২৯ অক্টো, ২০১৩

ক্যাম্পারভ্যানে নিজের দেশ ঘুরা দেখা।

আমার একবার সুযোগ হয়েছিল নিজের দেশটাকে কিছু বিদেশীদের সাথে তাদেরই ক্যাম্পার ভ্যানে বা  হোম ভিহাইকেল করে ঘুরে দেখার। অসাধারণ একটা ট্রিপ ছিল আমার জন্য। ৩৩ জন বিদেশি যাদের বেশির ভাগ জার্মানির এবং কয়েকজন স্পেন , কয়েকজন ইতালীর , একজন ভারতীয় এবং একজন ইরানের ছিল।
এই ১৭ দিনে আমরা যশোর থেকে যাত্রা শুরু করি। রুট প্লান ছিল এরকম :- যশোর - ঢাকা - চট্রগ্রাম - কক্সসবাজার - টেকনাফ - কেরানী হাট  বান্দরবান - রাঙ্গামাটি- চট্রগ্রাম - কুমিল্লা - মৌলভীবাজার - টাঙ্গাইল - রংপুর - বুড়িমারি।  অর্থাৎ আমারা পুরা বাংলাদেশে একটা Y এর মত ট্যুর দিয়েছিলাম। তখন দেশের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। এই ১৭ দিনে আমরা ৪টি হরতালের মুখোমুখি হই। যার ফলে ঘুরা ঘুরি খুবই কমই হয়েছিল বলতে গেলে খালি ড্রাইভ আর ড্রাইভ করেছি আমরা। যেহেতু আমাদের সাথের গাড়ি গুলোতে থাকা , রান্না করা , বাথরুম , টিভি সব ছিল। হরতালেও আমরা কম মজা করিনি। গাড়ি চালিয়ে বাংলার রাস্তায় রাস্তায় দাপিয়ে বেড়িয়েছি , আর যেখানে খুশি ক্যাম্প করেছি। এ যাত্রার গল্পটি নিচে লিখলাম। আমার অন্যান্য লিখার মত বিস্তারিত লিখতে পারিনি কারণ ট্রিপটা অনেক আগের ছিল। আর যে ডায়েরিতে সব লিখেছিলাম তা পথে হারিয়ে ফেলি। যা মনে আছে তাই লিখলাম। আর ছবিও অতো বেশি তুলিনি। যশোরের কিছু ছবি আমার এক ছোট ভাই কাম প্রিয় ফটোগ্রাফার ( সাজ্জিদ ) এর ক্যামেরার থেকে নিয়েছি। গল্পটা পড়তে পারেন এখানে  :-


৫/০১/২০১৩
-------------------------------
হটাৎ একদিন আমার আপন ফুপাত ভাই আরাফাত ভাইয়ের ফোন। “ABENTEURE OSTAN” নামে একটা জার্মান গ্রুপ থেকে থেকে আমাকে একটা বিদেশী টুরিস্ট দলের সাথে বাংলাদেশ নাকি ঘুরতে হবে ১৭ দিনের জন্য । ওরা পুরা বিশ্ব ঘুরছে তাদের গাড়িতে চড়ে , ৭০০ দিন এভাবে ঘুরবে। বাংলাদেশের পার্টে আমাকে থাকার রিকোয়েস্ট করলো। আনেক চিন্তা করে না করে দিলাম। এমনিতেই অনেক কাজ তখন , দৌড়া দৌড়ি। বললাম অনেক লোক আছে এ কাজে আগ্রহ দেখাবে। আমি আমার পরিচিত দুএকজন কে বললাম। কেউ রাজি হলোনা। মজা করল। বলল দুর ফাউ আমি নাকি ফাকা মারতেছি , এই সেই। গাড়ি নিয়ে বাংলাদেশ ঘুরা ? কেউ বিশ্বাস করলোনা।

২৩/০১/২০১৩
-----------------------------------
কিভাবে কিভাবে জানি আমি শেষমেষ রাজি হয়ে গেলাম এ ট্যুরে যাওয়ার জন্য। আমার কম্পানির চাপে নাকি নিজের মনের সুপ্ত ইচ্ছা থেকে নিজেও যানিনা।২২ তারিখ রাতের ১১টা পর্যন্ত আমি এবং আমার টিম “Escape Bangladesh” এর অফিসে কাজ করলাম। যেহেতু যারা আসতেছে তারা সম্পুর্ন পথ ড্রাইভিং নিজেরাই করবেন এবং আমাদের প্লান এবং কথা মত চলবেন তাই এত কাজ। এত রাত পর্যন্ত তাদের গ্রুপ লিডার Konstantin Abert এর সাথে চ্যাট করলাম। গাড়ি সমেত তারা তখন কোলকাতা শহরে। ২৫ তারিখ যশোর দিয়ে বাংলাদেশ ডুকবেন। তাদের সাথে রুট প্লান করলাম , GPS করডিনেট শেয়ার করলাম  ইত্যাদি প্লান প্রোগাম করে ঘুমাতে গেলাম বাসায় । কাল ভোর ৬টার ট্রেনে ঢাকা যাব। তার পর রাতের গাড়িতে যশোর। এখান বলে রাখা ভাল “Escape Bangladesh”  তাদের মূল হোস্ট ছিল। তারাই কাগজ পত্র , অনুমতি ক্যাম্প সাইট পারমিশন ইত্যাদি ঠিক করল।
 ২৪/০১/২০১৩
-----------------------------------------------
সকাল ৬টার ট্রেনে ঢাকা আসলাম। ঢাকা ঢুকতে ঢুকতে প্রায় দুপুর। প্রিয় একজন ড্রাইভারের গাড়ি রেন্ট নিলাম। খলিল ভাই। যাত্রা বাড়ির ভাড়া গাড়ির স্ট্যান্ডের নাম করা ড্রাইভার উনি। মজার লোক এ ১৭ দিন প্রচুর হাসাইছিল আমাদের। পুরা টিমে একমাত্র উনিই বাংলাদেশি ড্রাইভার। উনাকে নিয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রি হাছান মাহমুদের বাসায় গেলাম আমরা প্রথমে। মন্ত্রির সাথে এ ট্রাভেলটা নিয়ে আলোচনা হলো। উনার সাথে দেখা করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল অনুমতি নেওয়া। এত্ত গুলা গাড়ি দেশে ঢুকবে এবং বান্দরবান সহ বিদেশি পারসোনাল প্রবেশ নিষেদ এমন প্লেসে একসেস পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত। এরপর বাংলাদেশ টুরিসম বোর্ডের সাথে যোগাযোগ করে মিটিং করলাম আমরা আরেকটা। যশোরে একটা রিসিপশনের ব্যাবস্থা তারাই করলো। সারদিন ঢাকাই কর্মব্যাস্ত দিন শেষ করে যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমরা। আমি , সাফায়েত( আমার আরেক ফুপাতো ভাই ) এবং একজন জার্মান ভাষা জানে এরকম একটা ছেলে নিয়ে রওনা দিলাম।

২৫/০১/২০১৩
-----------------------------------------------------
২৫ তারিখ বর্ডারে আমরা সকাল সকাল পৌছালাম। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে কাগজ পত্র নিয়ে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন অফিসে গিয়ে চেয়ার টেবিল দখল করলাম। এমন ভাবে ওদের সাথে কাজ করছিলাম যেন আমরা প্রতিদিন বেনাপোল বর্ডারে কাজ করি। এখানকার কর্মকর্তা। হে হে হে। এপাশ থেকে ওদের ইন্ডিয়ান এয়ারটেল নম্বরে ফোন দিয়ে কথা বলে নিলমি। তারা আস্তে আস্তে ভেতরে ঢুকলো। টোটাল ১৭টা ক্যাম্পার ভ্যান।

ছবি:- এবার্টের গাড়ি সবার প্রথমে ঢুকলো।
ছবি:- হেনার গাড়ি। এভাবে ১৭টা ঢুকলো।
বর্ডারে ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে সারতে ওদিন প্রায় ২টা ৩টা বেজে গেল। তাই যশোর আর ঘুরা হলোনা। রাস্তায় যা দেখা দেখলাম গাড়িতে চড়ে চড়ে।  দুপুরে খেলাম আমারা বর্ডারের পাশেই পর্যটন হোটেলে , মান ভালোনা কিন্তু এতগুলো বড় গাড়ি পার্কিং এর জায়গা একমাত্র ওদেরই ছিল।
 
ছবি:- খাওয়া দাওয়া।

 এরপর ক্যাম্প সাইটের পথে যাত্রা। ক্যাম্প সাইটে তখন আমার এক ছোট ভাই এসে বসে ছিল। সে যশোরেই থাকে। ক্যামেরাওয়ালা সাজ্জিদ। আমার গাড়িতে চড়ে রওনা দিলাম। গাড়িতে কি নেই !!! এবার্টের গাড়িটা আমার জোশ লাগলো। সবচেয়ে সুন্দর আবার পেছনে একটা ট্রেইলর ও আছে। বাথরুমটাতো আমার বাসার বাথরুম থেকেও সুন্দর। হা হা হা।
ছবি:- এবার্টের হোম ভিহাইকেল এর সামনে আমি।
আমরা প্রথমে যেখানে ক্যাম্প সাইট ঠিক করেছিলাম সেখানে গাড়ি রাখা গেলোনা। গেইট গুলো বেশি নিচু । তাই আবার উল্টা সাইটের মাঠে ক্যাম্প করলাম সে রাতের জন্য। সাজ্জিতের সাথে কথা হলো। আর টুরিস্টরা যে যার মত তাদের গাড়িতে রান্না করে নিল। আমি আর এবার্ট সহ কয়েকজন মিলে বসে নেকস্ট দিনের প্লান করে ফেল্লাম। তার পর ক্যাম্প করে ঘুম। আমার করা সবচেয়ে ঠান্ডা ক্যাম্পিং ছিল ওটা । যশোরে সেরাতে তাপমাত্রা মনেহয় ৩-৪ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছিল। তাবুতে একেবারে জমে গিয়েছিলাম।
ছবি:- আমাদের তাবু। (ছবি ক্রেডিট :- সাজ্জিদ )
ছবি:- আমাদের কফি হচ্ছে। ( ছবি :- সাজ্জিদ )
২৬/০১/২০১৩
---------------------------------------

ছবি:- আমি সকালে তাবু থেকে বের হয়ে কাকের মত শুকনা।
প্রথম গাড়ি ছেড়ে গেলো ম্যাকস এরটা। সে টিমের সবার আগে থাকে। তার গাড়িটা আসলে গাড়িনা। একটা পুরানো আর্মি গাড়ি বা ট্যাংকার। সে ওটাকে মডিফিকেশন করে ক্যাম্পর ভ্যান বানিয়েছে। সবার আড়গে থাকে কারণ তার গাড়িটাকে অন্য গাড়ি গুলো GPS এর মাধ্যমে ট্রেস করতে পারে। যদিও বাংলাদেশি হিসাবে আমাদের আগে উঠে সবার আগে থাকার কথা। আমরা তখন মাত্র ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুচ্ছি।
ছবি:- ম্যাকস এর গাড়ি।

সকালে নাস্তা সেরে আমরা রওনা দিলাম। পথে একটা ক্যারাভান নষ্ট হলো। সেখানে প্রচুর সময় লাগলো। গন্তব্য ফেরি ঘাট। রাতে দেওয়া GPS করডিনেটে ততক্ষনে ১৭টা গাড়ি পৌছে গেছে। আমরা মোটামুটি পুরা একটা ফেরি দখল করে রওনা দিলাম। ফেরিতেই খাওয়া দাওয়া করলাম। বিদেশিদের সাথে আড্ডা চলল। বেটাদের এত্ত প্রশ্ন। বিশেষ করে ক্রিস্টিন আর মোটা করে এক মহিলার .. উফফফ । এটা এরকম কেন ? এটার নাম কি ? ওটা কি। পাগল করে দিল।

ছবি:- ফেরি তে একটা একটা করে ক্যাম্পারভ্যান উঠানো হচ্ছে।
ছবি:- ফেরি থেকে নেমে এ রাস্তায় আমরা একত্র হয়ে একটা ছোট্ট মিটিং করলাম।

শেষে প্রচুর ড্রাইভিং করে আমরা পৌছালাম ঢাকা বোটানিকাল গার্ডেন।  সেখানেই রাতে ক্যাম্প করলাম আমরা।
ছবি:- বোটানিকাল গার্ডেন।
রাতের খাওয়া রান্না করে খাওয়া হলো। এরপর একটু শপিং এ বের হলাম। কারো কারো হাই স্পিড নেট দরকার ছিল তারা হোটেল ফয়সালে গেল ওয়াইফাই ব্যাবহারের জন্য। আড্ডা  হলো এরপর। আর সকালে মেলা কাজ , ঘুরা ঘুরি। তাই ঘুমাতে গেলাম।

২৭/০১/২০১৩
----------------------------------------------
সাকলে উঠে আমরা প্রথমে গেলাম সংসদ ভবন দেখতে। এরপর ঢাকার ব্যাস্ত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে গেলাম সাখারী বাজার। কিছু শপিং হলো । এর পর গেলাম আহসান মন্জিল। তার পর নৌকায় কতক্ষন বুড়িগংঙ্গায় ঘুরলাম আমারা। অনেক্ষন নদীর কালো পানির উপর বোটে চড়ে খেতে গেলাম একটা ভাল রেস্টুরেন্টে।
ছবি:- বুড়িগঙ্গায় আমরা সবাই।
ছবি:- বুড়িগঙ্গা।
খাওয়া দাওয়া শেষে আমরা ছোট্ট একটা প্রেস কন্ফারেন্স এ যোগ দিলাম। এর পর মিরপুরের একটা সুপারস্টোর থেকে খাবার শপিং করে ক্যাম্পে ফেরত গেলাম। 
ছবি:- প্রেস কন্ফারেন্স। ওই যে আমি ...
রাতের রান্না হলো গাড়ি গুলোয় , ধুম পড়ে গেল। খেয়ে দেয়ে ঘুম গেলাম। কাল আবার লম্বা ড্রাইভিং করে চট্রগ্রাম যেতে হবে।

২৮/০১/২০১৩
---------------------------------------------------

সকালে আমরা ২টা নাগাদ সীতাকুন্ড ইকো পার্কের ভেতরে পৌছালাম। ওখানেই ক্যাম্প করলাম। কেউ কেউ ইকো পার্কের ভেতরে হাইকিং এ গেল। আর কেউ কেউ যেতে চাইল জাহাজ ভাংগা শিল্প দেখতে।  তাই আমি গেলাম জাহাজ ভাংগা দেখতে। কারণ ইকো পার্কে ওনেক ঘুরা হয়েছে।
ছবি:- একসময় এটা বিশাল একটা জাহাজ ছিল। এখন কেটে ফেলা হচ্ছে।
ছবি:- দলের সবচেয়ে সিনিয়র দের সাথে আমি আর মেজবাহ।
ছবি:- জাহাজ কাটা শিল্প।
এরপর আমরা রাতে সিতাকুন্ডে ক্যাম্প করে ভোরে চট্রগ্রামে চলে এলাম। আমি অবশ্য সাফায়েত সহ গেস্ট হাউজে ছিলাম। সেরাম মজার ছিল দিনটা।

২৯/০১/২০১৩
---------------------------------------------------------
চট্রগ্রামে আমরা ঘাটি গেড়েছিলাম ফরেস্ট গেইট এর মাঠে। খুবই সুন্দর এবং সিকিউর জায়গা ক্যাম্প করার জন্য। এখানে আমরা দুদিন থাকার প্লান করলাম কারণ একদিন হরতাল দিল বিএনপি ও জামাত। চট্রগ্রামে আমরা প্রথম দিন তেমন কোথাও ঘুরলামনা। লেটাইলাম। কেউ কেউ তাদের গাড়ি পরিস্কার করলো। আমরা আমাদের টেন্ট । আর যাদের গাড়ির পানির ট্যাংক খালি হয়ে গেছিল তারা ভর্তি করে নিল। দুপুরে খেলাম আমরা পেভেলিউন এ। বুফেট। নাক পর্যন্ত খেলাম আমরা। শত হোক বুফেটতো। এরপর এদকি সেদিক ঘুরলাম।
ছবি:- চট্রগ্রামে আমাদের ক্যাম্পসাইটের একাংশ।
ছবি:- ফরেস্ট গেইট মাঠে ক্যাম্পিং। 

৩০/০১/২০১৩
------------------------------------------------------
সকালে আমরা ভোর ৩টায় গেলাম কসাই খানায়। চট্রগ্রামের ফিরিংগি বাজারের কাছেই এই কসাই খানায় প্রতিদিন ৫০-৬০টি গরু জবেহ ও কাটা হয় সেটা ওরা দেখলো। এরপর ফিশারী ঘাটে গিয়ে মাছ দেখলাম। আমি বেশির ভাগ সময়ে ই গাড়িতে ঘুমালাম। গরু কাটা - মাছ দেখা আমরা ভালো লাগেনা। নিত্য ই তো দেখি।
এর পর আমরা সদরঘাট থেকে দুটা বোট ভাড়া করে ইসিন্নার হাট বা সিমেট ক্রসিং পর্যন্ত বোট রাইড দিলাম। উত্তাল কর্ণফুলি নদী আর শুশক দেখায় প্লান ছিল। পথে একটা মাত্র শুশুক দেখলাম। আর প্রছুর বোট , জাহাজ।
ছবি:- ক্যাম্প সাইটে আমি।
ছবি:- কর্ণফুলীতে বোট রাইড।
৩১/০১/২০১৩
--------------------------------------------------------

সকাল সকাল উঠে আমরা কক্সসবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কক্সবাজারের ইনানী বিচে আমরা ক্যাম্প করলাম।
ছবি:- পেছনে ইনানী বিচ। আর ঝাউ বনে আমাদের ক্যাম্প।
ছবি:- ইনানী বিচে সাংবাদিক আর মানুষের জটলা।
আমার কক্সসবাজার আর ইনানি ঘুরলাম। আর পথে হিমছড়ি আর অন্যান্য সব দেখলাম।

০১/০২/২০১৩
----------------------------------------------------
পরদিন ভোরে ভোরে উঠে আমরা বান্দরবান গেলাম। পথে দুলহাজেরায় বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে একটু সাফারিও করলাম।
ছবি:- সাফারি পার্কে। আমি আর সহযাত্রি দুজন দম্পতি।
এরপর আমরা কেরাণীর হাট হয়ে সোজা বান্দরবান গেলাম। কেউ কেউ মেঘালয়াতে ঢুকলো আর বাকিদের গোল্ডেন টেম্পল এর পথ দেখিয়ে আমি গেলাম সাফায়েতের সাথে ক্যাম্প সাইট ঠিক করতে। শেষে ক্যাম্প ঠিক হলো রাংঙ্গুনিয়ার ভেতরে হাছান মাহমুদ ভাই এ বাসার সামনে। ওটাই একমাত্র নিরাপদ ছিল বিদেশীদের জন্য ক্যাম্প। রাতে হাছান মাহমুদ ভাইয়ের বাসায় খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা হলো।
ছবি:- হাছান মাহমুদের বাসার সামনে ক্যাম্প।
আমরা ছোট খাটো একটা হাইকিংএ বের হলাম। এদিক সেদিক হাটা হাটি। ঝিরি পথে ঘুরা।

ছবি:- হাইকিং।
ছবি:- পেন্ট গুটিয়ে সবাই খাল পার হলো।
ছবি:- এভাবে দুতিনবার খাল পর হতে হলো।

হটাত বিদেশিদের সখ জাগলো চাদের গাড়ির ছাদে চড়বে আর আমাকে বলল। তাই বের হয়ে গেলাম চাদের গাড়ি করে। তারা নাকি বান্দরবানের চাদের গাড়িতে চড়ার গল্প অনেক শুনেছে নেটে। 

ছবি:- গাড়ি গুলার নিচে পুরা খালিই ছিল। সবাই ছাদে।
ছবি:- চাদের গাড়ির ছাদ।
০২/০২/২০১৩
---------------------------------------------

সকালে উঠে আমরা রাঙ্গুনিয়া থেকে রাঙ্গা মাটি গেলাম। পথে ফেরি পড়লো। ছোট ছোট ফেরি। একটা ফেরিতে মাত্র দু থেকে তিনটা গাড়ি উঠতে পারে। আর আমিতো জানতামই না এ রুটে ফেরি আছে।
ছবি:- ছোট্ট ফেরিতে ভয়াভহ রাইডের পরে।
আমরা ঘন্টা খানেক পরেই রাঙ্গামাটিতে ক্যাম্প সাইটে চলে আসলাম। সেদিন ক্যাম্প করে বোটে করে কাপতাই লেক , সুভলং ঝর্ণা ঘুরলাম। বাজারে শপিং করলাম। এক দম্পতির আবার আজ বিবাহ বার্ষিকি ছিল। পার্টি হলো , তাই ওয়াইন খোলা হলো। এক চুমুক খেলাম।

ছবি:- রাঙ্গামাটিতে আমাদের ক্যাম্প সাইট। সব গাড়ি দেখা যায় ?

ছবি:- লেকে বোট যাত্রা।

ছবি:- শুভলং আর্মি ক্যাম্প।

৩/০২/২০১৩
---------------------------------------
সকালে আমরা কুমিল্লা চলে আসলাম। প্রথমে নুরজাহান হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি পার্ক করা হলো। কিন্তু পরে আমরা সরিয়ে ক্যাম্প করলাম উপজেলা কমপ্লেক্স এর মাঠে।  কারণ পরপর তিন দিন হরতাল দিল কারা যেন সেসময়।
 কুমিল্লার সব প্লান ভেস্তে গেলো। কারণ ক্যাম্প সাইট থেকে আমরা শেষের দিন রাস্তায় টায়ার পোড়াতে দেখলাম। নিরাপত্তার খাতিরে আমরা পুলিশ এর সহায়তা নিলাম। আর সবাই কে ক্যাম্প ছেড়ে কোথাও যেতে মানা করলাম।
ছবি:- কুমিল্লার ক্যাম্প সাইট।
৪/০২/২০১৩
------------------------------------------

কুমিল্লাতে আমরা কিছুই করতে পারিনি। রান্না , ক্যাম্প আর আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি পুরা তিনটা দিন। একদিন অবশ্য সাইকিলিস্ট বিল্লাহ মামুন দেখা করে গেল। ছোট একটা আড্ডা হলো। উনি আমাদের ছোট খাটো কিছু হেল্প করলো। কুমিল্লার ছেলে বলে রাস্তা ঘাট ভালই চিনত।

৬/০২/২০১৩
------------------------------------------
এতদিন হরতালে আটকে থেকে টুরিস্টরা এত্ত বিরক্ত হলো যে তারা আমাকে বলল যেভাবে হোক তারা ৭ তারিখ বুডিমারি বর্ডার দিয়ে ভারত যেতে চাই। হরতাল থাকুক আর না থাকুক তারা তাদের গাড়ীর ভাঙ্গারর রিস্ক নেবে।
সো আমরা রংপুরের দিকে রওনা দিলাম। সন্ধার কিছু আগে আমরা মহাস্থান গড় পোছালাম। আর মহাস্থান গড় ঘুরে দেখার মত এনার্জি কারই ছিলনা। তাই বাইরে থেকে ছবি তুলে আমরা ক্যাম্প সাইট মশলা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মাঠে ক্যাম্প করলাম। গেটটা এত্ত ছোট ছিল যে একটা গাড়ি ডুকাতে পারলোনা। তাই সেটা গেইটের বাইরেই ক্যাম্প করলো আর আমরা ভেতরে।
ছবি:- সন্ধ্যায় মহাস্থান গড়।
৭/০২/২০১৩
-----------------------------------------------
সকাল সকাল উঠে আমরা বর্ডারের GPS ফাইলটা লিড ক্যারাভানের ড্রাইভারকে দিয়ে সোজা চলে গেলাম বুড়িমারি বর্ডারে। সব কাগজ পত্র গুলো ঠিক করে ওদের বিদায় দিলাম। বিদেশি বন্ধুদের বিদায় দিতে যতনা দু:খ হচ্ছিল তার থেকে বেশি দু:খ হচ্ছিল গাড়ি গুলোকে বিদায় দিতে। ইসস যদি একটা গাড়ি রেখে দেওয়া যেত। হে হে হে।
ছবি:- সারি বদ্ধ ভাবে সব গাড়ি বুড়িমারি জিরো পয়েন্ট-এ।


এভাবে ট্রিপটা শেষ হয়ে গেল।

আমার অন্যান্য লিখা পড়তে পারেন আমার ব্লগে। কিছু লেখার লিংক এখানে দিলাম :- ১/ বান্দরবানে হারিয়ে যাওয়ার গল্প। ২/ ছোট দারগার হাটের সহস্রধারা ঝর্ণায় একদিন। ৩/ ছেঁড়া দ্বীপে ক্যাম্পিং । ৪/ পকেট চুলা কিভাবে বানাবেন ?(হাইকিং এন্ড ক্যাম্পিং গিয়ার)  ইত্যাদি।



৬টি মন্তব্য: