এই পোস্টের শিরনাম
দেখে হয়তো অনেকে ভেবে বসেছেন,এই লোকগুলো এত গরিব বা কিপ্টা কেন ? !!।হেটে হেটে ৮০
কি:মি: রাস্তা পাড়ি দিয়ে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার এসেছে!... ব্যাপারটা
কিন্তু অন্য। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের বা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা সমুদ্র
সৈকতে হেটে বেড়ানো। “ভ্রমণ বাংলাদেশ”
নামের একটা গ্রুপ প্রতি বছর এ ট্রিপ বা হাটা-হাটির আয়োজন করে। ইভেন্টের নাম হয় “স্বপ্নের
সৈকতে একে যায় পদচিহ্ন” । টেকনাফ থেকে ট্রেকিং করে আমরা ৮০
কি:মি: দুরের কক্সবাজারে যাবো। পথে দুবার ক্যাম্পিং আর বারবিকিউ। প্রায় দুই বছর পর আমার
সে ভ্রমণের গল্পটা লিখেই ফেল্লাম, পড়ে দেখতে পারেন :-
[ প্রথমেই বলে রাখি ,
আমার সে ট্রিপে কোন ক্যামেরা ছিলনা। তাই বেশির ভাগ ছবি মোবাইলে তোলা। তাই
কোয়ালিটির জন্য আমি খুবই দ:খিত । আর কিছু কোয়ালিটির ছবি “মাহিদ
জনি” ভাইয়ের বিশাল ডিএসএলআর ক্যামেরায় তোলা। আর কিছু ছবি ওই
ট্রিপের কোন কেউ গ্রুপের ওয়ালে পোস্ট দিয়েছিল হয়তো , সেখান থেকে চুরি করেছি,তাই
নাম ভুলে যাওয়াই তাদের নামটা দিতে পারলামনা। সরি ।]
২২/১২/২০১১
----------------------------------------------
আমাদের
আগে কোন টিকেট কাটা ছিলনা। ঢাকা থেকে যারা আসবেন তারা আজ রাতের বাস ধরবেন।
চট্রগ্রাম থেকে সব আয়োজন করছেন জাফর ভাই। আমি দুপুরের ভাত খেয়েই জাফর ভাইয়ের বাসায়
চলে এলাম। সেখান থেকে একটা রিক্মা নিয়ে উনি আর আমি রওনা দিলাম বহদ্দারহাট জিয়া
পার্কের সামনে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন গোতম দা আর জুমন। গোতম দার ব্যাগ থেকে উনার
টেন্টের/তাবুর ব্যাগের সাইজই বিশাল ছিল। আমরা চারজন এরপর বাস টারমিনালে গেলাম।
কিন্তু তখনো তিনজন মিসিং চন্দন ভাই , মামুন ভাই আর ফয়সাল ভাই। মামুন ভাই আসার পর
পরই টিকিট কেটে ফেলা হলো। চন্দন ভাই তার ১৫০ সিসির বাইক নিয়ে আসলো ঠিকই , কিন্তু
পল্টি দিল। উনি শেষ মুহুত্বে যাচ্ছেন না অফিসের কি এক ঝামেলার কারণে। আমার মনটা
খারাপ হয়ে গেল , এ ট্রিপটা আমি পুরা চন্দন ভাইয়ের উপর নির্ভর করে যাচ্ছিলাম। উনিই
আমার নাম এ ট্রিপে শেষ মুহুত্বে যুক্ত করেছিলেন। যা হোক যাত্রা শুরু হলো। আরেক জন
আমাদের “লেট মুবারক” ফয়সাল ভাইয়ের জন্য আমাদের বাসকে ১৫
মিনিট দাড়িয়ে থাকতে হলো নতুন ব্রিজের মোড়ে। উনি এত্ত লেট ...
যাত্রাটা খুবই মজার
ছিল। আমি আম্মার হাতে বানানো পিঠা নিয়ে গেসিলাম সেটা খেয়ে যাফর ভাইয়ের ছোট্ট
স্পিকারে গান শুনতে শুনতে চলতে লাগলাম। জাফর ভাই এক চিজ ... সে এক পোর্টেবল
স্পিকার নিয়ে গেছিলেন .. সেটাই গান চলতেছিল.. গানের আগা মাথা অবশ্য আমি
বুজতেছিলামনা কারণ মেমোরি কার্ডটা ছিল বাসের নাম না জানা এক লুঙ্গী পড়া যাত্রির।
উখিয়ার পর বাসের
যাত্রাটা অনেকটা রোলার কোস্টার টাইপের যাত্রায় পরিণত হলো। মাথায় দুতিনটা বাড়ী খেয়ে
শেষ-মেষ টেকনাফ যখন পৌছালাম তখন রাতের ৯টা। নাফ কুইন নামক একটা হোটেলে চেক ইন
করলাম। স্থানীয় ভর্তা দিয়ে ভাত খেলাম আর সারারাত আড্ডা আর জাফর ভাইয়ের বাদরামী
দেখে না ঘুমিয়ে কাটালাম।
২৩/১২/২০১১
----------------------------------------------------------
সকালে মোটা মুটি
ভোরেই উঠলাম , যদিও রাতে ঘুমাতে পারিনি জাফর সাহেবের বাদরামীর কারণে আমরা কেউই। উঠে
ব্যাগ গুছিয়ে রাখলাম আমরা। সাথে যে ব্যাগ নেব তা নিয়ে বাকি ব্যাগ গুলো রেখে যাবো
হোটেলে। মোনা ভাইদের বাস লেট। তাই উনারা আমাদের হোটেলের ফ্রেশরুম গুলো ব্যাবহার
করে নাস্তা করে তারপর রওনা দেবে।
ছবি:- হোটেলের লবিতে আমাদের প্রস্তুতি। |
আমরা আগেই শুরু করে
দিলাম হাটা। ঢাকার টিমের সাথে আমাদের সন্ধ্যায় ক্যাম্প সাইটে দেখা হবে। ক্যাম্প
সাইট এখান থেকে প্রায় ৩৫ কি:মি দুরে। আমাদের সাথে কক্সবাজার থেকে সিএজি নিয়ে এসে
যুক্ত হলো আশরাফুল (টুরিস্ট আশরাফুল :পি )। আর টেকনাফ থেকে যুক্ত হলো হাসান রকিব
ভাই আর তার দল।আমাদের যাত্রা শুরু হলো টেকনাফ সৈকত থেকে। অভিজ্ঞ ফয়সাল ভাই কিছু
ট্রিকস এন্ড টিপ বাতলে দিলো । জাফর ভাই আর জুমন ভাই কিছু বাজার-সদাই করলো আমাদের
দুপুরের খাবারের জন্য। তার পর হাটা শুরু।
ছবি:- টেকনাফ এর সৈকতে আমাদের টিমের একাংশ। |
এরপর আমরা হাটসি তো
খালি হাটসিই। একপাশে সমুদ্র অন্যপাশে পাহাড়। দারুন এক অনুভুতি। কখনো দুরে দেখা যায়
বালুর উপর আমাদের জন্য কে যেন লাল গালিচা পেতে রাখছে , কিন্তু এগিয়ে গেলেই দেখা
যায় গালিচাটা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এ যেন মুরু বালির সমুদ্রে মরিচিকা। পরে বুঝলাম
এগুলো লাল কাকড়ার দল। কখনো ছোট ছোট খাল পাড়ি দিতে হচ্ছে কখনো সমুদ্রের জোয়ারের
মধ্যে দিয়ে হাটতে হচ্ছে ।এরকম মজার মজার প্রকৃতি দেকে দেকে আমরা এগিয়ে চললাম।
ছবি : - লাল কাকড়া। |
ছবি :- এভাবেই হেটে চলা। |
ছবি :- টেকনাফের পাহাড়। |
ছবি:- চিফ শেফ রান্নায় ব্যাস্ত। |
ছবি:- গৌতমদা খাবারের অপেক্ষায় ছাউনিতে বসা। |
খাবার শেষে আবার আমরা
রওনা দিলাম। রাত হয়ে গেলে বাহার ছড়া ইউনিয়ন পরিষধ এর ক্যাম্প খুজে পেতে কষ্ট হবে। তাই
সবাই দ্রুত পা চালাল। হাটতে হাটতে ছবি তুললাম অনেক। মোবাইল দিয়ে।
ছবি:- বীচ আর ঝাউবনের মাঝে। |
ছবি:- বাহার ছড়ার কোন এক গ্রামে গ্রামিন দৃশ্য। |
এরপর আমাদের যে ভয়
ছিল সেটায় হলো । পথ নিয়ে দ্বীধা তৈরি হলো। কেউ বলে আমরা ক্যাম্পসাইট ফেলে এসেছি
কেউ বলে আরো সামনে। আমাদের হাতে একটায় সুত্র ছিল দুটা মোবাইল টাওয়ার পরপর থাকে এমন
একটা জায়গায় ডান দিকে গেলেই ক্যাম্পসাইট। কিন্তু আমরা ভুল টাওয়ারের পথ ধরেছিলাম।
রাত হলো আমরা পথ হারালাম। কিন্তু টুটুল ভাই আর মনা ভাইরা গাড়ি সে পথ দিয়ে
যাচ্ছিলেন ক্যাম্পে। আমাদের রাস্তায় তুলে নিলেন।
ছবি:- সেই ভুল টাউয়ার। |
ছবি:- চায়ের দোকানে আড্ডা। |
ছবি:- এই সেই জিলাপি। |
রাতে খুব মজার খিচুড়ি
রান্না হলো। আরাম করে খেয়ে নিয়ে আমরা ক্যাম্প ফায়ার করে অনেক্ষন গল্প করলাম ,
দাড়িয়ে দাড়িয়ে।
ছবি:- ক্যাম্প ফায়ার। |
রাতে আমি আজও ঘুমাতে
পরলামনা। কারণ আমার পাশেই ছিল আশরাফুল। সে কোন স্লিপিং ব্যাগ , চাদর কিছুই আনেনি।
ছোট ছেলে বলে আমার স্লিপিং ব্যাগ , চাদর ওকে দিয়ে আমি খালি ফ্লোরে শুয়ে গেলাম। এ
ঠান্ডায় এক ফোটাও ঘুম যেতে পারিনি। আর বেটা আশরাফুল নাক ডেকে ঘুমালো।
২৪ /১২/২০১১
--------------------------------------------
সকালে নাস্তা হলো
রাতের বেচে যাওয়া খিচুড়ি দিয়ে। বাসি জিনিসের স্বাদ অনেক সময় বেশি হয়। কথার সত্যতা
পেলাম। সবাইকে প্যাক করে দুপুরের আর হাটার সময় খাওয়ার জন্য নাস্তা দেওয়া হলো।
প্যাকেট খুলে দেখি খেজুর , আপেল সহ নানা খাবার। আমাকে কেন যানি মনা ভাই এক প্যাকেট
খেজুর বেশি দিল। লোকটা আমাকে কেন যানি স্নেহের চোখে দেখতো।
সবাই ছবি তোলাতে
ব্যাস্ত হয়ে গেল। যখন গ্রুপ ছবি তোলার সময় আসলো তখন সবাই ভাল পজিশনের জন্য জায়গা
খুজতে লাগলো। আমি মোটা মানুষ এত্ত মানুষের ভিড়ে জায়গা না পেয়ে ইমন ( এহসান ইমন )
ভাইয়ের মাথর উপর দিয়ে গিয়ে সিড়িতে টুপ করে বসে গেলাম।
ছবি:- গ্রুপ ফটো। |
ছবি তোলা শেষে আবার
যাত্রা শুরু এবার আমাদের গন্তব্য ইনানী বচি। সেখানে ক্যাম্প সাইটে তাবু খাটিয়ে
একটা সেই ঘুম দেওয়ার প্লান আমাদের। হাটা শুরু আবার।
ছবি:- এই রাস্তা দিয়ে শীতের সকালে যাত্রা শুরু। |
ছবি:- সবাই হাটছে। |
একসময় আমি কেমনে যানি
দল ছুট হয়ে গেলাম। দেখা গেল আমি আর জনি ভাই ছাড়া আমাদের আগে পিছে কেউরে দেখা
যাচ্ছেনা। তাই আমরা দুজনেই যাত্রা চালিয়ে যেতে লাগলাম। পথে উনি আমার দারুন দারুন
কিছু ছবি তুলে দিলেন। চায়ের দোকানে চা খেলাম।
ছবি:- আমি ঝাউ বনের বালুর শহরে। |
ছবি:- আমি জ্যাক স্প্যারো স্টাইলে। :পি |
আমি আর জনি ভাই হেটে
হেটে এগুতে লাগলাম। ছবি তুলি আর একটু এগুই। কত খাল , কত রাস্তা যে সেদিন পাড়ি
দিসি... তার হিসাব নাই।
ছবি:- নৌকা। |
শেষ মেষ রাতের মনেহয় ৮টার
সময় আমরা ক্যাম্প সাইটে এলাম। এসে দেখি আমরাই শুধু পথ হারাইনি অনেকেই। আমরা মনেহয়
৩ নং টিম ছিলাম। আমাদের পরে আরো বহু টিম আসলো। সবার অবস্থা কাহিল কিন্তু মুখে
হাসি। রাতে আড্ডা হলো। বারবিকিউ আর ভাত রান্না হলো। সেই খাওয়াদাওয়া। তারপর আড্ডা
আর বিশাল একটা ক্যাম্প ফায়ার টুটুল ভাইয়ের কেরসিন তেল চুরি করে। পুরা বোতল খালি
করে ফেলা হয়েছিল। যা ওরা সকালে নাস্তার আগুন ধরাবার কাছে রেখেছিল। সব জাফর ভাইয়ের
দোষ। আমি কিস্সু করি নাই।
ছবি :- বারবিকিউ। |
২৫/১২/২০১১
------------------------------------------------------
রাতে সে একটা
ঘুমদিলাম। তাবুর ভেতরে সমুদ্রের আওয়াজ শুনতে শুনতে। সকালে তাবুর ভেতর থেকে বের হয়ে
দেখি চারদিকে কুয়াশা। আর তাবু পুরা ভেজা।
ছবি:- আমি। গুড মরনিং এ। |
তাবু থেকে বের হয়ে এর
ফ্লাপ বা ওয়াটার কাভারটা শুকাতে দিলাম আর চারদিকে তাকিয়ে দেখি কি সুন্দর একটা স্থানে
আমরা ঘুমিয়েছি কাল রাতে।
ছবি:- পুরা ক্যাম্প সাইট। |
ছবি:- পুরা ক্যাম্প সাইট। |
সকালের নাস্তা সেরে
আবার হাটা শুরু। সুন্দর সুন্দর পথ দেখে দেখে। আর আজই ট্রিপের শেষ দিন। “জনি”
ভাই আজও কিছু ছবি তুলে দিল আমার।
ছবি:- আমি হিম ছড়ির কাছে কোথাও। |
ছবি:-কোন এক ইকো রিসোর্ট এর সামনে। |
হিম ছড়ির পর কেউ কেউ
হেটে হেটে কক্সবাজার গেলেও আমরা একটা জিপ ভাড়া করে ফেল্লাম। আমি , জনি ভাই , রাকিব
ভাই সহ আরো দু-একজন। তারপর কক্সবাজারের কলাতলী বীচ থেকে হেটে হেটে লাবনী বীচ তারপর
সোজা ভ্রমণবাংলাদেশের রিজার্ভ করা হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে জাফর ভাইদের সাথে বাসে চড়ে
চট্রগ্রাম। রাতের ১ টার ভেতরে আমি সোজা বাসায়।
[নোট :- আপনি নিশ্চয়
চাচ্ছেন এরকম একটা ট্রিপে যেতে ? তাহলে “ভ্রমণবাংলাদেশ”
গ্রুপটার সাথে যোগাযোগ করতে পারনে। তারা প্রত্যেক বছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর এর
ভেতরে এ ভ্রমণটার আয়োজন করে। তাদের ফেসবুক পেজে এবং গ্রুপে এ ইভেন্টার বিস্তারিত
পাবেন। এছাড়া চট্রগ্রাম থেকে “এডভেন্চার ক্লাব অব চিটাগং”
এর “বীচভেন্চার” নামেও এ বছর থেকে এ ট্রিপের আয়োজন
করছে। ]
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনamar Bangla e atto kharap.... ar english dila tohh... ahem ahem.
মুছুনযাওয়ার ইচ্ছে আছে এখানে
উত্তরমুছুনফেসবুকে ভ্রমণ বাংলাদেশের ইভেন্ট দেওয়া আছে। যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।
মুছুনভ্রমণ বাংলাদেশের ফেসবুক গ্রুপ এর লিংক দিতে পারবেন?
উত্তরমুছুনhttps://m.facebook.com/groups/189085697781385?refid=27
মুছুন