Dec 19, 2013

ভারত ভ্রমণ। পর্ব:- আজমীরের ছোট ছোট পাহাড়ে।


আমি আমার ভারত ভ্রমণ নিয়ে অনেকদিন ধরে পর্ব পর্ব করে লিখে আসছি। প্রতিটি পোস্টের নিচে নোটে বিস্তারিত খরছ , হোটেল , খাওয়া-দাওয়া , গাড়ী ভাড়া ও অন্যান্য জিনিস লিখায় তুলে ধরার চেষ্টা করছি,যাতে পরে কেউ যেতে চাইলে আমার ব্লগ পোস্টটি সাহায্যে আসে আর সব প্লান করে যেতে পারে। আগের পর্বে কোলকাতা , দিল্লী , আগ্রা এবং জয়পুর নিয়ে লিখেছিলাম। এ পর্বে আজমীর নিয়ে লিখলাম।

০৪-১২-২০১২

সকালে ৯টার দিকে হোটেল থেকে চেক আউট করে জয়পুর সেন্ট্রাল বাস স্টেশানে এসে বসলাম। প্রতি ১৫ মিনিট পর পরই আজমীরের জন্য বাস ছাড়ে। তাই টিকিট কাটতে কোন ঝামেলা হলোনা। তারপরেও আমি একঘন্টা পরের বাসের টিকিট কাটলাম। তাড়াহুড়া আর ভালো লাগতেছিলনা। এই কতদিন তো ইন্ডিয়ার ভতেরে অনেক দৌড়াদুড়ি করলাম। তাই রিলাক্স ভাবে এ এক ঘন্টা আবার জয়পুরের এদিক সেদিক হাটতে লাগলাম।কয়েকটা সুপার মার্কেটে টু মারলাম এরপর সিনেমা হল গুলাতে টিকিট প্রাইজ কেমন তা দেখলাম। জয়পুর শহরটা খুব ভালো লাগে আমার , কেন কেই বা জানে ? শহরটা সুন্দর আর পরিস্কার। তাই হয়তো।

ছবি:- জয়পুরের একটা ছোট্ট মার্কেট।
ছবি:- রাস্তায় কবুতরের খাওয়া-দাওয়া।
  একসময় বাসে উঠলাম। বাস ছাড়লো। বিশাল হাইওয়ে দিয়ে কতক্ষন চলল এরপর কিছু গ্রামের ভেতর দিয়ে চলা শুরু করলো। আমার কাছে বাংলাদেশের গ্রাম গুলোই সবচেয়ে সুন্দর লাগে। এগুলো কেমন কেমন যেন শুকনো মুরুউদ্যানের মত  ছড়িয়ে ছিটিয়ে। অবশেষে আমি আজমীরের বাস স্টেন্ডে নামলাম।  সেখান থেকে একটা বেবি টেক্সি নিয়ে সোজা দরগা বা আজমীর শরীফের মূল মাজারের মেইন গেইটের সামনে নামলাম। এখন হোটেল খুজতে হবে। সে এক যুদ্ধ। আমাকে নিয়ে মুটামুটি টানাটানি পড়ে গেল। এ টান দিয়ে বলে ভাই আমার হোটেলে উঠেন। আরেকজন বলে ভাই আমারটাই উঠেন। শেষ মেষ অনেক দামাদামি করে হোটেল ইকবাল এর ৫ তলার একটা রুম নিলাম। খুব অল্প খরচে। সিড়ি দিয়ে একবার পাঁচ তলা উঠার পর মনে হতে লাগলো এত উপরে উঠতে নামতেইতো আমার জান বের হয়ে যাবে। মুখ হাত ধুয়ে , রেস্ট নিয়ে একেবারের জন্য বের হলাম যাতে মাজারে জিয়ারত করে , ঘুরে এবং খাওয়া দাওয়া করে তারপর একেবারে এই পাঁচ তলায় উঠতে হয় রাতে ঘুমানোর জন্য। প্রথমে মাজারে গেলাম , ভেতরে অনেক্ষণ কাউয়ালী শুনলাম। তার পরে আশপাশে ঘুরলাম আর একটু ফুড সাফারী করলাম। আজমিরে অনেক রকম বিরানি আর রুটি পাওয়া যায়। সে রাতের কিছু ছবি নিচে দিলাম।

ছবি:- মূল গেইট।
ছবি:- গুম্বুজ।
ছবি:- কাউয়ালী।
রাতে বেশ ভালই খেলাম। বিশাল বিশাল ৩টা রুটি (আমরা যেটাকে নানরুটি বলি) খাসির মাংস ভুনা আর সুপ। খেয়ে সেই পাঁচতলা বেয়ে উঠে ঘুমাতে গেলাম। রাতে প্রচন্ড গোলাগুলির আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে হোটেলের ছাদে উঠে দেখি বাচ্চারা পটকা আর আতসবাজি ফুটাচ্ছে। মহরমের উৎসব। সেদিন অনেক রাতে পর্যন্ত অচেনা এক শহরের একটা হোটেলের ছাদে কাটিয়ে দিলাম একা একা। ভোরের দিকে ঘুমাতে গেলাম। আগামীকাল সকালে উঠে আমাকে জিপে করে সরওয়ার শরীফ যেতে হবে। এরপর তারাগড় এর পাহাড়ে উঠতে হবে। মেলা কাজ।  

[নোট:- জয়পুর থেকে খুব সহজে আজমীরের বাস পাওয়া যায়। সরকারি বাস আমার খুব আরামেরই মনে হয়েছে। টিকিট মাত্র ১৩৫ রুপির মত ছিল। পথে একবার ধাবা মত একটা স্থানে বাস দাড়ায়। চৈকিতে বসে খেতে হয়। রাস্তাটাও খুব ভালো। আজমীরের মাজারের খুব কাছে অনেক হোটেল আছে। অনেক। শুধু দামাদামী করতে হবে। সিঙ্গেল বেডের রুম ২৫০-৩০০ এর মধ্যে পেয়ে যাবেন। বেশির ভাগ রুমেই হট ওয়াটার শাওয়ার আছে। ভাল সার্ভিস। মাজারে জুতা রাখার জন্য বাইরে ২ রুপির মত দিতে হয়ে। অনেককে দেখি খালি পায়ে যায় বা পলিথিনে করে জুতা নিয়ে নেয় সাথে। মাজারে কাউয়ালী দেখা বা শুনা ফ্রি। কোন টাকা দিতে হয়না। মাজারের কোথাও কোন টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলকনা। আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। আর আজমীরে খাওয়া দাওয়া পেতে সমস্যা না। পারলে কোনটা ছেড়ে কোনটা খাবেন দিশ পাবেননা। রাস্তা আর গলি গুলো খাবারের গন্ধে মম করে। যাস্ট দামটা একটু বেশিই মনে হয়েছে আমার কাছে।

আমি আমার ভারত ভ্রমণের গল্প পর্ব পর্ব করে লিখে যাচ্ছি। প্রথম পর্বে লিখেছিলাম কোলকাতা নিয়ে , পড়তে এখানে Click করুন দ্বীতীয় পর্বে লিখেছিলাম দিল্লি নিয়ে , পড়তে এখানে Click করুন। তৃতীয় পর্বে আগ্রা নিয়ে লিখেছিলাম , পড়তে এখানে Click করুনচতুর্থ পর্ব লিখেছিলাম জয়পুর নিয়ে , পড়তে এখানে Click করুণ। 

আমার প্রতিটা পর্বেই আমি বাজেট , খরচ , হোটেল ভারা ইত্যাদি নিয়ে লিখেছি বিস্তারিত যাতে পরবর্তিতে পাঠকরা ভারত গেলে সব প্লান করে যেতে পারে। ]

০৫-১২-২০১৩

সকালে উঠে প্রথমে নাস্তা সেরে জিপ ভাড়া করতে গেলাম। রিজার্ভ নেওয়ার দরকার নেই। লোকাল যায়। প্রথম যাত্রা সরওয়ার শরীফ। ১৫০ রুপি আসা এবং যাওয়া নিল। রাস্তাটা অসাধারণ ছিল। মেরু এরিয়ার মত। দুই পাশে খা খা মাঠ আর বালু। হয়তো কিছু দুরে দু একটা গ্রাম আছে। এখানকার মাল পত্র বহন করার জন্য এখনো মানুষ গাধা আর ঘোড়ার উপর নির্ভর করে থাকে।
ছবি:- বালু নিয়ে যাচ্ছে গাধার মাধ্যমে।
ছবি:- এই আমাদের জিপ।
ছবি:-  রাজস্থানের রাস্তা।
ছবি:- যেদিকে তাকাই খালি ন্যাড়া পাহাড় আর পাহাড়।
একসময় আমরা সরওয়ার শরীফ এসে গেলাম। প্রায় ১.৫ ঘন্টার মত লাগছিল। পথে গাড়ি নষ্ট হয়েছিল তাই। আমার বরাবরই মাজারের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিলনা। তাই জিয়ারত করে আশপাশ ঘুরতে লাগলাম। চারদিকে এত্ত পাহাড় কিন্ত মন কাড়েনা। কারণ এগুলো আমাদের বান্দরবানের পাহাড়ের মত সবুজ না। ধুসর কালারের কেমন যেন শুকনো শুকনো। ন্যাড়া। এরথেকে আমার এখানকার বাড়ি গুলো দারুণ লাগলো। পাহাড়ের উপর বেশিরভাগ বাড়ীই একতলার। আর ছাদটা রেলিং দেওয়া খুপড়ির মত। আর আশে পাশে অনেক দুর্গ মত বাড়ি ঘর আছে।
ছবি:- পাহাড়ের উপর বাড়ীঘর।
ছবি:- ভাংগা দুর্গের একাংশ।
এরপর জিপওয়ালা ডাক দিল। এখন চলে যেতে হবে। আমরা সেই একই পথ ধরে আজমীরে ফেরত আসলাম। আমি কিছু পাওরুটি আর বাটার কিনলাম। পানির একটা বোতল নিয়ে আজমীর শরীফের উপরের পাহাড়টা বাওয়া শুরু করলাম। সহজ ট্রেইল। বেশির ভাগ অংশে রাস্তাই করা আছে। ট্রেইলটা অসাধারণ ছিল।পথে দেখলাম উট আর গাধা রাখা আছে ভার বহণ আর চড়ার জন্য। আমি আমার পায়ের উপর ভরসা করেই এগিয়ে চললাম। ট্রেইলের একেবারে শেষের দিকে একটা পুরাণ দুর্গ মত পড়লো।
ছবি:- উট।
ছবি:- উঠার রাস্তায় দোকান ।
ছবি:- দুর্গের একটা রাস্তা।
ছবি:- দুর্গের দেওয়ালে লিখে একিবারে শেষ করে ফেলছে।
ছবি:- নিচে আনার সাগর/লেক পাশেই আজমীর শহর।
ছবি:- আর উপরে আমি। :পি
ছবি:- কুয়াশায় আচ্ছন্ন পাহাড়।
চারিদিক দেখে যখন উপরে চলে আসলাম তখন দেখি সকালের জিপওয়ালা বসে বসে চা খাচ্ছে। উপরে। সেও আমাকে চিনলো। যেন আমরা বন্ধু। কথা বার্তা হলো। জানালো তার জিপে একটা সিট খালি আছে। তাই নিচে তার জিপ দিয়েই নামবো।বাকি যাত্রীরা আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ছবি:- টেস্ট ড্রাইভ করতেছিলাম আমি। :P
নিচে নামার রাস্তাটা সেইরকম খাড়া। পাশে গভীর খাদ। অনেক বয়স্কদের দেখলেম ভয়ে কুকড়ে আছে দোয়া দুরুদ পড়ছে। আমি সাহস করে ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলাম ভাই এখানে দুর্ঘটনা ঘটেনা মনে হয়?। সে ভুরু কুচকে তাকিয়ে বলল কিউ ? আকসার হোতাহে ... কুচ মাইনে পেহেলে এক জিপ নিচে গিড় গ্যেয়া থা।  আমার মুখ থেকেও তখন দোয়া দুরুদ বের হওয়া শুরু হলো অটোমেটিকালি। নিচে নেমে নাস্তা সারতে গেলাম। সেদিন মনে হয় আর ভাত খাইনি। একবেলাও। হোটেলে গিয়ে রেস্ট নিলাম। ছাদে বসে বসে আজমীর শহরটা দেখলাম।
ছবি:- ব্যাস্ত আজমীর।
ছবি:- ছাদ থেকে।
অনেক্ষণ রেস্ট নিয়ে নিচে নামলাম। ট্রেনের টিকিট কাটতে হবে। ভারতের অন্য কোন শহর ঘুরতে হবে । মেলা কাজ। সে গল্প পরের পর্বে বলবো। 
[ নোট:- দরগা শরীফের উল্টো দিকের গেটের গলির পর যে বাজারটা পরে সেখানে জিপ পাওয়া যায়। সরওয়ার শরীফের জন্য আসা-যাওয়া ১৫০ রুপি। আর তারাগড় উঠা-নামা ৫০ রুপি। তারাগড় চাইলে হেটেও উঠা যায়। কোন মাজারেই ফুল দেওয়া বা টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক না। তাই দিলে ইচ্ছা। না দিলে নাই। ]
  ৩/ ক্যাম্পারভ্যানে নিজের দেশ ঘুরা দেখা।   ৪/সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং। ৫/ ছেঁড়া দ্বীপে ক্যাম্পিং ।

3 comments: