আলাদা একটা মজা আছে। সত্যি বলতে কি কোন মজাই পাইনি। পিছলা , খড়খড়ে আর প্রতি মুহুত্বে পড়ে যাওয়ার ভয় বা বরফ ফেটে গর্তে ঢুকে যাওয়ার ভয় থাকে।
ছবি:- বরফের উপর দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
এখানে শীতে কোমড় পর্যন্ত বরফ থাকে অনেকসময়। প্রামাণ পাওয়া গেল পাথরের দেওয়ালে বরফের দাগ আর পথে পথে একটি পাথরের উপর আরেকটি পাথর সাজিয়ে রাখা দেখে। যখন বরফ পড়ে পুরো প্রান্তর সাদায় ঢুবে যায় তখন এ পাথর গুলো মাথা উচু করে থাকে আর পথ চিনতে সহায়তা করে।
 আমরা যখন বালু কা ঘেরায় আসলাম তখন ঠান্ডা মুটামুটি মানিয়ে গেছে। রোদ ঝলমলে একটা সকাল। কাপড়ের লেয়ারিং কমিয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম বালুর উপর বসে। সামনে যে ঝিরি ছিল সেটার পানিতে হাত দিতে গিয়ে দেখি ওটার পানি জেলির মত জমে গেছে।এটা খেতে আর সাহস করলোনা।বোতল আর হাইড্রেশন প্যাকে ঢুকিয়ে রাখলাম পানি পরে খাওয়ার জন্য। এ সামান্য কাজেও হাপিয়ে উঠলাম আর ঠান্ডা পানি লেগে হাত জমে যাওয়ার জোগাড়।একটু রেস্ট নিচ্ছিলাম তখনি দেখি বালুকা ঘেরাই ঘোড়া আর লাল , ণীল কিচেন টেন্ট নিয়ে নেভী টিমের দলের ক্রুরা হাজির। তারা মূহুত্বে সব খাটিয়ে ফেল্ল। আমরা কিছুক্ষন অপেক্ষা করে আবার উঠা শুরু করলাম , ইচ্ছে ছিল নেভির টিমের কুশলাদি জিগ্যাস করে যাব কিন্তু ক্রুরা এলেও ওদের দেখা না পেয়ে রওনা দিলাম । উদ্দেশ্য হামতা হয়ে আজই শিয়া গুরু ক্যাম্পে যাওয়া। জিপিএস এ দেখাচ্ছিল হামতা বেশি দুরে নয়।  বালু কা ঘেরা ধরে সামান্য উঠতেই খুব সুন্দর একটা স্থান দেখলাম। বর্ষায় হয়তো এটা লেকে টেক হয়ে যায়া।চারদিকে ধুসর আর সাদা পাহাড়।মাঝে ভ্যালির মধ্যে সবুজ আর লাল ঘাসে ঘেরা স্থান। আর হামতা নদী মাঝ খান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
ছবি:- লাল সবুজের বালু কা ঘেরা।
আমরা সম্পুর্ন একা হয়ে গেলাম। পুরু ট্রেইলে এখন আমরা ছাড়া আর কেউ কে দেখা গেলনা। শুধু দুরে বহু দুরে পাহাড়রে ফাঁকে লাল তাবু গুলু দেথা যাচ্ছিল। প্রথমত আমরা ঘর থেকে এত দুরে একটা ট্রেকে তার উপর সাথে কোন গাইড নেই। তাই আশপাশে তাকালে মাঝে মাঝে গা ছমছম করত। আর হাটতে কষ্ট হচ্ছিল বরফের কারণে। বালু কা ঘেরার পর পুরো রাস্তাটায় প্রায় বরফে ঢাকা। গত দুদিন যে গাধার পায়ের ছাপ আর ট্রেইল দেখে চলছিলাম তা আর সম্ভবনা। সব বরফের নিচে। জিপিএস ই ভরসা। আমরা মোটা মুটি খাড়া একটা পাহাড়ের সামনে এসে দাড়ালাম। জিপিএস বলছে এর ঠিক অপর পাশেই হামতা পাস , যেটা দেখার জন্য এত্ত কষ্ট করে এখানে আসে। কিন্তু সারাদিনের ট্রেকিং আর বরফ এর পথ এবং ঠান্ডা কাহিল করে দিয়ে ছিল। এত্ত উচু উঠার পথ দেখে সাফায়েত তো বলেই দিল যে এটা হামতা যাওয়ার পথ হতেই পারেনা। তোমার জিপিএস ভুল নাতো? মনে মনে রাব্বি ভাইকে দুষলাম। বেটা আমাকে একদম নতুন মডেলের একটা জিপিএস দিয়েছে। একটু কেমন কেমন যেন জিপিএসটা। পুরোণটা দিলে কি ক্ষতি হতো বেচারার ? পুরাণ মডেল গুলো অপারেট করা কত্ত সহজ।
আমরা তখন চকলেট খাওয়া আর জিপিএস নিয়ে তর্কাতর্কি করছি তখন প্রকৃতি মাতা নড়ে চড়ে বসলেন। রুট প্লান আর জিপিএস এর ডিসপ্লে থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে দেখতেই বুকের ভেতরে ধক করে উঠলো। চারপাশে হটা মেঘ ঘিরে ফেলেছে। বাতাসের গতিও সামান্য বেশি যেন।
ছবি:- বরফ আর মেঘের মাঝে হটাৎ আমরা।
আবহাওয়ার মতি গতি ভাল না লাগায় আমরা দ্রুত হাটা ধরলাম। এবং আধঘন্টায় বুঝতে পারলাম আমরা হামতার খুব কাছে থাকলেও নিদৃষ্ট ট্রেইল থেকে দুরে সরে আছি। সহজ ভাষায় রাস্তা হারিয়েছি। এদিকে ঠান্ডা বাতাসের দাপট আর চারদিকে ঘন মেঘে অন্ধকার হয়ে গেছে। জিপিএস রিডিং মিলিয়ে আর একটা ছোট টিলার উপরে উঠে চারপাশ দেখে বুঝলাম আমরা আজকে রাতের জন্যও এ ঠান্ডা শুষ্ক মুরুভুমির মত পাহাড়ী এলাকায় আটকা পড়ে গিয়েছি। সাফায়েতকে কিছু বুঝতে দিলামনা। বেচারা নতুন ট্রেকিং জগতে , ঘাবড়ে যেতে পারে। তাকে ভয় না পায় মত করেই বললাম সুন্দর একটা ক্যাম্প সাইট খুজতে। কিন্তু চারপাশে শুধু বরফ আর বরফ।সাফায়েত তো আর কোন ভাবেই এই অঞলে থাকতে রাজি নয় , পারলে যেন আজই মানালী যেতে চাই । উপায় না দেখে আমি সাফায়েত কে নিয়ে বরফে স্লাইড করে করে নিচে নেমে গেলাম একটু। পাহাড় আর প্রকৃতি কে আমি সম্মান দিতে জানি। বেচারা যখন খেপছে একটু ঠান্ডা হতে দি। নিচে সমান পাথুরে একটা জায়গা পেলাম যেখানে আবার একটা পানির সোর্স ও আছে। এক দেখায় বুঝতে পারলাম এর থেকে ভাল ক্যাম্প সাইট এত উপরে পাবোনা। দ্রুত ক্যাম্প করে ফেল্লাম। সাফায়েত পুরো হাপিয়ে যাওয়ায় তাকে কোন কাজ করতে দিলামনা। বাতাস আর ঠান্ডার কারণে আমার ক্যাম্প পিচ করতে প্রায় আধ ঘন্টা লেগে গেল। দ্রুত বোতলে পানি ভর্তি করে একটু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করে শরীর গরম করে তাবুর ভেতরের স্লিপিং ব্যাগের কম্ফোট তাপমাত্রায় চলে গেলাম। আর ডিসিশান নিলাম সকালের রোদ উঠার আগে এর থেকে বের হবনা।যেহেতু আজ আমার জন্মদিন তাই চকলেটি বিস্কুটের প্যাকেট খোলা হলো আর দুমসে খাওয়া হলো। সাফায়েত আর আমি টুকটাক কথা বলে সময় কাটাতে লাগলাম। প্রচন্ড টায়ার্ড ছিলাম আমরা , সামান্য কথা বলতেই কষ্ট হচ্ছিল। একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম। তবে ঘুম ভাল হলনা। ছেড়া ছেড়া। রাতের বেলে অনেকবার ঘুম ভাংলো আর মাথা দপদপ করে ব্যাথা করতে লাগলো। বুঝলাম উচ্চতার সমস্যা। কোনমতে রাতটা কাটাবার চেষ্টা করতে লাগলাম। আর বাইরে প্রচন্ড বাতাস তো পারলে টেন্ট সমেত আমাদের উড়িয়ে নিয়ে যায়।

১৮/০৯/২০১৪

সকালে ভারী একটা মাথা নিয়ে ঘুম ভাংলো। নিজের মাথাটাকে অপরিচিত লাগছিল। কেমন ভারী ভারী আর জট খাওয়া। তবে টেন্টের জিপার খুলে যখন বাইরে মাথা বের করলাম সব পরিস্কার হয়ে গেল আসপাশের দুশ্য দেখে। থ হয়ে গিয়ে ছিলাম। রাতে ক্যাম্প করার সময় বুঝিনি কোথায় ক্যাম্প করছি। আমি একটু হাটতে বের হয়ে গেলাম।
ছবি:- আমাদের ক্যাম্প সাইট।
আমরা ক্যাম্প ঘুছাচ্ছি আর হটাত দুর থেকে কারো চিৎকার শুনলাম। ফিরে দেখি ঠিক আমাদের মাথার উপরে একটা চিকন ট্রেইলে কিছু ট্রেকার হেটে যাচ্ছে আর আমাদের ক্যাম্প সাইট দেখে হাত নাড়ছে । ওদের দেখে হাটাত আমি একটা জিনিস চিন্তা করে জিপিএস দেখলাম। এবং সাথে সাথে বুঝতে পারলাম আমরা কি ভুল করেছি। আমরা নিদৃষ্ট ট্রেইল থেকে অনেক নিচে ওন্য কোন ট্রেইল ধরে গতকাল এগিয়েছি। এখন যেখানে ক্যাম্প করেছি সেখান থেকে ৪০০-৫০০ ফিট উপর দিয়ে ট্রেইল। বরফের জন্য যেটা ট্রেইল হিসেবে চেনাই যায়না। তো সঠিক ট্রেইলে উঠার খাড়া পথ একটা বের করে একটা ঢোক গিলে উঠা শুরু করলাম। এত উচ্চতায় এভাবে উঠতে খবর হয়ে যাচ্ছিল। পরে একটা ছন্দ বের করলো সাফায়েত। এক দুই তিন করে ৩০-৩৫ গুনে গুনে পা ফেলি এরপর একটু দম নি। এরপর আবার গুনে গুনে উঠি।একসময় ট্রেইলে উঠে পড়ি। আমাদের দেরি দেখে ওই দলটা এগিয়ে গেছে। পিপড়ার মত ওদের দুরে দেখা যাচ্ছে। আমরাও এগিয়ে চলি। দুরি ডিও তিব্বা পর্বত যেন একবার উকি দিয়ে আমাদের দেখে নিল।
ছবি:- ডিও তিব্বা দুর থেকে।
আমরা একসময় একেবারে হামতা নদীর সোর্সে উঠে আসলাম। এখানে সব জমাট বাধা। সব সাদা। নদী একদম জমে গেছে এবং পাহাড়ে একটা ঝর্না দেখলাম যেটা জমে গেছে পতনের সুত্রকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে।
ছবি:- জমে যাওয়া নদী।
আমরা বরফের নদী দিয়ে এগুনো শুরু করলাম। নদী জমে যাওয়ায় নদীর মাঝখান দিয়ে-ই হেটে হেটে চলা শুরু করলাম।
ছবি:- জমাট বাধা নদীর মধ্যখান দিয়ে এগিয়ে চলা।
নদীর বাক ঘুরতেই  দেখতে পেলাম হামতা পাসের উপরে উঠে গেছে সবাই । আমি ছাড়া। এবং আমার ট্রেকিং পার্টনার সাফায়েতও। উপরে উঠে পাসের পাশে দেওয়ালে বসলাম। এটা যেন একটা মেমোরিয়াল। প্রচুর প্রেয়ার ফ্লাগ , ছবি , লিখায় ভর্তি এর দেওয়াল। আমরা সামিট পয়েন্টে পৌছে বসলাম। মনটা একটু হালকা হলো। অন্তত এখন পর্যন্ত মুটামুটি ভালই ভালই হামতা পর্যন্ত আসতে পেরেছি।
ছবি:- হামতায় সবাই একটু বসে।
ছবি:-  রাব্বী ভাইর জিপিএস।
আর যাদের দুর থেকে দেখেছিলাম তারা আর কেউনয় নভী টিমের একাংশ। তারা সামিট করে একি পথে ব্যাক করবে। তারা আমার অর্ভথ্যানা জানালো। এবং এত অভাবের সময়ও তাদের একজন একটি আপেল বের করে দিল। আপেলটা খেতে গিয়ে চোখদিয়ে পানি বের হয়ে হেল। স্বাদে না খুদার্থ বল সেটা আল্লাহই জানে। সবার থেকে বিদায় নিয়ে দুরেরে পর্বত গুলোকে আরেকবার মন ভরে দেখে সিয়াগুরুর দিকে নামা শুরু করে দিলাম।
ছবি:- হামতা থকে পর্বত ইন্দ্রাসেন
যতই নামছি ততই বরফের মাত্রা কমে গেল। একসময় আমরা যেন মরুভুমিতে নেমে গুলাম। সব ধুসর আর দুরদুরান্ত পর্যন্ত একই রকম। শুধু নামতি আর নামতি।
ছবি:- নামছি আমি।
ছবি:- সীয়া গুরু।
সীয়া অর্থ আমি যদ্দুর জানি ঠান্ডা। কিন্ত সীয়া গুরু নেমে ঠান্ডা তেমন লাগছিলনা। গত ১.৫-২ ঘন্টা খালি নামছি। জনমানব শুন্য রাস্তা দিয়ে। নেমে একটা ক্যাম্প পেলাম। কিছু ধর্মীয় গ্রুপের। ১০-১২ জনের ক্যাম্প। বিশাল বিশাল তাবু। নেমে সাফায়েত কে পথে বসিয়ে আমি ওদের ক্যাম্পে গেলাম। যদি কোন খাবার পায়। কিন্ত দিতে পারলোনা। তাদের সব রেশন করা। ছ মাস এখানে থাকতে হবে ওদের। তবে পানির সোর্স এবং পথ নিদৃশনা পেলাম। আমি সাফায়েতের কাছে এসে টিম মিটিং এ বসলাম। মিটিং এ ডিসিশান হলো আজই চাত্রু গ্রামে নেমে যেতে হবে যেহেতু আমাদের খাবার এবং শক্তু কোনটাই নেই। সিয়াগুরু তে ক্যাম্প করার নিয়ম থাকলেও আমরা নামতে শুরু করলাম। প্রায় ৩-৪ ঘন্টা ট্রেক করে নেমে একটা বিশাল নদীর পাড়ে এলাম যেটা পার হতে হবে। এবং প্রচন্ড স্রোত নদীর উপায়ন্তর না দেখে নদীর পাশের খাড়া দেওয়াল গুলু দিয়ে ট্রেক করে খামছে নামতে লাগলাম। একবার সাফায়েত হড়কে নিচে পড়তে পড়তে বেচে গেল। আমি ব্যাকপ্যাক ছেড়ে ওকে ধরে তুললাম। বেচারা একটুর জন্য আজ যেত। এভাবে এগুতে এগুতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। কোন বের হওয়ার রাস্তা পাচ্ছিলামনা। হটাত দুরে একটা গাড়ীর হেডলাইট জ্বলতে দেখলাম। ধড়ে জান ফেরত এলো। এবার পুর্ণ উদ্দমে নামা শুরু করলাম। যখন ব্রিজ পার হয়ে চাত্রু গ্রামে পৌছালাম তখন রাত আটটা । ঘুটঘুট অন্ধকারে হেড ল্যাম্প আর টর্চলাইট জ্বেলে গ্রামে ঢুকলাম আর লাল লাল জ্বলন্ত চোখে কিছু লোমশ কুকুর স্বাগত জানালো আমাদের।
চাত্রু গ্রাম খুবই ছোট। একটা ধাবায় ঢুকেই ভাতের অর্ডার দিলাম। গরম গরম ভাত চোখ বন্ধ করে এমন ভাবে স্বাদ নিতে লাগলাম যেন আমরা জীবনে প্রথম ভাত দেখলাম। রাতে ধাবার মালিকের সাথেই থাকলাম। সাটার দেওয়া একটা রুমে।

১৯/০৯/২০১৪

সকালে উঠে প্রথমে নদীর চিপায় চুপায় প্রাকৃতিক কর্ম সারলাম আমরা। এখানে ওপেন টয়লেট প্রায় সব গ্রামে। গ্রাম্ফু তে বা পরে কাজায় ভাল হোটেল আছে। ধাবার সামনের চেয়ার গুলোয় বসে টিম মিটিং করলাম। প্লান করতে লাগলাম আজকের প্লান কি চন্রতল লেক যাব না কানামো ট্রেকে যাবো। আর চারপাশের ছবি তুলতে লাগলাম। দিনের আলোয় দেখে ভয়ই লাগছিল রাতের বেলা ট্রেক করে আমরা কোত্থেকে এখানে নেমেছি।
ছবি:- এখান থেকে গতরাতে নেমেছি।
ছবি:- চন্দ্রা নদীর উপরে একটা ব্রিজ।
ছবি:- হিমালয়ের বুকে ধাবা কাম হোটেল।
[ নোট:- আমাদের এ ট্রেকে মানালী থেকে চাত্রু গ্রাম পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে জনপ্রতি মাত্র ৭৫০ রুপির মত। ট্রেইল টা মুটামুটি সহজ এবং উচু পর্বত্য এ ট্রেকিং শুরু করার জন্য বেস্ট। কিছু জায়গা একটু রিস্কি কিন্তু ট্রেইল মুটামুটি ওয়েল মার্কড। ব্লগটা এমনিতেই বিশাল হয়ে গেছে পড়তে পড়তে বিরক্ত হওয়াই আমি দু:খিত। অন্য কোন তথ্যের দরকার হলে আমার ফেসবুকে বা জিমেইল (sajaldiit@gmail.com ) এ মেইল দিন। ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ] 

আমার অন্যান্য লিখা :- ১/ ভারত ভ্রমণ :- কোলকাতা ২/ ভারত ভ্রমণ:- দিল্লী ৩/ ব্যাকপ্যাকিং নাকি ট্রাশপ্যাকিং ? (যা যা করা উচিৎ) ৪/ বান্দরবানে হারিয়ে যাওয়ার গল্প। ৫/ ক্যাম্পারভ্যানে নিজের দেশ ঘুরা দেখা।  








 

২টি মন্তব্য:

  1. চমৎকার ট্রিপ, অসাধারণ বর্ণনা । আমাদেরও আশা জাগে, যাইতে মুন্চায় । জানিনা আমার মত হগিরা( ফকিরা) লোক জন কোনদিন সুযোগ পাবে কি না !

    উত্তরমুছুন
  2. সুন্দর পোস্ট ভাই

    Anayetsk.blogspot.com

    উত্তরমুছুন