৫ – মে – ২০১৩
----------------------------------------------
এখন সময় ৯টারও বেশি , যদিও আমাদের সকাল সকাল বের হওয়ার
কথা। সায়েমকে ঘুম থেকে উঠাতে উঠাতে এত দেরি। আমরা যখন অলংকার মোড় এসে বাসের জন্য
দাড়ালাম তখন সুর্যটা পুরা জেগে উঠে গরমটা বাড়িয়ে দিল। আমি আর সাফায়েত মিলে
ইনস্টান্ট নুডলর্স আর সুপ নিয়ে নিলাম। লোকাল একটা বাসে উঠে বসলাম আমরা । আমি ,
সায়েম , তৌকির আর সাফায়েত , আসাদ ভাই জয়েন করবেন সিতাকুন্ড থেকে উনার বাসা
সেখানেই। বাস আমাদের ১১ টার মধ্যেই সিতাকুন্ড নামিয়ে দিল। আসাদ ভাই সেখানে আমাদের
জন্য অপেক্ষা করতেছিল। সিতাকুন্ডে নামার দুটা উদ্দেশ্য ছিল।নাস্তাটা সেরে নেওয়া আর
আসাদ ভাইকে পিক আপ করা। নইলে বাস একেবারে আমাদের ছোটদারগা হাটেই নামিয়ে দিত। সব
শেষে যাত্রা শুর হলো। একটা সিএনজি নিয়ে আমর ছোট দারগা হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
|
ছবি:- যাত্রা তবে শুরু। |
সিএনজি থেকে নামলাম একটা ভাংগা রাস্তায়। এর পরই হাটা।
আমাদের উদ্দেশ্য ছিল প্রথমে “অগ্নিকুন্ড” দেখবো। তার পর সহস্রধারা ঝরণায় যাবো। হাটা শুরু হলো। প্রচন্ড গরম পড়লেও ,
পাহাড়ী আর গ্রাম্য রাস্তায় ভালই লাগছিল।
|
ছবি:- শুরু হলো হাটা হাটি। |
সহস্রধারা যাওয়ার পথেই হাতের বাম পাশের একটা ট্রেইলে
পড়বে অগ্নিকুন্ড আর ডান পাশে একটা পুরানো মন্দির। মন্দিরের উপরেই একটা পাহাড়ি
পাড়া। আমরা অগ্নিকুন্ডে গিয়ে হতাশ হলাম। অনেক পাথর মেরেও আগুন ধরাতে পারলামনা। (
গত বছর জুমন , নাহিদ আর আমি যখন গিয়েছিলাম তখন ছোট একটা পাথর মারলেই ধুপ করে আগুন
ধরে যেত এই ছোট্ট টিলাটায়। ) ওদের বললাম বেড লাক ওদের। কিন্তু হটাত দেখলাম একটা
চিপা ছরা / ঝিরি পথ দিয়ে পানি বের হয়ে আসছে। সবাই মিলে ওই ছরাই অনেক্ষন হাটলাম।
অসাধারণ সুন্দর ছিল ওই ছরাটা। কোথাও কোথাও গুহার মত। বড় বড় পাথর পড়ে আছে সত্যি খুব
সুন্দর।
|
ছবি:- এই সেই ছড়ার/ছরা / ঝিরি পথ শুরু। |
|
ছবি:- দেখতে কাদা মনে হলেও পুরাটা পাথর। |
|
ছবি:- হাটা হাটি। |
তকি কয়েকবার আছাড় খেল। ব্যাথাও পেল।
|
ছবি :- এই পাথর ছুয়ে ছুয়ে হাটা । |
|
ছবি :- যেন গুহা। |
আমরা আনেক ভেতরে গেলাম। কিন্তু একস্থানে এসে দেখলাম পথ
বন্ধ। যাওয়ার রাস্তা নেই। তাই আবার ফিরতি পথ ধরলাম। পথেই দেখলাম একটা গাছে প্রচুর
আম। আছাদ ভাই পাথর ছুড়ে অনেক গুলো আম পাড়লো। ঝোক ধরার জন্য যে লবন এনেছিলাম সেটা
দিয়ে কাচা কাচা আম গুলা আমরা ভাগ করে খেয়ে ফেল্লাম। দুরে একটা গ্রাম দেখা যাচ্ছিল।
আমি ভয়ে ভয়ে ছিলাম গ্রাম বাসি এসে না আবার আমের মালিকানা দাবি করে।
|
ছবি:- ছোট্ট একটা গ্রাম। নিচেই বছরের পুরানো মন্দির। |
আবার হাটা শুরু করলাম আমরা। উদ্দেশ্য বুদবুদ কুন্ড দেখা
অতপর সহস্রধারা ডেমের কারণে সৃষ্ট লেকের পাড় ধরে সহস্রধারায় যাওয়া।
|
ছবি:- ডেমের উপর উঠার সিড়ি। |
ডেমে ওঠে আমি থ !! কোথায় লেক !! পানি নাই লেকটা একটা ছোট
খাল বা ঝিরি পথে রুপান্তর হয়েছে। গত বছর এইখানে দিব্যি একটা লেক ছিল। কলা গাছের
ভেলা ছিল। কিন্ত গেট খুলে দেওয়ায় পানি সব বের হয়ে গেছে। অতপর আমরা পানি শুন্য
লেকেই নেমে গেলাম। খালটা ধরে হাটা শুরু করলাম। এটাই এখন ঝর্ণায় যাওয়ার পথ। একটু দুরে ঝিরি পথটা দু - দিকে চলে গেছে। আমরা ডান পাশেরটা দিয়ে গেলাম।
|
ছবি :- এই সেই পানি শুন্য লেক। |
|
ছবি:- পাথুরে ঝিরি পথ। |
|
ছবি:- ওই দুরে দেখা যায় সহস্রধারা ঝর্ণা। |
ঝরর্ণা দেখে সবাই কাপড় ছেড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে পড়লো
পানিতে। পানির পরিমাণ অল্প থাকলেও অনেক উপর থেকে পড়ায় এর চাপ ছিল বেশ। সুই এর মত
ফুটতেছিল শরীরে।
|
ছবি :- সহস্র ধারা ঝরণা। |
|
ছবি:- সুইর মত ফোটে এ পানি। |
চুলোই সুপ , নুডুলর্স রান্না বসিয়ে দিলাম। রান্না হতে
লাগলো আর আমরা গোসোল করতে লাগলাম। সায়েমকে দেখলাম রেইনকোর্ট পড়ে ঝরনার নিচে বসে
আছে। সুই এর মত পানি থেকে বাচার শ্রেষ্ঠ উপায়ও বটে।
|
ছবি:- রান্না হচ্ছে ছোট চুলায়। |
|
ছবি:- সায়েম রেইনকোট গায়ে ঝরনার নিচে। |
আমরা অনেক্ষন গোসোল করলাম। সহস্রধারা ঝরনাটার উপরে আরো
কয়েকটা ঝরনা থাকলেও আমরা উপরে না উঠে আরেকটা ঝরনায় যাওয়ার প্লান করলাম। হাতে সময়ও
কম। সিতাকুন্ডে আজ একটা বারবিকিউ পার্টি আছে। তাই আমরা “হরিণ মারা” নামের একটা
ঝরনার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এখানে একটা লেকও আছে। হাটু ভাঙ্গা নামে আরেকটা ঝরনাও
আছে। এ স্থানে আমি প্রথম আসি জাফর ভাই , রুপা দিদি , তৌহিদ ভাই , লিমন ভাই সহ একটা গ্রুপের সাথে আরো ৮-৯
মাস আগে। তাই রাস্তা ঘাট পরিচিত ছিল। গ্রাম্য রাম্তায় হাটা শুরু হরো। রাস্তাটা খুব
সুন্দর । গ্রাম গুলোও খুব সুন্দর। ছবিতেই দেখুন:-
|
ছবি:- দি গ্রিন লেক। |
|
ছবি:- পাথুরে ঝিরি পথ। |
|
ছবি:- ঝিরিতে হাট চলছে। |
এই ঝরনার লোকেশনটা এখনো তেমন প্রচার হয়নি। আমিও চাই এটা
ওরকেমই থাক। যতদিন আউল – ফাউল টুরিস্টরা এসে পলিথিন , চিপসের পেকেট ফেলবেনা ততদিন এটা ভালই থাকবে।
|
ছবি:- হরিণ মারা ঝর্ণা |
|
ছবি:- হাটু ভাংগা ঝর্ণা |
আমরা সীতাকুন্ড ফেরত আসলাম। আসাদ ভাইর বাসায় বিরানি
রান্না হলো। মুরগী ধরে জবেহ করা হলো। বারবিকিউ করা হলো। এলাকার পরিচিত জনরা এলো।
সবাই মিলে হই হুল্লড করে বারবিকিউ পার্টি করে ঘুমাতে গেলাম। কিছু ছবি দিয়ে শেষ
করলাম।
|
ছবি :- বিরানি খাওয়ার পালা। |
|
ছবি:- বারবিকিউ। |
|
ছবি:- আগুন নিয়ে খেলা নয়। |
|
ছবি:- সকালে আমরা একটা গ্রুপ ফটো। |
[ নোট:- ঝরনায় কিভাবে যাবেন ? যাওয়ার আগে ঝরনায় যা যা
করবেননা তা বলে দি। পলিথিনের প্যাকেট , বা কোন ময়লা ফেলে আসবেননা। উল্টো যা যা
পাবেন আগের ময়লা আবর্জনা তা একটা পলিথিনে ভরে শহরে এনে ফেলুন। ঝরনার অপরুপ রুপ
দেখতে গিয়ে তা ধবংস করার কোন মানে হয়না। এর থেকে ওই খানে না যাওয়াই ভালো।
সহস্রধারায় যেতে আপনাকে সিতাকুন্ডের “ছোট দারগা” হাট বাজারে
যেতে হবে। সিতাকুন্ড থেকে ছোট দারগার হাটের লোকাল সিএনজি ভাড়া ১০ টাকা। চট্রগ্রাম
থেকে বাস ভাড়া ৩৫ টাকা। এরপর শুধুই হাট নাক বরাবর সোজা। ৩০-৩৫ মিনিটও লাগবেনা ডেম/
লেকে পোছাতে। পথেই অগ্নিকুন্ড , মন্দির , বুদবুদ কুন্ড দেখে ফেলতে পারেন। আরো
বিস্তারিত পেতে বাংলাট্রেকের আমার এ :- [http://www.banglatrek.org/?p=1008 ] লিখাটি
পড়তে পারেন। এতে আমি সহস্রধারা দুই নামে এর পরিচয় দিয়েছি , যাদের নামটা শুনে চুলকানি
হবে তাদের বলি , নামটা আমি ইচ্ছে করেই দিয়েছি। কারণ একই “সহস্রধার” নামে আরেকটা
ঝর্ণা আছে সিতাকুন্ড ইকো পার্কে। তাই চিনতে সুবিধার জন্য ১-২ যোগ করে দিয়েছি নামের
পরে। তো যাই হোক ওই ঠিকানাই একটা গুগল আর্থ “ KMZ “ ফাইলও পবেন যেটা পিসিতে গুগল আর্থ
থাকলে আর মোবাইলে গুগল ম্যাপস থাকলে ওপেন হবে।
হরিণ মারা ঝর্ণার ঠিকানা পাবলিকে শেয়ার করলামনা। জায়গাটা
এখনো আনটাচর্ড টুরিস্ট দের থেকে। সেরকমই থাকুক। সেটাই চাই। ]
আর কোন প্রশ্ন থাকলে আমার ফেসবুকে নক করুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন