১৭ সেপ, ২০১৩

খৈইয়াছড়া ঝর্ণায় তৃতীয় যাত্রা।



খৈইয়াছড়ার ঠিকানা আমাদের দেয় এক সিএনজি ড্রাইভার আমি জুমন আর মামুন ভাই যাচ্ছিলাম বড় দারগার হাটে এক ঝর্ণায় , কিন্তু পথে সিএজি ওয়ালা বলল সে একটা বড় ঝরনা চেনে। তার সুত্র ধরে এ বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যায় ওখানেকিন্তু শুকনো মৌসুম হওয়ায় মূল ঝরনার পর স্টেপর্সগুলার পর আর যাওয়া হয়নিপানি ছিলনা,শুকনো শুকনোআগ্রহ হারিয়ে ফেল্লাম , সেদিন আর যাওয়া হলোনা। ওই ট্যুরের ছবির এলবাম দেখতে এখানে Click করুন
 

এক জায়গায় বারাবার যেতে ইচ্ছে হয়না। তারাপরেও পুরা ঝিরিটা ট্রেক করবো বলে আবার যাইজুনের ১ তারিখকিন্তু সেই একই ঘটনাদলের কেউ শেষ স্টেপর্স এর পর যেতে চাইলোনাপানির পরিমাণ তখন অনেক বেশি তাই কদিন আগে ফ্লাসফ্লাডও হলো । এ ট্রিপের ছবির এলবাম দেখতে  এখানে Click করুন।

এরপর মাথাই ঝোকটা আরো বড় হলোএই খৈইয়া ছড়ার ঝিরির শেষ দেখবোএকদিন ছোট্ট একটা দল নিয়ে রওনা হয়ে গেলামস্টেপস গুলার পরও আরো অনেক ভেতরে যাবো এই ইচ্ছাগল্পটা নিচে পড়তে পারেন :-


৪ – জুলাই – ২০১৩
-------------------------------------------------------  


তৌহিদুল হক অপু ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতেছিলাম অলংকার “হোটেল আলিফের” সামনে। এদিকে ফোন দিল ফাহিম হোসেন ভাই। উনি আর সোহেল ভাই নাকি অলরেডি বাস থেকে নেমে গেছেন সীতাকুন্ড। উনারা ঢাকা থেকে আসতেছিলেন । তো উনাদের বললাম ছোট দারোগা হাটে চলে যেত , স্থানিয় একটা ছেলের সাথে পরিচয় ছিল ওখানকার , তাকে ফোনে বললাম ওদের “সহস্রধারা” ঝর্ণা ঘুরিয়ে দেখাতে। ততক্ষনে আমি আর অপু ভাই চলে আসবো। আলিফে জাম্পেশ নাস্তা খেয়ে বাসে চড়ে বসলাম আমরা দুজন। কথা বলতে বলতে কখন যে বড় তাকিয়া বাজারে চলে আসলাম বলতেই পারলামনা। বাজারে নেমে বাজার করলাম নডুলর্স , কফি আর সুপ। বিলটা অপু ভাই জোর করে দিয়ে দিল। আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম ফাহিম হোসেন ভাই আর সোহেল ভাইয়ের জন্য , ওরা তখনো ছোট দারগায় “সহস্রধারায়” ঘুরছিলি। সিএনজি নিয়ে ওরা যখন এলো তখন ঘড়িতে প্রায় সকাল ১১:৩০ । ওনেক দেরি হয়ে গেছে। তারাতারি একটা সিএনজি নিলাম। সিএনজি ওয়ালাকে বললাম ঝর্ণায় যাবো , আমাদের বড়তাকিয়ার বাইপাসের শুরুতে পুর্ব দিকে যে রাস্তা গেছে সেটা ধরে রেইল গেট নামিয়ে দিতে। রেইলগেটে কয়েকটা দোকান আছে , ফাহিম ভাই আর সোহেল ভাই পনি আর দরকারি কিছু জিনিস কিনে নিল। আর আমাদের হাটা শুরু হলো। রেল লাইনের পর সামান্য হাটলেই রাস্তার পাশে খৈইয়া ছড়া ঝরনার ঝিরিটা দেখা যায়। আমরা ঝিরিতে নামলামনা। আমি একটা শর্টকাট জানতাম , সময় বাচানোর জন্য ওই পথ ধরলাম। ওই এলাকার মেম্বারটা খুব ভাল , আমরা উনার বাগানের ভেতর দিয়ে এক দুবার ঝিরিটা ক্রস করে এগুতে লাগলাম । মাঝে মাঝে দাড়িয়ে ছবি তোলা।

ছবি :- এরকম পাহাড় ঘেরা সবুজ খেতের মধ্যে দিয়ে চলা।

এক সময় আমরা স্থানিয় মসজিদ পেছনে ফেলে শেষ গ্রামটায় চলে আসলাম। এ গ্রামটা খুব সুন্দর লাগে কারণটা হলো এর  তিন পাশ ঝিরি শুধু এক পাশ দিয়ে ঢুকার রাস্তা।
ছবি:- গ্রামের একটা বাড়ী।
এ গ্রামের পরও আমরা ঝিরি দিয়ে না ঢুকে একটা পাহাড়ি রাস্তা ধরলাম। সবাই ওটাই করে । রাস্তাটা ঝিরির পাশদিয়েই চলে গেছে , একসময় পাহাড়ি রাস্তা শেষ হলো ঝিরি পথে হাটা শুরু হলো।
ছবি:- ঝিরি পথ।
একসময় আমরা ঝর্ণার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ঝর্ণাটার কাছে এসেই দুপ দাপ পানিতে পড়তে লাগলাম , ফাহিম ভাই আর অপু ভাই এর আগে বান্দরবানে অনেক ঘুরছেন , তাই ঝরনা তাদের অনকে দেখা আছে তাই বিস্ময়টা কম ছিল। কন্তু সোহেল ভাই একেবারে নিউ বর্ন ট্রেকার। এই প্রথমে পাহাড়ে ট্রেকিং করছেন। তাই তিনি হতবাক হয়ে ঝরনাটা দেখতে লাগলেন , ছবি তুলতে লাগলেন , ভিডিও করতে লাগলেন।
ছবি:- ঝর্ণার গভির অংশের পানি এবং পাথর।

ছবি:- খৈইয়াছড়া ঝর্ণা।

এমন সময় আরো একটা গ্রুপ সেখানে আসায় আমরা তারাতারি সুপ আর পর্পকর্ণ রান্না করলাম।পপকর্ণ চুলাই বসিয়ে পানিতে ডুব দিলাম , যখন শুনলাম এর ঠুস ঠাস আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে বুজলাম হয়ে গেছে। খেয়ে এখন উপরে উঠার পালা। পথটা একটু কঠিন , খাড়া পাহাড়।

ছবি:- ঠান্ডা পানিতে গোসোল আর গরম সুপ আর পর্পকর্ণ।
একসময় আমরা উপরে উঠে গেলাম। ( উপরের অনেক ছবি এই ব্লগের প্রথমে দেওয়া আমার লিংকের অন্য এলবাম গুলাই দেওয়া আছে , তাই এখানে ছবি কম দিলাম। )

ছবি:- উপরের একটা ঝিরি পথ।

ছবি:- এটা দিত্বীয় স্টেপ টপকাবার রাস্তা।
ছবি:- মাঝখানের একটা ঝর্ণা।


ছবি:- এতদিন পর্যন্ত এটাকেই লাস্ট স্টেপ ধরারেছিলাম এ ঝর্ণার।
আমরা একদম উপরে উঠার পর একটু রেস্ট নিলাম। আপু ভাইর হটাত প্রাকৃতিক ঢাক আসলো আর উনি একটা খালি বতল নিয়ে স্টেপের উপরে পেছেনে একটা ঝোপের ভেতর ঢুকে গেল। আমরা উনার অপেক্ষা করতে লাগলাম।
ছবি:- আকাশ পরিস্কার থাকলে এখান থেকে সমুদ্র আর সন্দীপ দেখা যায়।

অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ আসতে লাগলো ঝোপের আড়াল থেকে। একসময় বের হয়ে আসলেন উনি। শুরু হলো আবার চলা , পাহাড় বাওয়া। আমরা স্টেপস গুলার উপরে উঠে চলতে শুরু করলাম। জায়গাটা একটু ভুতুড়ে। চারদিকে জংগলে ভরতি আর পানির উচ্চতা একেক স্থানে একেক রকম। আমি সাথে নিয়ে আসা ম্যাপে দেখতেছিলাম সামনেই কিছু একটা আছে ঝরনার মত।

ছবি:- চলছে পানি আর জংগলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলা।

ছবি:- এভবে পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

একসময় আমরা পানির আওয়াজ শুনতে পেলাম। ম্যাপের এ জমানো পানির স্থানটাকে ঝর্ণা ভেবেছিলাম। এসে দেখি ঝর্ণা না। একটা ছড়া / ক্যাসকেড কিন্তু খুব সুন্দর আর পানি ছিল। খৈইয়া ছড়ার তাহলে আরো কিছু দেওয়ার ছিল।

ছবি:- এই সেই ক্যাসকেড।
এটার সামনে বসে অনেক্ষন সময় কাটালাম আমরা। এটার সামনেই একটা বড় পাথর মত আছে। বসা যায়। কিছু ছবি তুলে আবার এগিয়ে গেলাম। এর পরের অংশটা পুরাই পানির ভেতর । শুকনা কোন প্লেস নাই। আমাদের লিড দিচ্ছিল অপু (নাফাখুম) ভাই আর ফাহিম ভাই। একটু এগোই আর ম্যাপে দেখি ম্যাপের ঝরনা মত প্লেসটা কত দুরে।
এগিয়ে যেতে যেতে হটাত দেখি জংগলের ফুড়ে আমরা একটা ছোট্ট স্থানে বেরিয়ে এসেছি। একটা ছোট ঝরনা মত আছে , পাশেই গুহার মত আরেকটা স্থান। গুহার ভেতরে আরকটা ঝর্ণা আছে দেখরাম। ছোট ... ঝর্ণা না হয়ে ক্যাসকেডও হতে পারে। ছবি দেখুন নিচে :-
ছবি:- হটাত বেরিয়ে দেখবেন সামনে দুটা ঝর্ণা / ক্যাসকেড।

ছবি:- এইটা একটা। এটার ডান পাশেই গুহা মত স্থানটা।
ছবি:- ভেতরে ঢুকিনি আমরা পানি বেশি মনে করে।


ছবি:- একটু জুম করে তোলা।
ছবি:- আমার প্রিয় টিম মেম্বার। ( ফাহিম ভাই , অপু ভাই , সোহেল ভাই )
ম্যাপে আরেকটা জায়গা দেখাচ্ছিল , যেখানে আরকটা ঝর্ণা মত থাকার সম্ভনা বেশি। কিন্তু সবাই আমরা ক্লান্ত আর , বিকেল গড়িয়ে গেছে। তাই ফেরার পথ ধরতে হবে। তাই আমরা অনেক চিন্তা করে , অনিচ্ছা সত্তেও ফিরতি পথ ধরলাম।
ছবি:- এটাকে এতদিন আমরা লাস্ট স্টেপ ধরতাম। যা এটা নয়।





ছবি:- উঠার থেকে নামা কঠিন। সবাই মোটামুটি পিরা খাইলাম।

ছবি:- পানি অবিরাম পড়ছে।
ছবি:- পানি অবিরাম পড়ছে।
নিচে নেমে আমরা দিনের দ্বিতীয় গোসলটা সেরে নিলাম। ঝর্ণার ঠান্ডা পানিতে। একটা দল উপরে উঠতেছিল। আমরা বললাম আপনারা তো দেরি করে ফেল্লেন। আরো আগে আসলে ভাল করতেন। তাদের নাকি গাড়ী দেরি করেছিল। তাই এ দেরি। তো আমরা রান্না চড়িয়ে গোসল করতে লাগলালাম দিনে তৃতীয় বারের মত। উপরে যারা উঠতে গিয়েছিল তারাও নেমে আসলো। পরিচয় হলো। দেখা গেল এ টিমটা আমাদের পরিচিত। এরা ইহসান ইমন ভাই আর মাহমুদুল হাসান ভাইর পরিচিত লোকজন। তো তারা আমাদের আনারস খেতে দিল। খুব মজার , রসালো আনারস ছিল। আমরাও তাদের নুডুলর্স খেতে দিলাম।
ছবি:- চিয়ার্স।


ছবি:- অন্য টিমটার সাথে একটা গ্রুপ ফটো।

আমরা ওই ঝর্ণার আস পাশের সব প্লাস্টিক , ময়লা একস্থানে জড় করে পুড়িয়ে ফেল্লাম। আপনারাও যখন যাবেন কোন ময়লাতো ফেলবেনই না। উল্টো সাথে নিয়ে এসে বাজারে নিদৃষ্ট স্থানে ফেলবেন বা পুড়িয়ে ফেলবেন।

ছবি:- “লিভ নো ট্রেস।“  পরিবেশ বাচানো ও সৌন্দর্য রক্ষা করা আমাদের ডিউটি।

তো এবার ফেরার পালা। তৃতীয়বার যেয়েও পুরাটা শেষ করতে পারলামানাতবে যা পেলাম তা কম নাকারণ দিনটা অনেক মজার ছিলআর নতুন কিছু কেসকেড বা ঝরনাও দেখা হলো মোট কথা ট্রিপটা সেইরাম হলো।

[ নোট:- কিভাবে যাবেন এ ঝরনায় ? প্রথমে বড়তাকিয়া বাজারে যাবেন এটা মিরসরাই বাজার থেকে চট্রগ্রামের দিকে কিছু কি:মি আগে। চট্রগ্রাম থেকে বাস ভাড়া ৫০ টাকা। বড় তাকিয়া থেকে সিএজি নিতে পারেন বা হেটে রওনা দিতে পারেন। বাইপাসের শুরতেই একটা সরু পাকা রাস্তা পুর্ব দিকে চলে গেছে সেটা দিয়ে নাক বরাবর হাটতে থাকুন। স্থানিয় দের প্রশ্ন করুন। সিএজি ভাড়া ৫০-৬০ টাকা । আর আমরা বাংলাট্রেকের লিখাটা পড়ে দেখতে পারুন। দেখুন এখানে :- http://www.banglatrek.org/?p=1144  এ লিংকে একটা ম্যাপ দেওয়া আছে যার ফর্মেট “KMZ” এটা কম্পিউটারে গুগল আর্থ আর স্মার্ট ফোনে গুগল ম্যাপে খুলবে।
  
টিপর্স :- শুকনো খাবার নিন সাথে। পর্যাপ্ত পানি ও লবন নিতে পারেন .. প্রচুর ঝোক ওখানে। আর একটা দড়ি নিয়ে গেলে অনেক কাজ দিবে মূল ঝরনার উপরে স্টেপ গুলা টপকাতে।  ]

সবতো লিখে দিলাম। তা ও কিছু জানতে চাইলে আমার ফেসবুকে নক করতে পারেন এখানে

আমার অন্যান্য কিছু লিখা :- ১/ ছোট দারগার হাটের সহস্রধারা ঝর্ণায় একদিন।
                                ২/ ভারত ভ্রমণ :- পর্ব আগ্রা ( Land of immortal Love)
                                ৩/  ছেঁড়া দ্বীপে ক্যাম্পিং ।
                                ৪/  সোনাদিয়া দ্বীপে ক্যাম্পিং।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন