বাংলাদেশের
বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্পিং করতেছি আজ অনেকদিন।তাবুতে থাকা,জংঙ্গলে রান্নাবান্না করে
খাওয়া,তাবুর ভেতরে ঘুমের ভান করা।প্রথম প্রথম খুব উত্তেজনা লাগতো।ক্যাম্পিং এর
আগের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত,খালি ভাবতাম কখন সকাল হবে, গ্রুপের সাথে দেখা হবে।বাস
ধরে হাইকিং করে ক্যাম্পসাইটে চলে যাবো। এ রান্না করবো , সেই রান্না করবো।সেরম একটা
ক্যাম্পিং করবো।গ্রুপের সাথে ঘুরার মজাই আলাদা।সেফটি বেশি , কাজ কম। তেমনি একা
একা ঘুরার মজাও আলাদা , সেফটি একটু কম আর মেলা কাজ ..
একা
একা কিছু ট্রাভেলিং করলেও কখনো একা ক্যাম্পিং করা হয়নি।সাহস হয়নি হয়তো। সবসময় তো
গ্রুপের সাথেই চলি।প্রথম তাবু কিনি অটো-পপআপ তাবু।চন্দন ভাইয়ের সহায়তায়।সেই সুদুর
ঢাকা থেকে।সুদুর বলতেই হয়।যখন প্রথম তাবু কিনি তখন এখনকার মত এত সহজে তাবু বা
ট্রাভেল গিয়ার পাওয়া যেতনা।বহুত কসরত করে একটা গিয়ার কিনতে হতো। এখনতো পিক৬৯ এর
ওয়েব সাইটে ঢুকে ২-৪টা ক্লিক করলেই জিনিস ঘরে চলে আসে।
হা
বাকি সবার মত আমিও প্রথমে প্রথমে ঘরে বলিনি যে আমি জঙ্গলে বা পাহাড়ে গিয়ে কি কি
করি। তাবুতে ভয়ংকর ভয়ংকর প্লেসে রাত কাটায়। হোকনা সেটা গ্রুপের সাথে।আম্মু প্রশ্ন
করলে বলতাম “এইতো বন্ধুর বাসায় দাওয়াত আছে।দু-একদিন
ঘরে আসবোনা।“ একদিন বাসায় কম্পিউটারে পুরান একটা
ট্রিপের ছবি দেখতেছি। এ ট্রিপে একাই ছিলাম। রিজভী নামে এক ভাই ঢাকা থেকে আসবে বলে
পল্টি দিল। তাই একা গেলাম , ফ্লাস ফ্লাডে পরে সেই অবস্থ। আম্মা কেমনে যেন ছবি গুলা
দেখে ফেলল। সেই চিল্লা চিল্লি। তুই এসব কি করছ। এতো ভয়ংকর জায়গায় যাস ... আবার
থাকসও!! আমি হাসি দিয়ে সেদিন বেঁচে গেলাম। এখন ফ্যামিলিতে ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেছে।
সবাই মেনে নিছে। হয়তো আব্বা আম্মা এখন মনে মনে বলে “আমাদের
ছেলেটা গেছে।জংগলে যায় যায় পুরা গেছে। কি পায় বেটা ঐ পাহাড়ে ?”
এ
পর্বে আমি আমার একটা একা একা ক্যাম্পিং এর গল্প বলবো।আমি প্রথম একা ক্যাম্পিং করার
প্লান করি বান্দরবানে।ফেসবুকে “জিনিয়াস ক্রো” নামে এক ভাইয়ের একা একা ক্যাম্পিং এর ছবি দেখে এ জিনিস মাথার
মধ্যে ঢুকে যায়। কিন্তু সাহসের অভাবে হয়নি হয়তো। কিন্তু এরপরে মীরসরাইয়ে , তারুয়া
দ্বীপে আর বাসার পাশে ম্যানগ্রোভে একা একা ক্যাম্প করি। এতক্ষন অনেক কাহিনি করে
ফেল্লাম। এখন মুল গল্পে আসি:-
২৬-১২-২০১৩
---------------------------
আগামীকাল
সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কোন প্লান নেই। হটাত মাথায় আসলো , বাসার এত্ত কাছে এত্ত
সুন্দর একটা বিচ আছে , ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট আছে। আগে (২০১১ সালে)এ্যাডভেন্চার ক্লাব
অব চিটাগং এর সাথে ক্যাম্পিং এবং বারবিকিউ করলেও কখনো এ ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে
ক্যাম্প করিনি। এ ফরেস্ট আমার খুব পরিচিত। ছোট বেলা থেকে এর সাথে আমার বন্ধুত্ব।স্কুল
পালিয়ে আমার কাট্রলীর ছেলেরা এ বনেই বসে থাকতাম। ক্রিকেট খেলতাম। নতুন বান্ধবী
পেলেও অনেকে এ বনেই ঘুরতে আসে। কিন্তু কোন এক আশ্চর্য কারণে বনের উত্তর কাট্রলীর এ
অংশে টুরিস্ট বা মানুষের এত একটা যাতায়েত নেই। পুরাই এখনো পরিস্কার ঘন একটা বন।তো
মনে মনে প্লান করে ফেল্লাম আজ রাতে ম্যানগ্রোভ ফরেস্টে ক্যাম্প করতেই হবে।যা বলা
তাই কাজ। ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে গেলাম। যেহেতু এলাকাটা এতটা সেফনা তাই প্রথমে সময়
নষ্ট করতে হবে , সন্ধ্যার পরপরই তাবু খাটিয়ে রাতটা উপভোগ।
আমি
প্রথমে উত্তর কাট্র্রলী বড় কালী বাড়ীর রাস্তার বেড়ী বাঁধের ব্রিজের নিচে দিয়ে গিয়ে
রাস্তায় উঠলাম। ঘড়িতে দেখলাম মাত্র দুপুর ৩:৩০ বাজে।
ছবি:- ব্রিজের নিচে। |
ছবি:- কাট্রলী বিচের পাশেই একটা বন। |
ছবি:- বনের ভেতরে গাছ। |
ছবি:- শ্বাস মূল। |
ছবি:- আস্তে আস্তে বন ঘণ হচ্ছে। |
ছবি:- শেয়ালের খেয়ে ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট। |
একবার
ভাবলাম ক্যাম্প না করে ফিরে যায়।একবার মাথায় ঢুকলে এটা আর যেন বের হতে চাইনা।তবুও
নিজেকে শক্ত করে বসিয়ে রাখলাম।
ছবি:- গাছের ফাকে সুর্ষ। |
ছবি:- সর্য যাচ্ছে বাড়ী। |
এ
প্রথম পরিচিত তাবুটাক একা একা পিচ করতে সময় লাগলো।বাইরে ভালই ঠান্ডা পরতেছিল।আর
বনের ভেতরে হটাত করে ঘুটঘুটে অন্ধকার।কোনমতে তাবু খাটিয়ে ঢুকে পড়লাম।এ প্রথম কোন
ক্যাম্পিং-এ আমি স্টোভ বা আগুণ জ্বালীয়ে খাবার রান্না করলামনা। কারণ হটাত বুঝতে
পারলাম আগুণের আলো বুহু দুর থেকে দেখা যাবে। আর আমি চাইনা রাত-বিরাতে কেউ এসে
আমাকে বিরক্ত করুক। ব্যাগ থেকে চকলেট বার আর বিস্কুট খেয়ে শুধু ছোট হেডল্যম্পটা
জ্বালিয়ে বই পড়তে লাগলাম। জানতাম আমার ডাবল ফ্লেয়ারের তাবুর কাপড় ভেদ করে
হেটল্যাম্পের আলো বাহিরে যাবেনা। রাতটা বই পড়ে কাটিয়ে দেওয়ারই ইচ্ছে।কিন্তু ঘুম কি
আর সহজে হয়। অনেক রাত পর্যন্ত বাইরের গাছের সাথে বাতাসের অদ্ভুত শব্দে খেলার আওয়াজ
শুনে শুনে আর বই পড়ে কাটিয়ে দিলাম।
কোন
সময় ঘুমিয়ে পড়েছি আমি নিজেই জানিনা। শব্দের কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। কান পেতে
শুনলাম কিসের সব্দ। একটা চাপা গোঙ্গানী। ধক করে ভয় জেগে উঠলো। শ্বশানের ছবি চোখের
সমনে ঘুরতে লাগলো। সেরকম ভয় পেলাম।এর আগে ক্যাম্পিংএ আমার কখনো এরকম হয়নি। এবার
মাথায় ঢুকে গেছে যে ক্যাম্পের পাশেই শ্বশান।
অনেক্ষন
বসে বসে শুনার পর বাইরে লুটোপুটির আওয়াজ শুনলাম। বুঝলাম এ শিয়াল নই কুকুর। ভয়টা
সাথে সাথে কেটে গেল আশ্চর্য কোন কারণে। আমি আবার ঘুমানোর চেস্টা করলাম।এয়ার
বালিশের হাওয়া হালকা একটু ছেড়ে দিয়ে ওটাকে একটু নরম করে আর স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে
আরেকটু ঢুকে আরাম করে ঘুমাতে গেলাম।
২৭-১২-২০১৩
-----------------------
ঘুম
ভাঙ্গলো খুব ভোরে।তখন মাত্র আলো ফুটছে অল্প অল্প করে। স্লিপিং ব্যাগ থেকে বের হতেই
প্রচন্ড ঠান্ডার একটা ধাক্কা খেলাম। রিতি মত কাপা কাপি শুরু করে দিলাম। তাবুর
উপরের ফ্লেয়ার বা কভারটা খুলে শুকাতে দিলাম পাশের একটা ঝোপের উপরে। ওটা পুরা ভিজে
ছিল। ঠান্ডায় বেশ কাহিল লাগতেছিল। তাই আবার তাবুর ভেতরে স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে
ঢুকে গেলাম টুপ করে। ঢুকার আগে কানা চোখে শ্বশান ঘাটটা দেখে নিলাম,অদ্ভুত লাগতেছিল
ওটাকে সকালের প্রথম আলোয়।
এর
পর আর কি ব্যাগ হাতড়ে কিছু কুকিজ পেয়ে ওটা চিবোতে লাগলাম।আর বই পড়তে লাগলাম হ্যাড
ল্যাম্প জ্বালিয়ে। সবই স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে অর্ধেক ঢুকে থাকা অবস্থায়।মজাই লাগতেছিল।
ভোরের
আলো যখন ভালো ভাবে ফুটলো আর ঠান্ডার তেজও একটু কমে এলো আমি আমার খুপড়ি থেকে বের
হলাম। তাবু জিনিস পত্র সব এখানেই ছেড়ে আমি একটু আশপাশ দেখতে লাগলাম। মুখের ভেতরে
টুথব্রাশ আর গলায় কম্প্যাক্ট ক্যামেরা। এক হাতে পানির বোতল। মনে মনে হাসতেছিলাম এত
ভোরে আমাকে যদি এ অবস্থায় কেউ দেখে তার পিলে চমকে যাবে। হা হা হা। সকালের আলোর
সাথে সব ভয় দুর হয়ে গেল যেন।শ্বসানের ভুতদের বুড়ো আঙ্গুল দেখাতেও আমার এখন কোন
সমস্যা নেই। দুরে দেখলাম যান্ত্রিক জীবন শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে। ইটের ভাটা থেকে ধক
ধক করে কালো ধোয়া বের হচ্ছে।
ছবি:- আধো আলোয় ইটের ভাটা দুরে। |
ছবি:- ইটের ভাটায় এত্ত ভোরে কাজ শুরু হয় জানতামনা। |
নাস্তা
খেয়ে ক্যাম্পিংএর সবচেয়ে বিরক্তকর জিনিস। হা ব্যাগ গুছানো।আর সবসময় খেয়াল করছি যে
কোন ক্যাম্পিং এর আগে বাসা থেকে সব ব্যাগে গুছিয়ে বের হলেও আর খাওয়া দাওয়ার পরে
ব্যাগ খালি হওয়ার পরও কেন জানি ক্যাম্পসাইট গুছানোর সময় সব জিনিস ব্যাগে আটতে
চাইনা।আর কি ব্যাগ গুছিয়ে সজো বাসার দিকে হাটা। আজ যে একটা ভালো ঘুম দিতে হবে
বাসায় গিয়ে।
[নোট
:- কাট্রলী বিচের একটু পরেই এ জংঙ্গল। উত্তর কাট্রলীর অংশে পড়ছে। কাট্রলী বিচের
থেকে রাস্তা দিয়ে ২০-২৫ মিনিট হাটা বেশি হলে। কাট্রলীর ছেলেদের খেলার মাঠের ভেতর
দিয়ে যেতে হয়।
যখনি
ওখানে যাবেন দয়াকরে সাথে করে নিয়ে যাওয়া কোন কিছ ফেলে আসবেননা। বিশেষ করে প্লাস্টিকের
কিছু। এই ছোট্ট বনটা রক্ষা করার দায়ত্ব কিন্তু আপনার আমারই।]
nice
উত্তরমুছুনআমি আপনার লেখার নিয়মিত পাঠক :) অসাধারণ লিখেছেন ভাই, আপনার এডভেঞ্চারটা আরও বেশি ভাল লাগলো, বাড়ির কাছে এত সুন্দর জায়গা, আমিও যাব একদিন ইনশাআল্লাহ :)
উত্তরমুছুনভাই চুলাটা কেমনে বানাইলেন? আইডিয়া দেন
উত্তরমুছুনচুলাটা কেমনে বানাইলেন? আইডিয়া দেন...
উত্তরমুছুন