১৩ অক্টো, ২০১৩

বান্দরবানে হারিয়ে যাওয়ার গল্প।

শেষ কবে বান্দরবান গিয়েছিলাম ? এইতো কদিন আগেইতো। কিন্তু সেগুলো ছিলো সিটি ট্যুর বা কোন কাজে। এডভেন্চারের উদ্দেশ্যে বহুদিন বান্দরবান যাওয়া হয়না। শেষ এডভেন্চারের গিয়েছিলাম নাপাখুম / নাফাখুম। এরপর সীতাকুন্ড , মীরসরাইয়ে এডভেন্চার , হাইকিং এবং ক্যাম্পিং এর লোভে আটকা পড়েছিলাম। বাংলার স্বর্গের কথা ভুলতে বসেছিলাম। তাই উঠে পড়ে লাগলাম। চাতুর কাক ভাই,রাব্বি ভাই এবং সালেহীন ভাইকে খুচিয়ে খুচিয়ে তথ্য সংগ্রহে লেগে গেলাম। মেলা পিড়া দেওয়া শুরু করলাম তাদের :P । অনেক প্লান করলাম। রুট ঠিক করলাম। গুগল আর্থে ওই স্থান গুলোই ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে বাসায় বসে বসেই ঘুরতে লাগলাম। হাফ ঘুরাতো গুগল আর্থেই যেন সেরে ফেল্লাম। একবার প্লান হয় ক্রিজ হাং / তাং যাবো বা আরেকবার প্লান করি টোয়াইন খালে ঘুরবো এদিক সেদিক। ফেসবুকে ইভেন্ট হলো। জুমন ভাইকে হোস্ট বানালাম। কিন্তু বেটা শেষ মুহুত্বে পিঠ দেখালো। বন্ধুর বিয়ে। বান্দরবানের মুরং তরুণীদের সাথে দেখা করার থেকে তার কাছে তখন বিয়ের আসরে নতুন ভাবী আর তার বোনদের সাথে দেখা করার আগ্রহ বেশী ছিল। যাই হোক শেষ মুহুত্বে সে বাদ গেল। এর পর রুপা দিদি ... যিনি প্রায় দুই মাসের মত আমাদের সাথে এই ট্রিপে যাওয়ার প্লান করতেছিল তিনি শেষ মুহুত্বে একেবারে বাসে উঠার ঘন্টা খানেক আগে ফোনে বলল সজল আমি যাবোনারে , অফিসের জরুরী মিটিং .. মনটাই খারাপ হয়ে গেল। শেষে চট্রগ্রাম থেকে ২৬-০৯-২০১৩ তে বিকাল চারটায় শুধু আমি আর হাফিজ ভাই রওনা দিলাম। ঢাকা থেকে তপন দা , প্লাবন ভাই আর দলের সবচেয়ে কিউট ছেলে ইউসুফ ভাই রওনা দিল।

এ ট্রিপে অনেক কিছুই হইছে। আমরা পথ হারাইছি , তপন দাদার (উনাকে শহরে ভাই ডাকা যেতে পারে ) ঝারি খাইছি :P , ঝোঁকের সাথে যুদ্ধ করছি , তপন দাদা জিপিএস নিয়ে ডিসপ্লের দিকে তাকিয়ে যেদিকে হাটা ধরছে , তার পেছন পেছন আমরা ভেড়ার পালের মত খালি হাটছি আর উঠছি , রাতে সাংগা দাদার জুম ঘরে রাত কাটাইছি , সজারুর কাচা মাংস খেয়ে ওয়াক থু থু করছি। কই যে গেছি নিজেরাও যানিনা।
হা এখন বলতে পারেন ট্রিপে আমরা কোনটাই সফল হইনি। না ক্রিজ হাং এর সামিট পয়েন্টে গেছি না রুংরাং এর সামিট পয়েন্ট পাইছি। আবার টোয়াইন খালের ধরে বেশি দুরও যাইনি। কি ? মনে মনে বলতেছেন .. হুর ভুয়া ট্রিপ দিসে...কিস্সুই তো হইনি এই ট্রিপে।  আমি বলবো সবকিছু যদি প্লান মত হয় তবে সেটাকে এডভেন্চার বলেনা , আর একটা ভ্রমণ যাত্রায় আমার মতে গন্তব্যের থেকে যাত্রাটায় বড়। এই ট্রিপটা আমার করা সেরা ট্রিপগুলার একটা অবশ্যই। আর হাফিজ , তপন দাদা , প্লাবন ভাই আর ইউসুফ ভাই ছাড়া এটা সম্ভব ছিলনা।

আরে কই যান ? উপরের লিখা গুলাতো শুরু ছিল .. মুল গল্প নিচে। :-


২৬/০৯/২০১৩
----------------------------------------------------
আমি স্বপ্ন থেকে শপিং করলাম। আর কি ক্যাম্প ফুড শপিং। চাল ,ডাল , নুডুলর্স , সুপ এটা সেটা হাবিজাবি। পুরা ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপের প্লান , সব নিজেরা রান্না করবো , তাবুতে থাকবো এরকম ইচ্ছে। মাশরুম কিনলাম রুপা আপার জন্য বেচারি আবার ভেজিটেরিয়ান। কিন্তু শেষ মুহুত্বে বলল উনি যাবেননা ট্রিপে। খাইছে ... এই মাশরুম আমি পুরা ট্রিপে কার জন্য বহন করবো ? পুরা ৫০০ গ্রাম ওজন। মনে মনে ঠিক করলাম ... ট্রিপ শেষে রুপাদির খবর নিতে হবে। হুহ...

যাক তাবু , দড়ি , ফুয়েল , চুলা , ফুড প্যাক সমেত বিশাল হল ব্যাকপ্যাকটা। ওজন দখে প্রথম প্রশ্ন ছিল নিজেকে নিজের ... এ বস্তু নিয়ে আগামি ৪-৫ দিন হাটবো কেম্মে ?


ছবি :- সব আমার এই ব্যাগে ডুকাতে হবে। কেমনে কি? :( 

আমি আর হাফিজ রাতে পৌছে হোটেল ডি৪ এ উঠলাম। প্রথম রাতের খাবার ছিল সুপ নুডুলর্স আর কফি। রাতে এক ফোটা ঘুমাতে পারেনি আমরা । বিছানায় ছার পোকাই ভর্তি ছিল। শুধু চুলকাইছি আর চুলকাইছি সারা রাত। :D আর বেটা হাফিজ সাহেব স্লিপিং ব্যাগ না এনে এনেছে একটা স্লিপিং প্যাড। গরররর ... :P

২৭/০৯/২০১৩
------------------------------------------------------------------------------------
সকালে তপন দার ফোন । উনারা পৌছেছে .. তখন প্রায় সকাল ৯:৩০ । অনেক দেরি হয়ে গেল। আমার হোটেল চেক আউট করে উনাদের সাথে যোগ দিতে বাস স্টেশান গেলাম। উনাকে দেখে টাসকি খাইলাম ... চেনা যায়না। তপনদাদা বোধহয় বান্দরবান আসা যাওয়া করে বলে লাস্ট কয়েক সপ্তাহ দাড়ি কাটেনি। ঘন জংগল তো উনার মুখেই।( জিপিএস এর সিগনালের সমস্যার মুল কারণ এ ঘন জংগলটাও হতে পারে।)
যাই হোক বাকি সবার সাথে আগে থেকেই হালকার উপর ঝাপসা পরিচয় ছিল। শুধু ইউসুফ আর হাফিজ এই দুই ভাইয়ের সাথে এটা আমার প্রথম ট্রিপ। যাত্র শুরু হলো। বান্দরবান হিয়ার উই কাম।
ছবি:- ভাংগা চুরা জিপে বান্দরবানের পথে।
তপন দা হচ্ছে সে ব্যাক্তি যিনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মধ্যেও গোলাগুলির মধ্যে চেগাই ঘুমাতে পারবে। সো বুজতেই পারতেছেন .. জিপে উনি পাশের একটা শক্ত সামথ্য , সুন্দর যুবকের কাধে মাথা রেখে পুরা ১.৫ ঘন্টা ঘুমালো। আর আমরা পেছনে বসে খালি ঝিমাইছি। যা হোক আমরা টোআইন খালে নেমেই চিন্তা করতেছি যে ইভেন্ট প্লানে যাবো। তপন দাদা বলল এখানে নাকি একটা শর্ট-কার্ট আছে দুসরী বাজারে যাওয়ার ... যদিও আমি অলঅয়েজ প্লান অনুযায়ী থাকতে চাই , কিন্তু দাদা বলছেন তাই উনার পিছে পিছে হাটা দিলাম। হাটছি আর হাটছি ...
ছবি:- সহজ ট্রেইল ছিল প্রথম প্রথম।

হটাত করেই আমাদের উপরে উঠতে হলো। উঠতে উঠতে আমার একটা পাহাড়ের চুডায় উঠলাম। যানিনা কি পাহাড় , উচা ছিল। দিগন্ত পর্যন্ত দারুন ভিউ ছিল।
ছবি:- ওই দেখা যায় টোয়াইন খাল।
ছবি:- দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভিউ দেখি।
এই চুড়াই আমরা অনেক্ষন বসে ছিলাম। হাফিজ ভাই জোকের প্রথম কামড় খেল পাছাই। আর যখন ট্রিপে একজনকে ঝোকে ধরে তখন অটোমেটিকলি সবাইর চুলকানি শুরু হয়ে যায়। সবাই খালি তখন পেন্টের ভেতরে হাত ডুকাই ঝোক খুজে , সে ঝোক থাকুক আর না থাকুক।

যাই হোক বৃষ্টি মাথায় করে আমরা প্রথম গ্রামে এলাম। গ্রামের নাম জানতে পারিনি। জুম ঘরে শুধু কিছু মুরং বাচ্চা কাচ্চা ছিল। আধ নেংটো বাচ্ছা গুলো বাংলা বুঝেনা । খালি ভুট্টা চিবাই আর হা করে তাকিয়ে থাকে। আমরা অতপর আবার হাটা শুরু করলাম। প্রচুর প্রাকৃতিক দৃশ্য চারপাশে। পাহাড় গুলা এত্ত সুন্দর। কি বলব। ছবি কম দিচ্ছি। নইলে আবার আপানাদের চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে :P। ( পোস্টের শেষে আমার এলবাম লিংক দিলাম , সব ছবি ওইখানেই দেইখেন। )
ছবি:- বৃষ্টির পরে ।
 ছবি:- মডেল:- প্লাবন ভাই।
ছবি:- জুম ঘর।
ছবি:- ট্রেকিং।
আমরা হাটতেই লাগলাম। উঠতেই লাগলাম।  একসময় আমরা আবার টোয়াইন খাল দেখলাম। গত দেড় ঘন্টা কিন্তু আমরা এ খালের দেখা পাইনি। কিন্তু গতকাল রাতের বৃশ্টির কারণে খালে পানি বেশি ছিল। তাই আমরা হের মেন পাড়া নামে একটা পাড়ায় উঠলাম। অনেক রিকুয়েস্ট করার পর একটা ইন্জিন চালিত বোটের ব্যাবস্থা হলো। বোট রাইড টা অসাম ছিল। আমরা স্রোতের বিপরীতে যাচ্ছিলাম। তাই বোটের দুলনী , মুরং দাদাদের বোটের লগি নিয়ে যদ্ধ সব সেইরকম ছিল। বোটে পানি উঠতেছিল। একবার তো ইন্জিনে পানি ডুকে গেল। আমরা যখন দুসরী বা দৈসরী বাজার ঘাটে নামলাম তখন প্রায় সন্ধ্যা। প্রচন্ড স্রোতের বিপরীতে চলার কারণে এত দেরি।
ছবি:- বোট যাত্রা।
বোট কিন্ত ফিরতি পথে ইন্জিন বন্ধ করেই রওনা দিল। আমরা দুর থেকে দেখলাম। ইন্জিন ছাড়ায় তখন ওটার গতি স্পিড বোটের। রাত হয়ে যাওয়াই আমরা আর আজই হাইকিং বা ক্যাম্পিং করলামনা। আমরা তানচাংগা দাদার ঘরে রাতে থেকে গেলাম। রাতে সাথে আনা স্টোভে রান্না হলো খুচুড়ী আর মাশরুম । আমরা সুদুর ঢাকা থেকে শেফ নিয়ে এসেছিলাম। ইউসুফ ভাই ভালই রান্না পারে। ভাল একটা খাবারের পর ঘুমাতে গেলাম আমরা। টোটেং নামে আজিব একটা প্রাণীর ডাক শুনতে শুনতে ঘুমাতে গেলাম। আমাদের স্লিপিং ব্যাগ আর চাদর শর্ট ছিল।  তাই শেয়ার করতে হচ্ছিল।  আমি আর হাফিজ ভাই এক চাদরের নিচে , রাতে একবার আমি চাদর টেনে নিয়ে ঘুমাই তো আরেক বার উনি হেচকা টানে নিয়ে ঘুমাই। চাদর দখলের যুদ্ধ করতে করতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে এলার্ম ক্লকের মত আমাকে আর হাফিজ ভাইকে টোটেং নামেরে প্রাণীটা উঠিয়ে দিল। হাফিজ ভাই উঠেই দোড় .. বাথরুম করবেন। নিলর্জের মত পাড়ার দিদি কে প্রশ্ন করলো দিদি টয়লেটা কোন দিকে ? দিদি উচা একটা পাহাড় দেখিয়ে দিল। হাফিজ ভাই যে গতিতে গেছিল সেম গতিতে ফেরত আসলো সাথে সাথেই। উনার মুখ দেখেই বুঝলাম কিছু হইছে। নিজে থেকেই বলল উনি নাকি এত্ত ভয়ংকর টয়লেট আর দেখেন নি , একটা পাহাড়ের চুড়ায় দুইটা গাছ ফেলা , সেটাই কমোড। নিচে পড়লেই নাকি সর্বনাশ ... পরের দুই বছর খালি গোসলই করতে হবে। :P 
এত্ত ঘটনা ঘটে গেল । তপন দা দের খবর নাই ... নাক ডেকে ডেকে ঘুমাই। তাই আমি আর হাফিজ ভাই আশপাশটা ঘুরতে বের হলাম। উদ্দেশ্য থনকোআইন ঝর্ণা দেখবো। খালের পানি বেশি ছিল। আমরা কখনো কমোর পানি ককনো গলা পানিতে নামছি। ঝরণার কাছে যেতে পারিনি। দুর থেকে দেখে ফিরতি পথ ধরলাম। নিচে কিছু ছবি দিলাম। ঝর্ণার ছবি দিলামনা। সবাই খালি লোকেশন লোকেশন করে।
ছবি:- পাথুরে টোয়াইন খালে । এর পরেই পানি আর পানি।
ছবি:- রাইত মুনি পাড়া। শুধু এই পারাতেই স্কুল দেখলাম।
আমরা ঝর্ণা দেখে ফেরত আসলাম। দেখি তপনদারা মাত্র উঠছে। আমার ক্যামেরার ব্যাটারি তখন প্রায় শেষ। এখানে বিদ্যুৎ বা নেটওয়ার্ক কোনটাই নেই। কিন্তু সোলার চার্জার আছে। নাস্তা খেতে খেতে ব্যাটারিকে একটু বিদ্যুৎ খাওয়ালাম। এর পর চলল আমাদের দ:সাহসিক অভিজান। :P আমরা কতক্ষন ল্যেটাইছি আর আর কতক্ষন এডভেন্চার করছি।
ছবি:- খাল পারা পার। খেয়াল করেন এখানে পানির দুই কালার।
এপর খালি হাটছি আর হাটছি। ঝিরি ধরে। 
ছবি:- প্রকৃতির দরজা।
ছবি:- চুমুক ঝিরি।
 আমরা একটু গোসোল করার জন্য একটা ঝিরি/ঝর্ণায় বেশ কিছুক্ষন কাটালাম। গোসোল করলাম , সুপ নুডুলর্স দিয়ে নাস্তা সারলাম।
ছবি:- দুষ্ট ছেলের দল।
এরপরই শুরু হলো পথ হারানো। আমরা খালি উঠছি আর উঠছি। জিপিএস এ তখন প্রায় দেখাচ্ছে আমরা ১৭০০ ফিট উপরে। আমরা প্রায় খাড়াই পথে এ ১৭০০ ফিট উঠছি :পি এবং কোন পাড়ার দেখানেই। শেষ একটা জুম ঘর পেলাম। সাংগা দাদার জুম ঘর। এবং আমার জীবনের একটা বেস্ট রাত কাটাতে চললাম। সারা রাত জুম ঘরের সামনের বারান্দায় শুয়ে শুয়ে তারা দেখা। আর সেরাতেও আমরা খিচুড়ি আর মারফা খেয়েছিলাম। ও হা পপকর্ণ ও খাইছি। সজারুর কাচা মাংসের স্বাদ নিয়েছি। (সাংগা দাদার শিকার করা সজারু) ।
ছবি:- জুম ঘরে আমি।
ছবি:- এখানেই আমরা রাত কাটিয়েছি।


ছবি:- সাংগা দাদা।
সকালে সাংগা দাদা আমাদের পথ দেখিয়ে মেংকি বা ওইটাইপের নামের একটা পাড়ায় নিয়ে যায়। উনি না থাকলে এ পথ বের করা মিশন ইম্পসিবল ছিল।
ছবি:- পথে গুগল আর্থ ভিউ।
আমরা পাড়ায় পৌছে নাস্তা রান্না করলাম কারবারীর ঘরের চুলাই। আমাদের চুলার ফুয়েল বাচাচ্ছিলাম। তপনদার বুদ্ধি ফুয়েল বাচানো। 
ছবি:- পাড়া। নাম ভুলে গেছি মেবি মেংকি পারা।
এরপর আমরা রুংরাং পর্বত এর উপর দিয়ে কানচন পাড়ায় গেলাম। সেইরম কুত্তা বিলাই বৃষ্টি তখন। ভালই হলো আরেক দফা গোসোল।কারবারির ঘরের বারান্দায় সাবন মেখে জাম্পেস একটা গোসোল দিলাম।কানচন কারবারির সব কিছুতেই আগ্রহ। আমরা ক্যামেরা বের করি সে তা নিয়ে টেপা টিপি করে , আমরা ছুরি বের করি , লাইট বের করি সব তার দেখা দরকার । ইন্টারেস্টিং একটা পাবলিক। পারা / পাড়াটা যেমন সুন্দর তেমনি পাড়া থেকে রুংরাং পাহাড় আর মেঘের খেলা দেখাটা আসলেই সেরম ছিল। একটু পরপর পাড়াটা মেঘে ঢেকে যাচ্ছিল।
ছবি :- কারবারির ঘরের বারান্দা থেকে মেঘ আর পাহাড়।
ছবি:- কানচন পাড়ার অন্যান্য ঘর।
ছবি:- মেঘর খেলা।
ছবি:- গয়াল।
কান্চন পাড়ায় আমরা সাদা ভাত , আলু ভর্তা আর ডিমের ভর্তা খেয়েছিলাম। সকালে আমি আর হাফিজ ভাই বাকি টিম থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। ক্রিজ হাং বা তাং এর এত্ত কাছে এসেও সামিট হলোনা। আমাকে চট্রগ্রামে ফিরতে হবে ছুটি শেষ।  তপন ভাই , প্লাবন ভাই আর ইউসুফ ভাই রয়ে গেল সামিট করার জন্য।আর রুংরাং তো যাওয়ার পথে আবার পড়বে তখন আমরা আন অফিসিয়ালি সামিট করে নিলাম। ( অনঅফিসিয়াল কারণ সামিট পয়েট খুছে পাইনি। জংগল ছিল )
ছবি:- হাফিজ ভাই পার্ট নেয়।

ছবি:- ট্রেইল।
আমি আর হাফিজ ভাই দুজন একলা অচেনা পথে রওনা দিলাম। সেই মেংকি পাড়ার পর পথ চিনিনা। যাস্ট অনুমানের উপর হাটা। পথে ২ বার পথ হারালাম। সোজা একটা পদ্ধতি ব্যাবহার করলাম আমরা , কাল খুব বৃষ্টি হয়েছে সো কোন পথটা বেশি ব্যাবহার হয়েছে , কোনটা কম তা সহজে বুঝা যায়। আর তাজা পায়ের ছাপ খুজে খুজে একসময় আমরা ঠিকই জংগল থেকে বের হয়ে আসলাম। প্রায় তিন ঘন্টা ট্রেকিং শেষে আমরা জংগল থেকে বের হলাম। এর পর আবার ঝিরিতে ট্রেকিং। কতক্ষন পরপর কম্পাস দেখতে থাকি আর এগুতে থাকি।
ছবি:- ঝিরি।


ছবি :- খরস্রোত ঝিরি পারাপার।
কিন্তু এত সকাল সকাল এসেও লাভ হইনি । বোট ছেড়ে গেছে। যাওয়ার এখন একটাই উপাই আবার ট্রেকিং। নইতো কাল পর্যন্ত ওয়েট। একজন অবশ্য বাঁশের ভেলায় যাওয়ার অফার করল।কিন্তু ব্যাগ ক্যামেরার কথা ভেবে গেলামনা। কিন্তু ভেলা চলে যাওয়ার পর আফসোস হতে লাগলো। আর ব্যাকপ্যাকিং ট্রিপ এমনিও হয়নি তাই খাওয়া রান্না না করে পাড়ায় মুরগী , সবজি আর ভাত খেলাম পেট পুরে।
ছবি:- বাশের ভেলায়।
আর সেদিন যাওয়া হলোনা। বাশের ভেলাই না যাওয়াই চুল ছিড়তে ইচ্ছে হচ্ছিল। পুরা দিনটা এমনি এমনি কাটিয়ে দিলাম আমরা।ঠিক করলাম কাল সকালে আর বোটের জন্য অপেক্ষা করবোনা। সোজা হাটা ধরবো এমন প্লান করে ঘুমাতে গেলাম। সকালে উঠে দেখি হাফিজ ভাই নেই। তাই বের হলাম। দেখি হাফিজ ভাই পেন্টের বেল্ট লাগাতে লাগাতে আসতেছে। আর মুখে হাসি। বুজলাম বেটা টয়লেট করে এখন শান্তি। আমি হটাৎ পাড়ার উপর দিয়ে মেঘ দেখে উনাকে ডাকলাম। উনি প্যান্ট হাফ খোলা অবস্থায় মেঘ দেখতে লাগলো। তখন সবে সকালের আলো ফুটতেছিল।
ছবি:- মেঘ ভোর বেলায়।
নাস্তা সেরেই হাটা ধরলাম আমরা। আজ বান্দরবান থেকে বিদায় নেব।
ছবি :-টলটল পানির টোআইন খাল।
ছবি:- শেষ বারের মত দেখে নেওয়া প্রকৃতি। অতপর শহরে যাত্রা।
ট্রিপ শেষের মজাও কম ছিলনা। মোটর সাইকেল রাইডটা দারুন ছিল। ওই পাহাড়ি পথেও স্পিড তুলছিল মাঝে মাঝে ৮০+ KMPH প্রায়। আর চাদের গাড়ির ছাদে চড়ে শহরে ফেরত আসার কথা নাই বললাম। সেরম ছিলি সেরম।

ছবি:- বাইক রাইড।
ছবি:- চান্দের গাড়ির ছাদে।

আমার এ ট্রিপের ফেসবুক ছবি এলবাম দেখতে এখানে Click করুন।

[ নোট :- আমরা পুরা ট্রিপে প্লাস্টিক বা পচনশীল কিছু ফেলে আসিনি। হয় পাড়ার চুলার আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি , নয় সাথে করে শহরে নিয়ে এসেছি। বাসায় এসে দেখি ব্যাগে একগাদা প্লাস্টিক , বিস্কুটের প্যাকেট। আশা করি আপনারাও পাহাড়ে বা নেচারে গেলে একি কাজ করবেন। পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়ত্ব। ]








     

৯টি মন্তব্য:

  1. পুররাই মিল আপনার সাথে। গত বছর এই পাড়াতেই ছিলাম। তারপর পথ হারিয়ে এই জুম ঘরেই রাত যাপন ( আবার যাইতে চাই এই জুম ঘরে)।
    এবং পায়ে ব্যাথা পেয়ে ফেরত আসা

    উত্তরমুছুন
  2. টোট্টেং হলো তক্ষক! প্রহরে প্রহরে ডেকে উঠে!

    উত্তরমুছুন
  3. দারুন সব জায়গা ! ছবিগুলো আরেকটু বড় করে দেয়া যায় না ? আর একটা ব্যাপার, লেখার পর একবার যদি 'প্রুফ-রিড' করতেন তাহলে মনে হয় ভালই হত, যদিও জানি এটা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত লেখালেখির জায়গা, তবুও বললাম। কয়েকটা উদাহরণ দেই,
    "...এই চুড়াই (চূড়ায়) আমরা অনেক্ষন (অনেকক্ষণ) বসে ছিলাম। হাফিজ ভাই জোকের প্রথম কামড় খেল পাছাই (পাছায়)। আর যখন ট্রিপে একজনকে ঝোকে (জোকে) ধরে তখন অটোমেটিকলি সবাইর চুলকানি শুরু হয়ে যায়। সবাই খালি তখন পেন্টের ভেতরে হাত ডুকাই (ঢুকায়) ঝোক খুজে..."

    লেখা পড়তে খুবই ভালো লেগেছে।

    উত্তরমুছুন
  4. আর কোনদিন দুই মাস আগে থেকে প্ল্যান করব না। যাওয়ার আগের মুহূর্তে ঠিক করব যাব কি যাব না :P

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. আপনিতো যাওয়ার আগ মুহুত্বেই কেনসেল করেন। এরপর থেকে টাকা টুকা আমাদের কাছে জমা দিয়ে যাবেন। শর্ত অফেরত যোগ্য ... :পি

      মুছুন