৮ জুল, ২০১৪

রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগান আর রাবার বাগান।

ব্যাপারাটা রাশিক হাফিজ নামে চট্রগ্রামের এক ঘুরুন্চি বালক থেকে শুরু। এ ছেলের সাথে আমার পরিচয় বান্দরবানের এক ট্রিপে।সে এত্ত ঘুরাঘুরি করে যে আমি ভেবে পাইনা সে পরিক্ষা দেয় কখন আর পড়ে কখন। সেটা একটা আশ্চর্য। যা হোক। বান্দরবানের ট্রিপের কয়দিন পরেই দেখি হাফিজ ইউনিভার্সিটি ফাকি দিয়ে বন্ধুদের নিয়ে কোদালা নামে কোথায় যেন গেল। ফেসবুকে ছবি দেখে খুব পছন্দ হলো জায়গাটা।বিশাল এক নদী আর দুরে কালো কালো বিশাল পাহাড়। আর কাছেই চা বাগান। দারুণ লাগলো। প্রশ্ন করতেই সে বলল সজল ভাই এটা খুব কাছেই। রাঙ্গুনিয়াতে তার থেকে ঠিকানা , টিপর্স সব নিয়ে রাখলাম। কিন্তু যাবো যাবো বলে যাওয়া হলোনা। কখন যেন ভুলেই গেলাম প্লেসটার কথা।একদিন সাফায়েত ভাই ফোন দিয়ে বলল সজল তুমি চুয়েটে যাবে ? রিদওয়ান নাকি ওখানে ভর্তি হবে। হটাৎ মাথায় খেলে গেল যে চুয়েট থেকে তো রাঙ্গুনীয়া খুব কাছে!! কোদালা চা বাগানে চলে যাওয়া যাবে। যেই ভাবা সেই কাজ।



১৬/০১/২০১৪
-------------------
শীতের সকাল,যদিও এখন প্রায় ৯টা তবুও চারদিকে কেমন যেন অন্ধকার অন্ধকার।আর ঠান্ডা।হাতের তালু ঘষে গরম করতে করতে জিইসিতে যখন পৌছলাম , দেখি রিদওয়ান ভাই দাড়িয়ে আছে আমাদের জন্য। তাড়া তাড়ি একটা বাসে উঠে পড়লাম।শীতের সকাল গুলো আরামদায়ক হয়। ঠান্ডা ঠান্ডা একটা কেমন যেন। বাসে রিদওয়ান ভাইর কেনা নতুন মোবাইলটা টার্চ করতে করতে কখন যে আমরা কাপ্তাই রাস্তার মাথা চলে আসলাম বুঝতেই পেলামনা। সেখান থেকে লোকাল / শেয়ারর্ড সিএজি নিয়ে সোজা চুয়েট। চুয়েটে ঢুকেই মনটা ভাল হয়ে যায়।পরিবেশটা ভাল .. গাছপালা আর অনেক পাখি এখনো। আর চারদিকে কত কত সুন্দর সুন্দর স্টুডেন্ট। রিদওয়ান ভাইকে আমি আর সাফায়েত পঁচাতে লাগলাম যে বুজি বুজি কেন এত্ত ইউনিভার্সিটি থাকতে চুয়েট ? এখানে সুন্দর সুন্দর তরুণীতে ভর্তি তাই না ?
যা হোক রিদওয়ান ভাই তার কাগজ পত্রের কাজ কর্ম সারতে লাগলো আর আমরা চারদিকে ঘুরে দেখতে লাগলাম। সুন্দরীরা বসে আছে কোথাও গাছের নিচে , কেউ বা পিলারে পা ঝুলিয়ে। তবে বেশির ভাগই সঙ্গী সমেত। বুঝায় যায় চুয়েট ডেটিং এর জন্য ভাল একটা প্লেস। আর আমাদের কেউ প্রশ্ন করলেই আমরা রিদওয়ান ভাইকে দেখিয়ে দিয়ে বলি যে আমরা তার অভিভাবক আর তাকে ভর্তি করাতে এসেছি :পি। মজায় হচ্ছিল। আমরা যখন লোকজনকে প্রশ্ন করতেছিলাম যে আর্কিটেকচার এর বিল্ডিংটা কোনটা সবাই বলতে লাগলো ১১ তলা বিল্ডিংটা হলো আর্কিটেকচারের বিল্ডিং। আমরা হা করে বিল্ডিং গুলো দেখতে দেখতে চললাম , ২ তলা ৩ তলা অনেক বিল্ডিং পড়লো পথে কিন্তু ১১ তলাতো আর কম না । দেখলেই চিনে ফেলবো। কিন্তু যখন ১১ তলা বিল্ডিং খুজে না পেয়ে একজন কে প্রশ্ন করলাম যে ভাই ১১ তলা বিল্ডিং টা কোন দিকে সে সামনের ৩-৪ তলা একটা বিল্ডিং দেখিয়ে দিয়ে বলল এটা ১১ তলা বিল্ডিং। আমরা থ .. পরে বুঝলা বিল্ডিংটা মাত্র ৩-৪ তলা হয়েছে। কিস্তু ফাউন্ডেশন ১১ তলা। বাকি গুলো মনে হয় রিদওয়ান ভাইদের মত নতুন ইন্জিনিয়ারদের জন্য রেখে দিছে।

ছবি:- আর্কিটেকচারের ছেলে পুলেরা এখানে কিছু একটা বানাচ্ছে।
 তো সব কাজ শেষ করে যখন রিদওয়ান ভাই ফ্রি হল তখন প্রায় ১২টা বাজে। চুয়েটের ক্যান্টিনেই আমরা পুড়ি ভাজা , নডুলর্স আর সিঙ্গারা-ছমুচা হাপিস করতে লাগলাম আর স্টুডেন্ট সুডেন্ট ভাব নিয়ে চার পাশ দেখতে লাগলাম।এত্ত খাওয়ার পরও বিল খুব সামান্যই আসলো। আমরা এরপর চুয়েটের একেবারে মেইন গেট থেকেই একটা বাসে উঠলাম সেটা সোজা আমাদের আঁকা-বাকা আর গাছপালা ঘেরা রাস্তা ধরে লিচুবাগান বাজারে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে ২ মিনিট হেঁটেই আমরা ফেরী ঘাটে চলে আসলাম। স্থানীয় এক ভাই বলল যে এখান থেকে দুই ভাবে কোদালা যাওয়া যায়। এক ফেরি করে নদী পার হয়ে এরপর সিএনজি করে কোদালা।এটাই সহজ আর পরিশ্রম ছাড়া।অন্যটা বোটে করে নদী ধরে কিছু দুর এগিয়ে একটা ঘাটে নেমে হেটে হেটে যাওয়া। আমরা বোট যাত্রায় পছন্দ করলাম।ফেরি ঘাটে এসে ফেরিতে বসে বসে বোটের জন্য অপেক্ষা করতে লাহলাম।ফেরির রেলিং এ হেলান দিয়ে নদীর পানি আর দুরের পাহাড় দেখা। মনরম পরিবেশ ছিল।

ছবি:- ফেরি।
বোট এল আর আমাদের যাত্রা শুরু হলো। স্থানিয়দের সাথে গপ্প মারতে মারতে বোট এগিয়ে চলল। আর সাথে মোবাইলের ক্যামেরাও। (ও বলে রাখা ভাল এ যাত্রায় আমাদের কারো সাথে ক্যামেরা ছিলনা। শুধু মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ফিচারটা ছিল। এ পোস্টের বেশির ভাগ ছবি মোবাইলে তোলা। আর দু-তিনটা ছবি হাফিজ ভাইর এলবাম থেকে মেরে দেওয়া।)

ছবি:- বোট যাত্রার যাত্রি সকল।


ছবি:- নদীতে বোট বাধা। (ক্রেডিট:- রাশিক হাফিজ)
বোট থেকে নেমেই আমাদের পদ যাত্রা শুরু হলো। সুন্দর গ্রামের মাঝখান দিয়ে হেটে হেটে আমরা কোদালা চা বাগানের দিকে হেটে যেতে লাগলাম।পথে গ্রামের মেঠো পথ আর ধানের ক্ষেত শীতের দুপুরটাকে আরো সুন্দর করে দিচ্ছিল।
ছবি:- গ্রামের ভেতর দিয়ে সুন্দর একটা রাস্তা।
আমরা লোকজন থেকে প্রশ্ন করে করে এগুচ্ছিলাম। পথে দুইটা ছোট টিলার মাঝে একটা রাস্তার উপর টং এর দোকানে বিশ্রাম নিতে দাড়ালাম। জানতামনা মোড় ঘুরলেই বিস্ময় অপেক্ষা করছে। মোড় ঘুরেই দেখি দুরে ছোট ছোট টিলা/পাহাড় আর চা কাছে ভরা ওগুলো। আর পুর্ব থেকে শুরু হয়ে দুরে পশ্চিমে শেষ হয়েছে।

ছবি:- কোদালা চা-বাগান দুরে। (ছবি:- রাশিক হাফিজ।)

এরপর আমরা হেটে হেটে চা বাগানে ঢুকে পড়লাম প্রথম গার্ড পোস্ট কে পাশ কাটিয়ে। সুন্দর একটা রাস্তা। হাতের বাম পাশে মাত্র কয়েক ফুট দুরে টিলার উপর চা বাগান আর ডান পাশে ফসলের জমি। যেখানে সবুজের চাদর দুর পর্যন্ত বিস্তৃত।

ছবি:- হাতের বামে চা বাগান।
ছবি:-  আর ডানে এরকম ধানের ক্ষেত।
আমরা একে একে অনেক গুলো গার্ড পোস্টকে পাশ কাটিয়ে ঘুরে দেখতে লাগলাম পুরো বাগানটা। বিশাল একটা বাগান। পুরাটা দেখতে ঘন্টা / দেড় ঘন্টা সহজেই লেগে যাবে।
ছবি:- চা পাতা।

ছবি:- বাগানের ভেতরের একটা ছোট পাহাড়ে উঠার চেষ্টা।
ছবি:- উপর থেকে দৃশ্য অনেকটাই এরকম। (ছবি- হাফিজ)
 
ছবি:- টিলা বা পাহাড়ের চাবাগানের ভেতর দিয়ে রাস্তা।
 

ছবি:- বাগানের টিলা।
 এরপর দেখি পথ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সময়ও। কখন যে সময় শেষ হয়ে গেল আমরা টেরই পেলামনা।দ্রুত হাটতে হাটতেই পাশের চা বাগান আর প্রকৃতি দেখে আর ছবি তুলতে লাগলাম। পুরা দিনের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য তখনই দেখলাম। টাইমার দেওয়া হোস পাইপ দিয়ে বৃষ্টির মত করে বাগানের গাছগুলোয় পানি দেওয়া হচ্ছে। সত্যি খুব সুন্দর ছিল দৃশ্যটা।
ছবি:- বাগানের গাছে পানি দেওয়া হচ্ছে।
ছবি:- যত্ন নিয়ে বেড়া উঠা বাগান।
আমরা একসময় একটা রেস্ট ছানি দেখলাম। এটা নামাজ ঘরও। খুবই সুন্দর এ ছানিটা। তিন পাশে তাক তাক করে ছাটা টিলায় চা গাছ আর মাঝখানে ঘরটা। আমরা চা বাগানের গেট কে পাশ কাটিয়ে বিশাল একটা গাছরে ছায়া মাড়িয়ে পাতা থেকে চা তৈরির ফ্যাক্টরির সামনে এসে পড়লাম।
ছবি:- বাগান ঘেরা রেস্ট ছাউনি।

ছবি:- বিশাল গাছটার একাংশ।
হটাৎ আমাদের শখ জাগলো চা খাবো। বাগানের মালীদের প্রশ্ন করতেই বলল এখানে চা পাওয়া যায়না। শুধূ মাত্র বড় সাহেবরা আসলেই চা করা হয়। উপায় না দেখে পাশের ছোট একটা গ্রামে গেলাম। অনেকদিন পর মাটির ঘর দেখলাম। তাও এত্ত বড় বড়। এখানেই পাড়ার দু-চারটা দোকান আছে। সেখানে চা খেয়ে নিলাম আমরা।

ছবি:- চা বাগানের সবচেয়ে কাছের গ্রাম।
ছবি:- বাগানের ভেতরের রাস্তা।
ছবি:- মাটির ঘর।
চায়ের দোকানের ছেলেটাই আমাদের রাবার বাগান আর তৈরির জায়গাটা দেখালো। সে দোকান চালনার পাশাপাশি এখানে পার্ট টাইম কাজ করে। খুবই ভদ্র একটা ছেলে।
ছবি:- রাবার গাছের রস দিয়ে রবার তৈরি হচ্ছে।
ছবি:- শুকোতে দেওয়া রবার।
এরপর আমরা কাছেই একটা স্থানে গেলাম । সাফায়েতের এক পরিচিত জনের বাসায়। হাত মুখ ধুয়ে তাদের অন্তরিক শুভেচ্ছা আর গরম গরম হরেক রকম নস্তা খেয়ে বাড়ীর পথ ধরলাম আমরা। একটু হেটেই বোট ঘাট। বোটে করে নদী পার হলাম। বাজার থেকে লোকাল/শেয়ারড সিএজি নিয়ে চমুহনী নামে একটা বাজারে এসে বাস ধরলাম সোজা জিইসি। অসম্ভব সুন্দর একটা দিনের শেষ হলো। (কিভাবে যাবেন , খরচ কত পড়বে তা নিন্মে লিখা হলো।)

ছবি:- ডিঙ্গি নৈাকায় নদী পারাপার।
ছবি:- সুর্য ডুবছে।
[ নোট:- সুন্দর এ বাগানে যাওয়া একদম সোজা। চট্রগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় থেকে বাসে করে কাপ্তাই রাস্তার মাথায় আসবেন। ৮-১০ টাকা নেবে। এরপর কাপ্তায় রাস্তার মাথা থেকে সিএজি (শেয়ারর্ড) নিয়ে লিচু বাগান। ৫০-৬০ টাকা জন প্রতি। বাসে ৩৮ টাকা। পথে চুয়েট ক্যাম্পাস ঘুরে দেখতে পারেন। লিচু বাগান থেকে সামান্য হেটেই ফেরি ঘাট। বোট নিয়ে যাবে আপনাকে কোদালা চা বাগান যাওয়ার ঘাটে। মাত্র ১০ টাকা নেবে। এরপর শুধুই হাটা। যখন আপনি চা বাগান থেকে বের হয়ে অন্য পাশের ঘাটে আসবেন আবার সেই বোট দিয়ে নদী পার। ৫ টাকা নেবে। শুধু এপার থেকে ও পার। এরপর একটু হেটে বাজারে এসে সিএনজি (শেয়ার্ড) নিয়ে চমুহনি বাজারে আসবেন। ১০ টাকা জন প্রতি। এরপর বাসে জিইসি বা মার্কেট। ৪০-৪৫ টাকা নেবে। ]




৮টি মন্তব্য:

  1. বাগানে ঢুকতে কি অনুমতি প্রয়োজন হয়???

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. না হয় না। শীত কালে আসলে অনেক মজা।আমার বাড়ি রাঙ্গুনিয়া। ঐ খানে আমার নানুর বাড়ি।






      মুছুন
  2. ভাই এডমিন/ভ্লগার।

    আপনি কোন জায়গার মানুষ জানি না। আমাদের রাঙ্গুনিয়ার দৃশ্য শেয়ার করার জন্য আমি আমিরা রাঙ্গুনিয়া বাসিের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

    উত্তরমুছুন