৩১ জানু, ২০১৪

রমজানে সীতাকুন্ডে ক্যাম্পিং।

রমজানের সময়। ইফতারের পর নামাজ পড়ে একটু লেটানোর সময়।ল্যাপটপ কোলে নিয়ে যেই ফেসবুকে টু মারলাম টুং করে একটা মেসেজ আসলো।দেখি রাব্বি ভাই,হাই হ্যালো কিচ্ছু না লিখে সোজা লিখছে “সজল ২৬-২৭ ফ্রি আছো?”সাথে সাথে ল্যাটপের ঘড়িতে একটা ক্লিক করে তারিখ গুলা দেখ নিলাম।হা শুক্র এবং শনি বার। বললাম “হা ফ্রি আছি কিন্তু কেন?” উনি এবার বললেন “ক্যাম্পিং করতে চাই চট্রগ্রামে। সীতাকুন্ড বা মীরসরাই।“ আমি বললাম আরে এখনতো রমজান মাস।এসময় কি ক্যাম্প করবেন। উনি বললেন “দুর ব্যাগ প্যাক করো। তোমার গিয়ার-টিয়ার নাও , কিচ্চু হবেনা রমজান হয়ছেতো কি হইছে? আর পপর্কণ আনবা কিনতু বেশি করে” উনি আমাকে একটা গ্রুপ মেসেজে ট্যাগ করে দিলেন। দেখি সেখানে বিশাল আয়োজন।কে কি নিবে,ফুড প্যাক কি ক্যারি করবে এসব আলোচনা হচ্ছে।মোটামুটি একটা মিটিং চলতেছে।শাহবাগের আড্ডাকে ওরা ফেসবুকের এক কোনাই নিয়ে আসছে।ডিম নিতে হবে শুনে কে যেন প্রশ্ন করলো “ভাই ডিম ব্যাগে করে ক্যাম্মে বহন করে ?" সে ভাইকে প্রশ্ন করলেও উত্তর দিল বোনে, আনিকা ডিটেইলর্স লিখে দিলো একটা ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপে ডিম কেমনে ক্যারি করতে হয়। :-

২৬/৭/২০১৩
----------------------
সকালে মিনিমাম ৫:৩০ এ উঠার প্লান ছিল। যতদুর জানি রাব্বী ভাইরা ঢাকা থেকে রাতের বাসে রওনা দিছে।কিন্তু কালরাত থেকে প্রচুর বৃষ্টি হইছে।ঠান্ডা ভেজা একটা সকাল।কালের ক্ষেত্রে আমার প্রিয় কাল কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে বর্ষাকাল।গরমে আমি ঘামাতে ঘামাতে আর গোসোল করতে হয়না। আর শীতে ফিত ফিত করে নাক টানতে টানতে দিন কাটায়,তায় হয়তো বর্ষায় প্রিয়।আমার মোবাইলের এলার্ম অনেক চিল্লা-চিল্লি করে বিরক্ত হয়ে চুপ মেরে গেছে অনেক আগেই।ঘুম ভাঙ্গলো প্রায় ৭টার দিকে। উঠেই মনে করার চেস্টা করলাম আজ যেন কোথায় যাওয়ার কথা ছিল? টেবিলের পাশে গোছানো ব্যাগ দেখে মনে পড়লো আরি আজতো আমি ক্যাম্পিং ট্রিপে যাবো। রাব্বী ভাইরে ফোন দিলাম। খুব মিষ্টি কন্ঠের এক মহিলা ফোন ধরে বলল “আপনি যে নম্বরে ডায়াল করেছেন সে নম্বরে এই মুহুত্বে সংযোগ দেওয়া সম্ভবনা। অনুগ্রহ করে ... “ যাক সকালটা কোন একটা সুইট কন্ঠ দিয়ে শুরু হলো। এরপর ফোন দিলাম রুপা দিদিকে।ওনি ঘুমঘুম কন্ঠে বলল “এই সজল ট্রিপে যামু , বৃষ্টি পড়ে যে” আমি বলতে চাইলাম “আরি কি কন এসব , উঠেন চলেন” কিন্তু নিজের কন্ঠ শুনে নিজেই টাসকি খাইলাম। আসপাশে দেখলাম আমি নাকি অন্য কেউ কথা বলছে। নাহ আমিই। রাতের ঠান্ডায় আমার গলার স্পিকার ফেটে গেছে।চাইনা মোবাইলের মত সাউন্ড হেবি কিন্তু কিচ্ছু বুঝা যায়না।ওই দিকে দিদি হ্যালো হ্যালো করতাছে। কোনমতে বললাম “ আমি আপনি না গেলে যাবোনা , আপনি এ ট্রিপে আমার গার্ডজিয়ান :পি ।“ তো প্রাকৃতিক কর্মকান্ড সেরে, রাব্বি ভাইকে এসএমএস দিলাম। দেখি মেসেজ ডেলিভারি হইছে। উনি রিপ্লেতে বলল আমরা বড়তাকিয়া আছি। বাস তারাতারি আসছে। দ্রুত কাপড় পরে বের হতে গেলাম, আম্মা দেথে বলল "এই বৃষ্টি বাদলার মধ্যে কই যাস ব্যাগ নিয়ে ?"।আমি বললাম "বন্ধুর বোনের বিয়ে, অনেক দায়ত্ব দিসে , ঘরে শনিবার দিন রাতে ফিরবো।"

এর মধ্যে রুপা দিদিও বলল উনি আসতেছে।আমি যাই আলিফ হোটেলের সামনে পাক্কা ২০ মিনিট দাড়ায় থাকলাম , তারপর রুপা দি আসলো। আমরা একটা বাসে উঠলাম।গল্প করতে করতে চলে আসলাম বড় তাকিয়া। পুরা ১.২০ ঘন্টার যাত্রায় রুপা দি খালি সাপ আর সাপের গল্প করছে। বান্দরবানে এই সাপ আছে , লাউয়াছড়াই ওই সাপ। মহিলারা যেমন বান্ধবীদের সাথে দেখা হলে তার ননদ , নন্দীনিদের কর্মকান্ড নিয়ে গল্প করে রুপা দি সেভাবে সাপের গল্প করতেছিল। বেচারি পারেও ... বাপরে বাপ হি হি হি ।

আমরা বড়তাকিয়া নেমে রাব্বী ভাইদের ফোন দিলাম। উনারা নাকি ট্রেইলে ঢুকে গেছে আমাদের দেরি দেখে। বুঝলাম ওরা আমাদের থেকে প্রায় ১ ঘন্টা এগিয়ে।তাই না হেটে যতটুকু পারা যায় সিএনজি নিয়ে রওনা দিলাম।সিএনজি যখন রেল স্টেশান নামল তখন এলাকার লোকজন বলা শুরু করলো ভাই আপনারা কারা ? কোত্থেকে আসলেন ? সামনে আরো কয়েকজন গেছে একঘন্টা আগে। এই সেই।
 ছবি:- রোজার সময় রোজা রেখে প্রথম পাহাড়ে ঢুকছি।
সাধারণত আমাদের রেলগেট থেকে খৈইয়াছড়া ঝর্ণা যেতে মিনিমাম ৪০ মিনিট লাগে। কিন্তু আমরা সেদিন ২০-২৫ মিনিটের ভেতরে ঝর্ণার কাছে গেলাম। খুব দ্রুত। প্রচুর শর্টকার্ট নিয়ে গেলাম।ভাবছিলাম ঝর্ণার কাছে গিয়ে দেখবো রাব্বী ভাই তার ছোট ভুড়িটা বের করে পানিতে দপাদপি করতেছে।বাকিরা বাহ-বাহা দিচ্ছে। কিন্তু কোথায় কি !! ঝর্ণার ধারে কাছে কাউরে পাইলামনা। রুপা দি ফোন দিলেন। না তারা নাকি এখনো আসতাছে। অর্থাত আমরা ফাস্ট। তো কি করা বসে বসে ঝর্ণা দেখতে লাগলাম আর হাত পা থেকে ঝোঁক ফেলতে লাগলাম। সে কি পরিমাণ যে ঝোঁক।রুপা দি কে একটা চকলেট অফার করলাম।খাবেনা খাবেনা বলে উনি বনটির পুরাটাই হুলুপ করে দিল।আমাকে এক টুকরাও দিলনা।কি আর করা কিছু ছবি তুলতে লাগলাম।
ছবি :- খৈয়াছড়া ঝর্ণা।

ছবি:- আমার চকলেট হলুপ করে আবার পোস দিয়।
এমন সময় একজন স্থানিয় খামারী এসে বলল যে পিছনের টিমের কার যেন মাথা ফেটে গেছে।আমরা চিন্তিত হয়ে পড়লাম।একসময় রাব্বী ভাই , মুনিম , তপন ভাই , অনিকা , লিপু ভাই সহ পুরা টিমকে আসতে দেখলাম।প্রথমেই চোখ গেল রাব্বী ভাইর কপালের দিকে।বিশাল একটা লিক।এতদিন জানতাম পানির পাইপে বা টায়ারে লিক হয়।এখন দেখি রাব্বী ভাইর মাথায়ও।বেচারা গোপ্রো-৩ কিনে ভিডিওগ্রাফি করতে গিয়ে আজ এ অবস্থা।সবাই তাকে পচাতে লাগলো , টিম লিডারের যদি এ অবস্থা এ হয় তাইলে বাকিদের কি হবে ?
ছবি:- আহারে বেচারা।
যা হোক আমরা বড় ঝর্ণাটার নিচে কতক্ষন দপাদপি করে রাব্বী ভাইর কাছে আমাদের সকল সম্পত্তি আইমিন ব্যাগট্যাগ রেখে উপরে উঠতে লাগলাম।

ছবি:- ঝর্ণায় সাবান শ্যাম্পু ছাড়া গোসোল।
উপরে উঠাটা একটু কঠিনই খৈইয়াছড়ার। তার উপর কদিন আগে ফ্লাস-ফ্লাড হয়েছে এদিকে,উপড়ে ফেলা গাছপালা আর জন্জালে ভরপুর।তারপরেও আমরা উঠে গেলাম কোনপ্রাকার ঝামেলা ছাড়াই।রক্ত যা ঝড়ানোর তা ঝোঁক মশাই ঝড়িয়েছে।

ছবি:- সাহস থাকলে ওইখানে যা। :পি
ছবি:- ফ্লাস ফ্লাডে এনে ফেলছে এসব ঢালপালা।
আমরা উপরে ঘুরে এসে প্রায় ২ ঘন্টা পর নিচে নামলাম। রোজা রাখছিলাম আমি আর লিপু ভাই।তাই কষ্ট হচ্ছিল। লিপু ভাই অনেক স্ট্রং সে হিসাবে আমার কিন্তু খবর হয়ে যাচ্ছিল।আমারা আবার এক দফা গোসোল করে রওনা দিলাম বড় তাকিয়া বাজারে।আমি যানতাম এরা সবাই ব্যাকপ্যাকিং করতে আসছে। কিন্তু কোথায় কি ... রমজান মাসের ভরদুপুরেও যখন কোন ভাতের হোটেল খোলা নেই এর মধ্যেই এরা একটা হোটেল খুজে নিয়ে কোপাই খাবার খেয়ে নিল।আমি আর লিপু ভাই পাশের চেয়ারে বসে বোসে মুখের লোল ফেল্লাম। যখন কেউ খাবার শেষে হাতের আঙ্গুলে চুষে চুষে সুরুত সুরুত শব্দ করলো তখন পেটের পেতরে কেমন যেন করে উঠলো। তাই আমি , লিপু ভাই , ইস্তিয়াক ভাই সহ বাকিরা ইফতারের বাজার করতে লাগলাম।মুড়ি , পেয়াজু , বেঙ্গুনী , বুট , জিলাপি। আরো কতো কি।সব শেষে আমারা দুটা সিএজি নিয়ে রওনা দিলাম আমাদের ক্যাম্প সাইটে।এবারো একটা রেলগেটে নেমে আবার হাইকিং। গল্প করতে করতে হাটা হাটি।স্থানিয়রা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।কারণ ওরা মনেহয় এর আগে সন্ধ্যার সময় এ ট্রেইলে কোন দল দেখেনি যারা এত বড় বড় ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে পাহাড়ে ঢুকতেছে আর সাথে দু-জন মহিলা সদস্যও আছে। এর মধ্যে রুপাদি আবার এক খ্যাত থেকে মরিচ আর কি কি যেন চুরি করল।দুরে জমির মালিক হাতে কাচি নিয়ে দাড়িয়ে থাকার পরও। আমি সরাসরি বলে দিলাম , কেউ যদি চোর চোর বলে দাবড়ানি দেয় আমি সোজা বলবো যে আমি এদের চিনিনা। 
আমি যেহেতু এ ট্রেইলে গাইড ছিলাম একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম। একেতো বৃষ্টি হচ্ছে তার উপর সন্ধ্যা প্রায়। পথ না ভুল হয়।এদিকে পাহাড় টপকাবার সময় পথে কিছু কাঠুরে পড়লো। কাঠুরের স্ত্রী আনিকাকে দেখে ধমক :- "এই মেয়ে তুমি এত সন্ধ্যায়,বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ে কি করতেছো? যাও ফিরে যাও।" বেচারি মনে হয় জানতোনা অনিকা চট্রগ্রামের ভাষা বুঝেনা। আমি মনে করছিলাম সে রুপা দিদি কেউ ধমক দেবে। কিন্তু রুপাদিদির ববকাট চুল দেখে মনে হয় তারে ছেলে মনে করে ছেড়ে দিল।এ যাত্রায় রুপা দি বেঁচে গেল।

আমরা যখন ক্যাম্প সাইটে আসলাম তখন প্রায় অন্ধকার। চারিদিকে শুধু গুমগুম ঝর্ণার পানি পড়ার শব্দ।আমি আজ প্রথম এত অল্প হাইকিং-এ কাহিল হয়ে পড়লাম। বিশাল ঝর্ণার সামনে থপ করে বসে পড়লাম।রাব্বি ভাই বলল ওই সজল আমরা কি এখানেই ক্যাম্প করবো ? আমি আসলো খুদাই , তৃষ্নায় এতই ক্লান্ত ছিলাম যে মুখদিয়ে কথায় বের হলোনা। কোনমতে বললাম এ জায়গা পছন্দ না হইলে একটু উপরে আরেকটা ক্যাম্পসাইট আছে , এর আগের বার আমি ওখানেই ক্যাম্প করছিলাম।কিন্তু আমি আগামি ১০ মিনিট এখানে বসে রেস্ট নেব।
অত:পর শুধু তপন ভাই , রুপাদি আর কে একজন জানি উপরে গেল। আমি নিচে থেকে বলে দিলাম লাস্ট টাইম আমাদের ক্যাম্প কোথায় ছিল। এর মধ্যে ঘড়ি দেখে দেখি আজান দিয়ে দিয়েছে। ব্যাগ থেকে বোতল বের করে ঢগ ঢগ করে পুরা বোতলের পানি খেয়ে ফেললাম।একসময় তপনদা আর রুপা দি আমাদের উপরে ঢাকলো। হা আবার সেই ক্যাম্পসাইট। গত গীষ্সে এখানেই ক্যাম্প করেছিলাম।

ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ গ্রুপটার এ একটা জিনিস আমার ভালো লাগে। টিমের সবাই একসাথে মিলেমিশে কাজ করে।যার যা দায়ত্ব সে সেটা পালন করবেই , অন্যেরটাই দরকার ছাড়া নাক গলাবেনা।যেমন উপরে উঠেই রাব্বি ভাই (পালের গোদা) ডিরেকশান দিয়ে দিল কে কি করবে। (কিন্তু বেটা নিজে কোন কাজ করেনা। বদমাইশ , খালি নির্দেশ দেয় , কামলা খাটি আমরা আর সে বসে বসে বিড়ীতে সুক টান দেয়) তপনদা , আমি , প্লাবন ভাই সহ বাকিরা তাবু খাটাতে লাগলাম।আমাদের ঢাকার বিখ্যাত শেফ লিপু ভাই ইফতারী বানাতে লাগলো।মুনিম চিংড়ী মাছ ধরতে লেগে গেল।আচ্ছা অনিকা কি করতেছিল ? মনে পড়েনা।

আমরা সেদিন সেই রকম ইফতারি করলাম। কিছুনা একটা পেপারের উপর মুড়ি , জিলাপি , পেয়াজু , বেঙ্গুনী মিশ্রণ। চিন্তা করেন একপাশে ঝিরিতে প্রচন্ড শব্দে পানি প্রবাহ হচ্ছে। একপাশে পাহাড় আর সেখান থেকে বিচিত্র এক পোকার ঝি ঝি শব্দ আর চারপাশে টেন্টের ছড়া ছড়ি।আর খুদার্থ লোলুপ চোখে আমরা তাকায় আছি ঝিরির পাশে পেপারের উপর রাখা ইফতারীর দিকে। বিচিত্র আর অদ্ভুত ইফতার করলাম জীবনে।আর কিছু মনে থাক আর না থাক সেদিনের ইফতার পার্টিটা আমি কখনো ভুলবনা।

হা বলতেই হয় লিপু ভাইয়ের ইফতার বানাতে যে সময় লাগছিল তার তিনগুন কম সময়ে আমরা সেটা শেষ করে দিয়েছিলাম।এরপর আর কি সারারাত গল্প আর রান্নার প্লান নিয়ে আমরা বসলাম।সব চুলা আর পাতিল কালেক্ট করা হলো। পিক৬৯ এর মালিক হাজির থাকলেও পিক৬৯ এর প্রোডাক্টের শর্ট পড়লো। আলসেমি করে অনেকেই জিনিস পত্র কম আনছে।রুপাদি আর মুনিম মিলে প্রায় ২০-২৫ খানা ইয়া বড় বড় চিংড়ী কালেক্ট করে ফেল্ল। আমরা মুনিমকে খেপাতে লাগলাম যে মুনিম চিংড়ি যে গন হারে ধরতেছো বদদোয়া দেবেতো। বেটা শুনলইনা। আমাদের শেফ কিন্তু খুব ফাস্ট।চিংড়ী ভাজি আর খিচুড়ি বানাতে বেশিক্ষন লাগালোনা।আর রুপাদিদি একপ্রকার সালাদ বানালো (এই মহিলা আবার ঘাস , লতা-পাতা খাইতে পছন্দ করে) । তো বুঝতেই পারলেন খাবার বা ডিনারটা সেই ছিল।

লাস্ট চামুচ খাওয়ার সময় মনে পড়লো। আরি তপন দাদা কই ? নাহ হারাইনাই । ওই ওনার রিংটোন (নাক ঢাকা) শুনা যায়। উনি সবার অলক্ষে কখন যে মুনিমের তাবুতে ঢুকে ঘুম।বেচারা মুনিম তার নিজের তাবুর বাইরে ঘুরঘুর করে ঢুকতে পারেনা। তো অনেক গল্পগুজব আর কফি পানের পর আমরা ঘুমাতে গেলাম। আমার টেন্ট পার্টনার হলো মুনিম। তার তাবু যে দখল করে বসে অন্য কেউ।এদিকে কিন্তু সারাক্ষন বুষ্টি হচ্ছিল। কখনো হালকা কখনো , কখনো মুষল ধারে। আমরা দেখলাম ঝিরিতে পানির লেভেল বাড়তাছে। সবাই এত কেয়ার করলোনা পানির ব্যাপারটা। শুধু রাব্বী ভাই ছাড়া। উনি চিন্তিতই ছিল।
আমি আর মুনিম প্রায় পানির উপরই ছিলাম। সব ভেজা। অর্থাত তাবুতে পানি ঢুকতেছে। অবাক হলাম , কারণ আমি জানি আমার তাবু ওয়াটার প্রুফ। ঘটনা কি দেখতে বের হলাম। দেখি তাবুর নিচে সব পানি। যে পানি মিনিমাম ৫ ফুট দুরে ছিল সেটা এখন একেবারে তাবুকে গ্রাস করে ফেলছে। আমার আর মুনিমের কথাবার্তায় রাব্বী ভাইও বুঝলো কিছু হইছে। বাইরে এসেই ঝিরিটা একপলক দেখেই উনি সবাইকে ক্যাম্পসাইট থেকে উপরে উঠে যেতে বলল।হটাত প্রন্ড স্রোত এসে ধাক্কা দিতে লাগলোটেন্টের শুধু পোল খুলে জিনিস পত্র সমেত কোনমতে পেচিয়ে সেই পাথুরে পাহাড়ে তুলে রেখে আমরা উপরে পায়ে হাটার ট্র্রেইলে ফ্লাস ফ্লাডের কমার অপেক্মায় থাকলামতখন ঘড়ীতে রাত ৩:৩০ হবেআমাদের তখন বেহাল অবস্থা কেউ খালি গাকেউ শুধু গামছা পড়ামুহুত্বে সব হয়ে যাওয়ায় আমরা টাইম ই পাইনিকেউর কিছু না হওয়ায় আমি মনে মনে অনেক খুশি ছিলামরাব্বি ভাইর ব্যাক আপ প্ল্যান ই আজ বাচিয়ে দিলাফ্লাস ফ্লাড় এর মাত্র ১ মাস আগেও আমি দেখছি একটা ক্যাম্পিং ট্র্রিপেকিন্ত এ রুপ এর আগে দেখিনিরাব্বি ভাই অনেক ধন্যবাদআপনার জন্যই সবাই বেচে গেলাম।

ছবি:- অপেক্ষা পানির রাগ কমার। তপন ভাই এর মধেও ঘুমায় কেম্মে আল্লাহই জানে।

এর পর আরকি অপেক্ষা কখন পানি কমবে...সকাল ৮ টার দিকে পানি কমলো।আমরা জিনিস পত্র গোছাতে লাগলাম। অনেকেই কিছুনা কিছু হারালো।আমি আমার চশমাটা হারালাম।যে ব্যাগের ওজন গতকাল হয়তো ৭-৮ কেজি ছিল সেটায় ভেজা তাবু আর অন্যান্য জিনস ঢুকে মনে হয় ২০-৩০ কেজি হয়ে গেছে।আমি ক্যাম্প সাইট দেখে টাসকি খেলাম। এ ছিল আমাদের ক্যাম্প সাইট গত কাল ! চেনাই যায়না।
ছবি:- গতরাতের ক্যাম্পের পাশে।
ছবি:- গ্রুপ ফটো।
 
ছবি:- রাগী ঝরনা।

প্রচন্ড স্রোত ঠেলে আমরা ফিরতি পথ ধরলামগতকাল যে ঝিরিতে ১ ফিট ও পানি ছিলনা সে ঝিরিতে এখন ২-৩ ফিট পানি আর স্রোত মারাক্তকপথে নুডুলর্স রান্না করে সবাই সেটা ভাগ করে খেলাম

ছবি:- নুডুলর্স রান্না হচ্ছে
এর পর ধীরে ধীরে আমরা ফিরলাম , সবাই চিংড়ি মাছ ধরাটাকে দোস দিল , তাদের অভিশাপে আজ এ অবস্থা
ছবি:- ঝিরি পার দল বেধে।

ছবি:- ঝরি পার।
ছবি:- ঝিরি পরের সময়।

শেষ মুহুত্বে প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলো আবার পাহাড়ী ঢলকিন্তু এতে যেন আমাদের অভ্যেস হয়ে গেলকাকে কাকে যেন দেখলাম শ্যাম্পু দিয়ে বৃষ্টিতে গোসোল করতেছে অসাধারণ মজার ট্রিপটা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল আফসোস প্রচন্ড বৃষ্টির আর পাহাড়ী ঢলের কারণে আমরা অনেক ছবি তুলতে পারিনিআর এ ট্রিপ টায় আমরা তো কোন ময়লা আবর্জনা ফেলে আসিনি বরং আগে থেকে যা ছিল সব সাথে নিয়ে এসেছি এত খারাপ আবহাওয়া থাকা শর্তেও, এ কাজটা করেছে রুপা দি আর লিপু ভাই , তাদের সালাম ট্রিপে সবচেয়ে আরাম করছেন তপন ভাইখালি ঘুমাইছেনফ্লাস ফ্লাডের সময় ও উনি ঘুম ছিলেনআর হা আনিকাই মাথায় শ্যাম্পু দিয়ে বৃষ্টিতে গোসল করছে এখন মনে পড়ছে ট্রিপের ফ্লাস ফ্লাডে কারো কিছু না হারালেও আমার চশমাটা হারিয়ে গেছেআজো আমি হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে চলতেছিমজার বিষয় হচ্ছে লিপু ভাই একটা জাংগিয়া / আন্ডার পেন্ট পেল , যখন ফ্লাডের পর আগোছালো জিনিস গুলো তাদের মালিকদের নাম ধরে ডেকে ডেকে দেওয়া হলো কেউ ওই জাংগিয়াটার মালিকানা নিতে চাইলোনাশেষ মেষ বলা হলো ওটা ফ্লাডে ভেসে এসেছে .. লিপু ভাই ওটা সাথে করে নিয়ে আসছেন ? তাইলে ওটার সঠিক মালিক হাত তুলেন , নাম প্রকাশ করা হবেনা রাব্বি ভাই পদ্ধতি অনুযায়ী কোমোর মাপা হবে শুধু। :P

[ নোট:- কিভাবে যাবেন এ ঝরনায় ? প্রথমে বড়তাকিয়া বাজারে যাবেন এটা মিরসরাই বাজার থেকে চট্রগ্রামের দিকে কিছু কি:মি আগে। চট্রগ্রাম থেকে বাস ভাড়া ৫০ টাকা। বড় তাকিয়া থেকে সিএজি নিতে পারেন বা হেটে রওনা দিতে পারেন। বাইপাসের শুরতেই একটা সরু পাকা রাস্তা পুর্ব দিকে চলে গেছে সেটা দিয়ে নাক বরাবর হাটতে থাকুন। স্থানিয় দের প্রশ্ন করুন। সিএজি ভাড়া ৫০-৬০ টাকা । আর আমরা বাংলাট্রেকের লিখাটা পড়ে দেখতে পারুন। দেখুন এখানে :- http://www.banglatrek.org/?p=1144  এ লিংকে একটা ম্যাপ দেওয়া আছে যার ফর্মেট “KMZ” এটা কম্পিউটারে গুগল আর্থ আর স্মার্ট ফোনে গুগল ম্যাপে খুলবে।
  
টিপর্স :- শুকনো খাবার নিন সাথে। পর্যাপ্ত পানি ও লবন নিতে পারেন .. প্রচুর ঝোক ওখানে। আর একটা দড়ি নিয়ে গেলে অনেক কাজ দিবে মূল ঝরনার উপরে স্টেপ গুলা টপকাতে।  ]

সবতো লিখে দিলাম। তা ও কিছু জানতে চাইলে আমার ফেসবুকে নক করতে পারেন এখানে

আমার অন্যান্য কিছু লিখা :- ১/ ছোট দারগার হাটের সহস্রধারা ঝর্ণায় একদিন। ২/ ভারত ভ্রমণ :- পর্ব আগ্রা ( Land of immortal Love) ৩/  ছেঁড়া দ্বীপে ক্যাম্পিং ।৪/ সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন