১১ নভে, ২০১৩

রিসাং ঝর্ণা আর আলুটিলার পথে।



এই ইভেন্টটা ACC বা এডভেন্চার ক্লাব আব চিটাগাং এর প্রথম অফিসিয়াল ইভেন্ট ছিল। এর আগেও ACC অনেক ক্যাম্পিং এবং ভ্রমণ ইভেন্ট করলেও এটা ছিল তাদের বা আমাদের প্রথম অফিসিয়াল ভ্রমণ ইভেন্ট। তখন আমি এ গ্রুপটার সাথে খুব ভালো ভাবেই যুক্ত ছিলাম। আমাদের আড্ডা বসতো চট্রগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স এর পেছনের একটা গলিতে। এই আড্ডার মধ্য মনি সবসময় থাকতো মো: জাফর বেগ ভাই। আর ১৫০ সি:সি মোটর বাইক নিয়ে সবসময় দেরি করে আসতো চন্দন ভাই। সেই আড্ডা খানায় লেবু দেওয়া রং চা খেতে খেতে একদিন হুট করেই প্লান হলো যে আমরা খাগড়াছড়ি যাবো। রিসাং ঝর্ণায় প্যান্ট ছিড়বো। আলুটিলার গুহায় হারিয়ে যাবো। :-


অতপর, ফেবুতে ইভেন্ট হলো। প্লানিং হলো। যদিও একদিনের ছোট্ট একটা হাইকিং ইভেন্ট। শেষে আমি , চন্দন ভাই ,  ফয়সাল ভাই , নওশাদ ইমতিয়াজ ভাই , নোমান ভাই , স্বপ্ন তরী আর শিল্পি মানুষ আমাদের সবচেয়ে সিনিয়র গোতম দা মিলে এক সকালে আমরা রওনা দিলাম।
সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যে সবাই আমরা অক্সিজেন মোড় চলে আসলাম। শান্তি পরিবহন এর টিকিট কাটা হলো। সোজা খাগড়াছড়ি। বাস ছাড়ার আগে একটা দোকানে আমরা চা খেলাম। খুজুর বিস্কিট কেনা হলো পথের জন্য। আমাকে জোর করে ম্যানেজার বানানো হলো। সো আমার ঘাড়ে দিব্বি কাগজ কলম নিয়ে লিখালিখির দায়ত্ব দিয়ে তারা হাসা হাসি করতে লাগলো। যাত্রা সঠিক সময়ে শুরু হলো। বাস খালি মানিকছড়ি একবার দাড়ালো। এরপর সেই বাস আমাদের খাগড়া ছড়ি মূল শহরের কিছু কি:মি আগে রাস্তায়  নামিয়ে দিল। এখান থেকেই হাটা শুরু।

ছবি:- আমাদের ভুড়ী ওয়ালা টিম।
 হাটা রাস্তাটা খুবই সুন্দর । তবে সাধারণত সবাই ইটের রাস্তা দিয়ে গিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে ঝরণায় যায়। কিন্ত চন্দন ভাই আমাদের একটা বিকল্প একটা রাস্তায় নিয়ে গেল যেটা পাহাড়ি রাস্তা আর গ্রামের মধ্যে দিয়ে। অসাধারণ ট্রেইল।
ছবি:- ইটের রাস্তা ছেড়ে পাহড় দিয়ে যাত্রা শুরু।
   একসময় আমরা একটা পাড়া দেখলাম। ছোট কিন্ত খুব সুন্দর। হাটতে ভালই লাগতেছিল।

ছবি:- পাড়ায় একটা শুকর।
ছবি:- নির্মম ভাবে কেটে ফেলার পরও এটা এত্ত সন্দর !!

ছবি:- জুম ঘর।

একসময় ট্রেইলটা একটু একটু পিচ্ছিল পাথরে আর রাস্তায় এসে পড়লো। আমাদের মত সাস্থবান ট্রেকারদের জন্য একটু কঠিন ই ছিল। পিছলে পড়তে পড়তে বেচেছি কয়েকবার। কিছু ছবিএ তুললাম এর মধ্যে আমরা।

ছবি:- চন্দন ভাই আগে আগে ডিএসএলআর হাতে। ফুটোগ্রাফার :পি

ছবি:- আমি রিসাং ঝর্ণার একটু উপরে।

ছবি:- ট্রেইল।

ছবি:- পাহাড় বেয়ে নামা।
অবশেষে আমরা ঝরনার দেখা পেলাম এবং পানি দেখে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। এত্ত অল্প বৃশ্টি। আমরা যে এত্তগুলা থ্রি কোয়াটার প আর টি শার্ট আনলাম তা ফাউ। কেউই এই অল্প পানিতে গোসোল করতে রাজি হলোনা। যদিও ঝরনার নিচে এবং আশে পাশে অনেক ছেঁড়া , ফাটা প্যান্ট দেখেলাম। মানুষ গোসেল করে ভাল কথা এ ঝরনায় ওয়াটার স্লাইড করে ভাল কথা প্যান্ট গুলা সাথে নিয়ে গেলেই তো পারে। পুরা ঝরনার এরিয়াটা কি কিৎসিত বানিয়ে ফেলল এ প্যান্ট , প্লাস্টিক ফেলে। মনটাই খারাপ করে দেয়।

 

ছবি:- পানি শুন্য রিসাং ঝর্ণা। 
ছবি:- পাহাড়ি তরুণের ওয়াটার স্লাইডিং চলছে।

ছবি:- ঝরনার সামনে পাহাড়িদের সাথে আমাদের একাংশ।
এরপর আমরা ঝরনার এ বেহাল দশা দেখে মন খারাপ করেই উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। এবার পাহাড় বেয়ে নয়। সিড়ির রাস্তা ধরে। পর্যটন থেকে এখানে সিড়ি করা হয়েছে। ওঠার সময় দেখলাম একটা দোকানও করা হচ্ছে। হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। আমরা দোকানে আশ্রয় নিলাম। বৃষ্টি দেখে নোমান ভাই আবার ঝরনায় যাওয়ার আগ্রহ দেখালো। কেউ উনার কথায় কান দিলনা। বুড়াদের দল সব। আবার এ সিডি বাইতে হবে ভেবেই সবাই চুপ করে রইল।
তো শেষ মেষ সবাই ছবি তোলায় ব্যাস্ত হয়ে গেল। বিভিন্ন পোস দিয়ে। নোমান ভাই এপিক একটা ছবি তুলে দিল আমাদের। ভাল কথা এ পোস্টের বেশিরভাগ ছবি-ই নোমান ভাইর ক্যামরাই তোলা। আমি মেরে দিয়েছি। :পি

ছবি:- আমরা হালকা বৃষ্টিতে পোস দিলাম।

এরপর আমরা ইমতিয়াজ ভাইয়ের ব্যাবস্থা করা জিপে করে রওনা দিলাম আলুটিলার উদ্দেশ্যে । জীপটা উনার ভাইয়ের , ফরেস্ট অফিসারের ভাই ইমতিয়াজ ভাই। তাই ফ্রিতেই পাইলাম এত্ত সুন্দর জীপটা। সরকারি মাল দরিয়ায় ঢাল ... হি হি হি
 রিসাং থেকে খাগড়া ছড়ি শহরের দিকের রাস্তায় অল্প উঠার পরেই পড়লো আলুটিলা গুহায় যাওয়ার গেইট। ফরেস্ট অফিসারের গাড়ি হওয়ায় টিকটি কাটতে হলোনা। উল্টো গেইটের দারওয়ান সালাম ঠুকলো আমাদের সবাইকে।

ছবি:- মুল গেইট।
সিড়ি দিয়ে নামার ঠিক আগেই একটা ছাউনি পড়ে এখানে আমরা হেড ল্যাম্প এবং মশাল ঠিক করে নিলাম। এরপরেই হাটু পানি মাড়িয়ে ঢুকে গেলাম ঘুটঘুটে অন্ধকারের গুহায়। দারুন মজা হলো। সবাই মহা করছিলাম ভেতরে আমরা একমাত্র গোতম দা ভয় পাচ্ছিল। উনি প্রায় দৌড়ে গুহার আরেক পাশ দিয়ে বের হয়ে গেলেন। ছবি নিচে।
ছবি:- বার্ড আই ভিউ।


ছবি:- গুহার ভেতরে আমরা।
ছবি:- আমরা।

ছবি:- নোমান ভাই মশাল হাতে।
ছবি:- অবশেষে দিনের আলো। ছবি:- অবশেষে দিনের আলো।

ছবি:- বের হচ্ছি আমরা।
ছবি:- অসম্ভব সুন্দর সিড়ি। তবে এটা না থাকলে মনে হয় আরো সুন্দর হতো প্লেসটা।
ছবি:- সবার একটা গ্রুপ ফটো।
এরপর আমরা খাগড়াছড়ি কলেজ রোডে একটা হোটেলে খেয়ে নিউজিল্যান্ড নামে একটা স্থানে ঘুরতে গেলাম। এ জায়গাটা একেক জনের কাছে একেক রকম। কেউ হয়তো বলবেন এটাতো একটা ধানের খেত। আবার অনেকের কাছে এটাই সুন্দর। এরপর আমরা ফরেস্ট অফিসারের বাসায় পরিস্কার হয়ে একটু রেস্ট করে চট্রগ্রামের পথে রওনা দিলাম।

[ নোট:- কিভাবে যাবেন ? ঢাক থেকে সরাসরি যেতে পারেন। বা চট্রগ্রাম থেকে শান্তি পরিবহন ছাড়াও অনেক বাস যায়। ভাড়া ১৭০-২০০ টাকা। কন্ডাক্টার বা ড্রাইভারকে বলে রাখবেন যে আপনারা রিসং ঝর্ণায় যাবেন তাহলে সে আপনাদের ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তায় নামিয়ে দেবে। মনে রাখবেন ঝর্ণাটা কিন্তু খাগড়া ছড়ি শহরে যাওয়ার আগে পড়বে।
এরপর সিএজি বা চাদের গাড়ি করে আলুটিলা যেতে পারেন। গেটের টিকেট মনেহয় ১০ টাকা করে। আর মশালও পাবেন ৫-১০ টাকা করে গেটের ভেতরে ছাউনিতে।  

দয়া করে রিসাং ঝর্ণায় প্যান্ট ছিড়ে গেলেও ফেলে আসবেননা। ভেজা প্যান্টা পলিথিন ব্যাগে করে শহরে এনে ডাস্টবিনে ফেলুন। আর পলিথিন ব্যাগ , চিপসের প্যাকেট এসব ময়লাও সাথে করে শহরে এনে ডাস্টবিনে ফেলুন। ] 

1 টি মন্তব্য:

  1. অনেক সুন্দর।
    ঢাকা থেকে গেলে তো হোটেল এ থাকতে হবে।
    কাছাকাছি কোন হোটেল এ থাকলে ভাল হবে?

    উত্তরমুছুন